রপ্তানি হচ্ছে দেশে তৈরি যানবাহনের ফিল্টার

মোটরসাইকেল, যানবাহন, ফিল্টার, বগুড়া মোটরস প্রাইভেট লিমিটেড, বিসিক, বগুড়া,
বগুড়া মোটরস প্রাইভেট লিমিটেডের তৈরি ফিল্টার। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

মোটরসাইকেল থেকে শুরু করে প্রায় ৩৫০ রকমের গাড়ির ফিল্টার তৈরি করে বগুড়া মোটরস প্রাইভেট লিমিটেড। তাদের এই ফিল্টার শুধু দেশে নয়, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

বগুড়া মোটরস প্রাইভেট লিমিটেড কর্তৃপক্ষ বলছেন, পৃথিবীর যেকোনো ধরণের যানবাহনের ফিল্টার তারা তৈরি করতে পারে। তাদের ফিল্টারের গুণগত মান ভালো, তাই চাহিদাও বাড়ছে। তারা বছরে ২০ কোটি টাকার ফিল্টার তৈরি করছে।

প্রতিষ্ঠানটি মূলত বাস, ট্রাক, কার-মাইক্রো, মোটরসাইকেলসহ ছোট-বড় সব ধরনের যানবাহনের ইঞ্জিন সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ অয়েল, ফুয়েল ও হাউড্রোলিক ফিল্টার তৈরি করছে। প্রতি মাসে ২০০ থেকে ২৫০ জন দক্ষ জনশক্তি ৭০ থেকে ৮০ হাজার ফিল্টার তৈরি করেন। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা।

প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক মো. নুরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠান তাদের এই ফিল্টার ব্যবহার করছে। এর মধ্যে আছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, র‌্যাব, প্রাণ-আর এফএলের মতো কোম্পানির যানবাহন।

নুরুল ইসলাম জানান, তাদের প্রতিষ্ঠান গত বছর যুক্তরাজ্যে ৩ হাজার ইউনিট ফিল্টার রপ্তানি করেছে, যার মূল্য ১১ হাজার ২৫০ ডলার। এর আগে, ২০০৮ সালে কানাডায় ১ হাজার ১৮০ ইউনিট ফিল্টার রপ্তানি করেছিল, যার মূল্য ছিল ১২ হাজার ১৯৬ ডলার।

জানা গেছে, ফিল্টার তৈরিতে যত প্রকার যন্ত্রাংশের প্রয়োজন হয়, তার প্রায় সবই তৈরি হয় এই কারখানায়। শুধু কাঁচামাল হিসেবে আমদানি করতে হয় ফিল্টার পেপার, অ্যাডহেসিভ ও বিশেষ এক ধরনের আঠা। ফিল্টারের কাগজ আসে মূলত চীন, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে। পরে বিভিন্ন মেশিনে প্লেটিং করার পর প্রস্তুত করা হয় ফিল্টার।

১৯৭৭ সালে বগুড়া বিসিক এলাকায় মাত্র ২ বিঘা জমির ওপরে ২টি ওয়ার্কশপ তৈরি করেন দুই বন্ধু আমিনুল ইসলাম ও আহমেদ রেজাউর রহমান। তখন সেখানের একটি ইউনিটে পুরোনো গাড়ি মেরামত করা হতো এবং আরেকটি ইউনিটে গাড়িতে রং করা হতো। এর পরে ১৯৮৯ সালে শুরু হয় ফিল্টার তৈরির কাজ। ২০০৪ সালে আইএসও সনদ পায় ফিল্টার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বগুড়া মোটরস।

মোটরসাইকেল, যানবাহন, ফিল্টার, বগুড়া মোটরস প্রাইভেট লিমিটেড, বিসিক, বগুড়া,
মোটরসাইকেল থেকে শুরু করে প্রায় ৩৫০ রকমের গাড়ির ফিল্টার তৈরি করে বগুড়া মোটরস। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

'পাওয়ার' নামের ব্র্যান্ডিং করছে কোম্পানিটি। প্রতিটি ফিল্টারে মেড ইন বাংলাদেশ লেখা থাকে, যা অন্য কোনো ফিল্টারে থাকে না। শুধু এই কোম্পানিই দেশে থেকে বিদেশে ফিল্টার রপ্তানির রেকর্ড করেছে বলে জানিয়েছে বগুড়া বিসিকের কর্মকর্তা।

তবে, কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে রপ্তানি চাহিদার মোট ফিল্টার তৈরি করতে পারছে না কোম্পানিটি। এর মধ্যে বিসিকে জায়গার অভাব মূল কারণ বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

বগুড়া মোটরস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত বছর কোম্পানিটি ৩ কোটি টাকা ভ্যাট ও ৪৩ লাখ টাকা আয়কর দিয়েছে।

রপ্তানি কেন চালু রাখা যাচ্ছে না জানতে চাইলে নুরুল ইসলাম বলেন, 'রপ্তানির জন্য যে ফিল্টার তৈরি করতে হয়, তার জন্য আলাদা প্রোডাকশন ইউনিট দরকার। কিন্তু, সেই জায়গা এখানে নেই। ফলে, আমরা চাইলেও রপ্তানি চালিয়ে যেতে পারছি না। কারণ যারা আমাদের ফিল্টার কিনবেন তারা উৎপাদন ব্যবস্থার ওপর অবশ্যই নজরদারি রাখবেন।'

তিনি আরও বলেন, 'এছাড়া, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, চাইনিজ ফিল্টার ও লোডশেডিংয়ের কারণে আমাদের উৎপাদন খরচ বেশি পড়ছে। যা উৎপাদন খরচ ও রপ্তানির ক্ষেত্রে এক ধরণের বাধা সৃষ্টি করছে।'

বগুড়া মোটরসের ৪ জন মালিকের একজন হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সহকারী ডাক্তার তাহমিদুল ইসলাম (চন্দন)।

ডা. তাহমিদুল ইসলাম (চন্দন) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গাড়ি শিল্পে ইতোমধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। সারা বিশ্বে এখন ইলেকট্রনিক গাড়ি, হাইব্রিড গাড়ি তৈরি শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে অয়েল ফিল্টার ব্যবহার কমে আসবে। তাই বিশ্ব বাজারে টিকে থাকতে আমাদেরও ভিন্ন চিন্তা করতে হচ্ছে।'

'শিগগির আমার বিসিক শিল্প এলাকার বাইরে আরেকটি ইউনিট নির্মাণ করব। যেখানে যানবাহনের ফিল্টারসহ বিদ্যুৎকেন্দ্রে যে ফিল্টার ব্যবহার করা হয় সেই ফিল্টার তৈরি হবে। বর্তমানে এই ফিল্টার বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। দেশে এই ফিল্টার উৎপাদন করতে পারলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে,' যোগ করেন তিনি।

বগুড়া বিসিক কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক একেএম মাহফুজুর রহমান বলেন, 'বগুড়া মোটরস ৩৫০ ধরণের যানবাহনের ফিল্টার তৈরি করে। তাদের আইএসও সনদ আছে। তাদের প্রোডাক্টের কোয়ালিটি এতো ভালো যে, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত ফিল্টারের চাহিদা আছে।'

তিনি আরও বলেন, 'এটি খুবই সম্ভাবনাময় একটি শিল্প কারখানা। যা বাংলাদেশ থেকে ইতোমধ্যে কানাডা ও যুক্তরাজ্যে ফিল্টার রপ্তানি করেছে ও ভবিষ্যতে আরও করবে। প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণে ভ্যাট-ট্যাক্স তারা সরকারকে দিচ্ছে। একইসঙ্গে এক্সপোর্ট কোয়ালিটির ফিল্টার তৈরি করে তারা বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় করছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Depositors leave troubled banks for stronger rivals

Depositors, in times of financial uncertainty, usually move their money away from troubled banks to institutions with stronger balance sheets. That is exactly what unfolded in 2024, when 11 banks collectively lost Tk 23,700 crore in deposits.

9h ago