দোন্দুরমা থেকে কুলফি: বিশ্বের সেরা স্বাদের ৫ আইসক্রিম

ছবি: সংগৃহীত

গ্রীষ্ম পেরিয়ে গিয়ে এবেলা বর্ষার কদমও ঝরে পড়ছে। তবু গরমে নাকাল হওয়া থেকে আমাদের রেহাই নেই। এমন অবস্থায় যতই অস্বাস্থ্যকর হোক বা চিনির ডেলায় ঠাসা হোক, ঘামঝরা দুপুরে একখানা আইসক্রিম হাতে পেলে মনটাও আইসক্রিমের মতোই যেন গলে যায়।

রন্ধনশিল্পের ইতিহাস থেকে জানা যায়, আইসক্রিমের জন্ম হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় অব্দের আশেপাশে, আর এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিশ্ববিখ্যাত বীর আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেটের নামও। তার খুব প্রিয় একটি খাবার ছিল মধু বা ফুলের রসের নির্যাস মেশানো বরফ। এমনকি রোমের সম্রাট নিরোও বিভিন্ন ফল ও শরবতের সাথে বরফকুচি পছন্দ করতেন। এসবেরও সহস্র বছর পর পর্যটক মার্কো পোলো সুদূর ইতালি থেকে প্রাচ্যে বয়ে নিয়ে এলেন এক রেসিপি, যা সময়ের বিবর্তনে রূপ নিয়েছে ছেলেবুড়ো সকলেরই প্রিয় নাম–আইসক্রিমে।

আইসক্রিমের ভ্যানে থাকা ছিমছাম কুলফি হোক বা স্টেশনারি শপ থেকে কেনা একখানা চকবার, আইসক্রিমের নাকি অত জাতপাত হয় না। আসলেই কি হয় না? নয়তো বিশ্বের সেরা আইসক্রিমের তকমা জোটা আইসক্রিমদের নিয়ে আলাদা কথা বলার কথা তো আসত না।

চলুন জেনে নেওয়া যাক, কোন কোন আইসক্রিমের ভাগ্যে জুটল বরফহিম সেই রাজমুকুট?

 

 

দোন্দুরমা (তুরস্ক)

এমন কোনো আইসক্রিম আছে, যা গলে না? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে তৈরি বসে আছে তুরস্কের দোন্দুরমা। আমাদের দেশে আইসক্রিমের ভ্যানে হাতে তৈরি যেসব 'কোন'পাওয়া যায়, তার সঙ্গে মিল আছে এ আইসক্রিমের। দোন্দুরমা তৈরি করা হয় ছাগলের দুধ, চিনি ও সালাপ দিয়ে। সালাপ হচ্ছে বেগুনি অর্কিডের 'পাল্প'। এতে পাইনের নির্যাসে তৈরি বিশেষ ধরনের কিশমিশও ব্যবহৃত হয়।

শুধু তৈরিতে নয়, পরিবেশনেও বিশেষ তুরস্কের এই আকর্ষণটি। দোন্দুরমা বিক্রেতারা ঐতিহ্যবাহী তুর্কি পোশাক ও সুলতানি টুপি পরে থাকেন এবং বিভিন্ন ধরনের কারসাজি করে ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে ক্রেতার কাছে অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর তুলে দেন কোনে সাজানো একেকটি দোন্দুরমা। সম্প্রতি বাংলাদেশের টার্কিশ আইসক্রিমের কার্টগুলোতেও এমন পরিবেশন বেশ জনপ্রিয় হয়েছে।

কাকিগরি (জাপান)

মোড়ানো বরফে বিভিন্ন সিরাপ যোগ করে তৈরি হয় এই কাকিগরি। জনপ্রিয় ফ্লেভারগুলোর মাঝে আছে স্ট্রবেরি, গ্রিন টি, তরমুজ, কমলালেবু, আম ও ব্লু হাওয়াই। তৈরির পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরনের কাকিগরি রয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটো হলো শিরোকুমা ও উজি কিন্টোকি। শিরোকুমায় থাকে কনডেন্সড মিল্ক, ফলমূল, মচি ও আঙ্কো নামে ২টি জাপানি খাবার।

স্বাদবৃদ্ধির জন্য কখনো কখনো এতে কিশমিশও যোগ করা হয়। উজি কিন্টোকিও প্রায় একই, তবে এতে দুধের জায়গায় দিতে হয় গ্রিন টি সিরাপ ও গ্রিন টি আইসক্রিম। কিন্টোকি মূলত গ্রিন টি-প্রেমীদের জন্য পছন্দের আইসক্রিম।

জাপানে এই আইসক্রিম এতটাই বিখ্যাত যে 'কাকিগরিস্ট' নামে একটি সংগঠনও রয়েছে। তাই কখনো জাপানে ঘুরতে গেলে, বিশেষত গ্রীষ্মকালে গেলে তো অবশ্যই– কাকিগরি চেখে দেখতে ভুলবেন না, আর নিজে একজন 'কাকিগরিস্ট' কি না, তাও নাহয় যাচাই করে নিলেন!

রাসপাডো (মেক্সিকো)

আমেরিকান স্নো কোনের মেক্সিকান সংস্করণই রাসপাডো। তবে স্নো কোনের সঙ্গে এর ফারাকটা হচ্ছে, কৃত্রিম সিরাপের জায়গায় এতে ব্যবহার করা হয় তাজা ফল বা ফলের শরবরত। রাসপাডোর অরেঞ্জ ইয়োগার্ট ফ্লেভার অন্যতম জনপ্রিয়। এই আইসক্রিম বানানোটাকে এ অঞ্চলের অনেকেই মোটামুটি শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। গ্রীষ্মকালে সতেজ অনুভূতি এনে দিতে এই সতেজ খাবারটির তুলনা হয় না। আর এটি কোনো ধরনের কোনে নয়, আরাম করে খাবার জন্য কাপে করে পরিবেশন করা হয়। এটিই রাসপাডো, তথা মেক্সিকোর সংস্কৃতি।

জেলাটো (ইতালি)

`মাম্মা মিয়া' বলে খাবারের রাজ্যে শুধু পাস্তা বা পিজ্জা নয়, আইসক্রিমের জন্যও বিখ্যাত ইতালি। জেলাটো অন্তত সে প্রমাণই দেয়।

জেলাটো তৈরির মূল উপাদানের মধ্যে রয়েছে দুধ, ডিম, চিনি। এ ছাড়াও এতে যোগ করা হয় চকলেট, হ্যাজেলনাট, পিস্টাশিও, ভ্যানিলার মতো বাড়তি কিছু স্বাদ। সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্লেভার হচ্ছে চকলেট, পিস্টাশিও এবং স্ট্র্যাক্কিয়াটেলা বা ভ্যানিলা আইসক্রিম। এটি কেন ইতালিরই বিশেষত্ব, তার জবাবও মিলবে এসব উপাদানের মাঝেই।

ইতালিয়ান জেলাটোতে যে দুধ ব্যবহার করা হয়, তাতে স্বাভাবিকতই চর্বির পরিমাণ থাকে কম। যা অন্য অঞ্চলে কম পাওয়া যাওয়ায় এটি তৈরি করা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় আইসক্রিমের জন্য যে 'স্কুপ' দেখে আমরা অভ্যস্ত, জেলাটো সেভাবে পরিবেশন করা হয় না। জেলাটোর জন্য চাই স্প্যাচুলা, যা দিয়ে এই সুস্বাদু আইসক্রিমটি কোন বা কাপে চেপে চেপে পরিবেশন করা হয়।

কুলফি (ভারত)

বিশ্ব মানচিত্র ঘুরে এবারে অনেকটা ক্লান্ত হয়ে ঘেমে-নেয়ে এক পশলা স্বস্তি দেয় যে ডাক– 'কুলফিইইই, মালাই কুলফি!', ফিরে আসা হলো সেই ভারতবর্ষেই। বিশ্বের সেরা আইসক্রিমের তালিকা হবে আর কুলফি থাকবে না, এ বড় অন্যায় হয়। মোঘলরা বিশ্বের, বিশেষত ভারতীয় উপমহাদেশের খাদ্যসংস্কৃতিকে যে বিশাল ভাণ্ডার উপহার দিয়েছে, তার মাঝে আছে কুলফিও। ষোড়শ শতাব্দীতে দিল্লিতে এটির প্রচলন হয়।

ছবি: সংগৃহীত

সাধারণ আইসক্রিমের মতো 'হুইপ' করে বানানো হয় না, বরং উপাদানগুলো জমিয়ে তৈরি করা হয় কুলফি। তাই সাধারণ আইসক্রিমের চেয়ে আস্তে আস্তে গলে এটি, যা কি না এ অঞ্চলের গরমকালের সঙ্গে অত্যন্ত মানানসই।

কুলফিতে থাকে ঘন দুধ, চিনি এবং জাফরান, এলাচ, গোলাপজল, বিভিন্ন ধরনের বাদাম। ক্ষেত্র কিংবা মৌসুম বিশেষে এতে যোগ করা হয় আমের সুস্বাদও। ভারি নৈশভোজের শেষে কিংবা স্কুলের টিফিন ব্রেকে– বন্ধুদের আড্ডায় হোক বা একা একা মন খারাপের বিরতিতে, কুলফি মানিয়ে যায় সবখানেই, সব মুডেই।

তথ্যসূত্র:

https://edition.cnn.com/travel/article/ice-cream-world/index.html

https://borderlore.org/sweet-sour-spice-ice/

 

Comments

The Daily Star  | English

July frontliners dominate the Ducsu race

So far, nine panels have been announced for the 28 Ducsu posts.

11h ago