পুতিনের শত্রুদের রহস্যময় পরিণতি

গত জুনের কথা। ২৩-২৪ তারিখে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন ভাড়াটে সেনার দল ভাগনার প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিন। এতে শঙ্কা দেখা দেয় গৃহযুদ্ধের। তবে পরে বিদ্রোহী অবস্থান থেকে সরে আসেন প্রিগোশিন। কিন্তু এরপর দীর্ঘ সময় তার আর কোনো সন্ধান মিলছিলো না। তাকে বহন করা একটি প্রাইভেট জেট বিমান মস্কোর উত্তরে ভূপাতিত হয়েছে। যাত্রীদের কেউই বেঁচে নেই। প্রিগোশিনের মৃত্যু হয়েছে বলেই দাবি করছে রুশ কর্তৃপক্ষ।

প্রিগোশিনের পাশাপাশি পুতিনের 'ব্যাড বুক' এ পড়ে যাওয়া অনেকেরই হয়েছে এমন পরিণতি। ধোঁয়াশায় ঘেরা মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হয়েছে তাদের। কেউ কেউ মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে এসেছেন। 

চলুন, তেমন কয়েকজনের কথা জেনে আসি।

এলেক্সেই নাভালনি, ছবি: রয়টার্স

অ্যালেক্সেই নাভালনি

রাশিয়ার প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা নাভালনি ২০২০ এর আগস্টে সাইবেরিয়ায় বিষপ্রয়োগের শিকার হন। এরপর চিকিৎসার জন্য জার্মানি যান তিনি। নাভালনিকে প্রাণঘাতী বিষ নভিচক প্রয়োগের অভিযোগ ওঠে মস্কোর বিরুদ্ধে। তবে রাশিয়া এই অভিযোগ অস্বীকার করে।

নাভালনি ২০২১ সালে স্বেচ্ছায় রাশিয়ায় ফেরেন। এর পরপরই তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। বর্তমানে সাড়ে ১১ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে জেলখানায় কাটছে তার দিন। সম্প্রতি এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নানান অভিযোগে আরো ১৯ বছরের কারাদণ্ড।

সের্গেই স্ক্রিপাল ছবি: সংগৃহীত
সের্গেই স্ক্রিপাল ছবি: সংগৃহীত

সের্গেই স্ক্রিপাল

রাশিয়ার সাবেক 'ডবল এজেন্ট' স্ক্রিপাল তথ্য পাচার করতেন ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের কাছে। ২০১৮ সালের মার্চে তিনি ও তার কন্যা ইউলিয়াকে সলসবেরির একটি শপিং সেন্টারের বাইরে সৈকতে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। গুরুতর অবস্থায় তাদের হাসপাতালে নেয়া হয়। বিষ হিসেবে সোভিয়েত সেনাদের তৈরি করা নার্ভ এজেন্ট 'নভিচক' প্রয়োগের অভিযোগ আনেন ব্রিটিশ কর্মকর্তারা।

২ জনই শেষপর্যন্ত বেঁচে যান। রাশিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে৷ ব্রিটেনের বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ তোলে।

ভ্লাদিমির কারা-মুর‍যা, ছবি: সংগৃহীত৷
ভ্লাদিমির কারা-মুর‍যা, ছবি: সংগৃহীত৷

ভ্লাদিমির কারা-মুর‍যা

রাশিয়ার বিরোধীপক্ষের কর্মী ভ্লাদিমির কারা-মুর‍যা জানান, ২০১৫ ও ২০১৭ সালে তাকে বিষপ্রয়োগ করার চেষ্টা করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে জার্মান এক গবেষণাগারে করা পরীক্ষায় তার দেহে মাত্রাতিরিক্ত পারদ, তামা, ম্যাঙ্গানিজ ও দস্তা পাওয়া যায়। মস্কো এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে।

লিটভিনেনকো, ছবি: সংগৃহীত
লিটভিনেনকো, ছবি: সংগৃহীত

আলেকজান্ডার লিটভিনেনকো

কেজিবির সাবেক এজেন্ট লিটভিনেনকো ছিলেন পুতিনের কড়া সমালোচক। ২০০৬ সালে লন্ডনের মিলেনিয়াম হোটেলে গ্রিন টি পান করে মারা যান ৪৩ বছর বয়সী আলেকজান্ডার। তার গ্রিন টিতে পলোনিয়াম-২১০ পাওয়া যায়। এটি একটি দুর্লভ, তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ।

২০১৬ সালে করা ব্রিটিশ তদন্তে হত্যাকাণ্ডে পুতিনের 'সম্মতি থাকতে পারে' বলে জানানো হয়। ক্রেমলিন তা অস্বীকার করে।

ব্রিটেনের একজন জ্যেষ্ঠ বিচারকের তদন্তে দেখা যায়, কেজিবিতে দেহরক্ষী হিসেবে থাকা আন্দ্রেই লুগোভয় ও আরেক রুশ দিমিত্রি কভতুন এফএসবির (ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস) পরিকল্পনা অনুযায়ী এই হত্যাকাণ্ড ঘটান।

মৃত্যুর আগে ৬ বছর ব্রিটেনে স্বেচ্ছা নির্বাসনে ছিলেন লিটভিনেনকো।

পেরেপিলিকনি, ছবি: সংগৃহীত
পেরেপিলিকনি, ছবি: সংগৃহীত

আলেক্সান্ডার পেরেপিলিকনি

২০১২ এর নভেম্বর। ৪৪ বছর বয়সী পেরেপিলিকনিকে তার লন্ডনের বিলাসবহুল বাড়ির কাছে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তিনি জগিং করার জন্য বেরিয়েছিলেন।

২০০৯ সালে রুশ অর্থপাচার বিষয়ক এক অপরাধের তদন্তে সুইজারল্যান্ডকে সহায়তা করেন তিনি। এরপর এমন আকস্মিক মৃত্যুকে অনেকেই সন্দেহ করেন হত্যাকাণ্ড হিসেবে।

পেরেপিলিকনিকে দুর্লভ কোনো বিষ প্রয়োগে হত্যার অভিযোগ ছিলো৷ তা সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যের পুলিশ এ বিষয়টি নিয়ে তেমন জোরালো তদন্ত করেনি বলে অভিযোগ আছে।

গেলসেমিয়াম উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত দুর্লভ এক বিষ পাওয়া যায় তার পাকস্থলিতে৷

তিনি 'সোরেল' (রাশিয়ার জনপ্রিয় খাবার) সহযোগে সুপ খেয়েছিলেন৷ সেখান থেকেই তিনি বিষে আক্রান্ত হন।

ভিক্টর ইউশচেনকো, ছবি: সংগৃহীত
ভিক্টর ইউশচেনকো, ছবি: সংগৃহীত

ভিক্টর ইউশচেনকো

২০০৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় বিষপ্রয়োগের শিকার হন ইউক্রেনের তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ভিক্টর ইউশচেনকো। সে সময় ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ও রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ এর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ইউশচেনকো।

কিয়েভে ইউক্রেনের নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাতের খাবার খাওয়ার সময় বিষপ্রয়োগের শিকার হন বলে জানান তিনি। তার শরীরে স্বাভাবিকের তুলনায় ১ হাজার গুণ বেশি ডায়োক্সিন পাওয়া যায়। তার মুখে ও শরীরে বিকৃতি দেখা দেয়। এরপর অনেকগুলো অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তাকে।

পরবর্তীতে অবশ্য সেখানে সংঘটিত 'কমলা বিপ্লব' নামের বিক্ষোভের ফলে ভোট পুনর্গণনা হয় এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ইউশচেনকো।

আনা পোলিতকোভস্কায়া, ছবি: সংগৃহীত
আনা পোলিতকোভস্কায়া, ছবি: সংগৃহীত

আনা পোলিতকোভস্কায়া

২০০৬ সালের ৭ অক্টোবর মস্কোয় নিজ ফ্লাটের বাইরে গুলি করে হত্যা করা হয় সাংবাদিক আনা পোলিতকোভস্কায়াকে। তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে ছিলেন সোচ্চার। স্থানীয় সুপারমার্কেট থেকে বাড়ি ফেরার পথে গুলিতে নিহত হন ৪৮ বছর বয়সী আনা। যার ফলে বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। প্রশ্নবিদ্ধ হয় রাশিয়ায় সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার বিষয়টি।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স

গ্রন্থনা: মাহমুদ নেওয়াজ জয়

 

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

6h ago