সামুদ্রিক মাছ কেন খাবেন

ছবি: সংগৃহীত

আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি। মাছের মধ্যে সামুদ্রিক মাছের জনপ্রিয়তা রয়েছে। উপকূল অঞ্চলের মানুষের পাশাপাশি সারাদেশের মানুষই সামুদ্রিক মাছ খেতে পছন্দ করে। সামুদ্রিক মাছ খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি এর অনেক পুষ্টিগুণ।

ইলিশ, রূপচাঁদা, ছুরি, লইট্টা, খল্লা, কোরাল, চেলা, টুনা, বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি, স্যামন ইত্যাদি বাংলাদেশের  উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয় সামুদ্রিক মাছ।

সামুদ্রিক মাছের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমাদেরকে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সাইন্স কলেজের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. শামিমুল হক

সামুদ্রিক মাছের পুষ্টি

  • শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের খুব ভালো উৎস সামুদ্রিক মাছ। সামুদ্রিক মাছে ২ ধরনের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। ইপিএ ও ডিএইচএ। এই ২ প্রকার ফ্যাটি অ্যাসিডের কোনোটাই আমাদের শরীর উৎপাদন করতে পারে না। কাজেই খাদ্যের মাধ্যমে এই ২ ধরনের ফ্যাটি এসিড গ্রহণ করতে হবে।
  • ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি ও প্রচুর পরিমাণে মিনারেল পাওয়া যায়।
  • এটি খুবই কম ক্যালরিযুক্ত খাবার।
  • ১০০ গ্রাম সামুদ্রিক মাছ থেকে ৪২ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।
  • আয়োডিন, সেলেনিয়াম, জিংক ও পটাশিয়ামসহ অনেক অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান থাকে।

সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার উপকারিতা

  • সামুদ্রিক মাছে উপস্থিত ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হার্টের জন্য উপকারী। এটি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।
  • উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা কমায়। রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে। স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
  • শিশু-কিশোরদের মানসিক ও শরীরিক গঠনে ভূমিকা পালন করে সামুদ্রিক মাছ। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কিছু অংশের ক্ষমতা বাড়ায়, যেটি স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। ডিমনেশিয়া বা অ্যালজাইমারের মত রোগ প্রতিরোধ করে।
  • সামুদ্রিক মাছে উপস্থিত ভিটামিন এ ও ভিটামিন ডি কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে। এ কারণে হার্টের রোগী ও ডায়াবেটিসের রোগীদের খাদ্যতালিকায় সামুদ্রিক মাছ রাখতে বলা হয়।

     

  • সামুদ্রিক মাছে থাকা জিংক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এ ছাড়া আয়োডিন থাইরয়েড গ্লান্ডের জন্য অত্যাবশ্যকীয় উপাদন। এটি গলগণ্ড রোগ প্রতিরোধ কর। ক্লান্তি ও পেশির কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার মত রোগ প্রতিরোধ করে। এ ছাড়াও নার্ভের রোগের ঝুঁকি কমায়।
  • ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড চোখের রেটিনার কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • সামুদ্রিক মাছ আমিষের ভালো উৎস। এটি খেলে এটি দ্রুত পরিপাক হয় এবং ক্যালরি খুব কম হওয়ায় ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • সামুদ্রিক মাছে উপস্থিত সেলেনিয়াম এক ধরনের হজম শক্তি তৈরি করে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এ ছাড়াও সেলেনিয়াম অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।

কাদের জন্য সামুদ্রিক মাছ ক্ষতিকর হতে পারে

সামুদ্রিক মাছ শরীরের জন্য অনেক উপকারী হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর ফলাফল ক্ষতিকর হতে পারে-

  • কাঁচা বা অর্ধসিদ্ধ সামুদ্রিক মাছ খাওয়া সবার জন্যই  ঝুঁকিপূর্ণ
  • উচ্চরক্তচাপ ও হৃদরোগের রোগীরা অনেক বেশি সামুদ্রিক মাছ খেতে পারবেন না। অল্প পরিমাণে খেতে হবে।

     

  • গর্ভাবস্থায় সামুদ্রিক মাছ খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ এতে উচ্চমাত্রায় মার্কারি থাকে, যা মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
  • কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের জন্য এটি ক্ষতিকর। কারণ এ খাবারে অধিক পরিমাণে প্রোটিন ও মিনারেল আছে।
  • কাঁকড়া, চিংড়ি ইত্যাদি খেলে অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে।
  • বাতের রোগে আক্রান্তরা সামুদ্রিক মাছ এড়িয়ে চলবেন।

     

Comments

The Daily Star  | English

US-China tariff war punishes Bangladesh

Bangladesh is one of those nations that face pressure from Washington to decouple their manufacturing industries from Chinese suppliers, according to officials familiar with trade negotiations.

11h ago