ভুলে যাওয়ার রোগ ডিমেনশিয়া: লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

ছবি: সংগৃহীত

আপনার পরিবারের প্রবীণ সদস্যের আচরণে পরিবর্তন এসেছে এবং তিনি দিনের কথা দিনেই ভুলে যাচ্ছে এরকম মনে হচ্ছে কি? এই সমস্যাটির নাম ডিমেনশিয়া।

ডিমেনশিয়া কী, এর লক্ষণ, প্রতিরোধ, চিকিৎসা ও সচেতনতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদের কাছ থেকে

ডিমেনশিয়া কী

ডিমেনশিয়া মস্তিষ্কের একটি ক্ষয়জনিত রোগ। এ রোগে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি, স্মৃতিশক্তি এবং ব্যক্তিত্বের ধরন পরিবর্তন হয়ে যায়। সাধারণত ৬৫ বছর বয়সের পর ডিমেনশিয়া সমস্যাটি শুরু হয় বলে জানান ডা. হেলাল উদ্দিন।

অনেক ধরনের ডিমেনশিয়া রয়েছে, যার মধ্যে আলঝেইমার্স ডিজিজ সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। মস্তিষ্কের যে স্নায়ুকোষগুলো আছে তার মধ্যে এক ধরনের প্রোটিন জমা হয়, এক ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত বস্তু প্লাক বসে। ফলে মানুষের ভেতরে চিন্তার ক্ষমতা, আচরণ, ব্যক্তিত্ব এবং ভুলে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যায়। ৬৫ বছর বয়সের আগের সাধারণত ডিমেনশিয়া হয় না বলে জানান ডা. হেলাল উদ্দিন।

ডিমেনশিয়ার কারণ

ডিমেনশিয়ার সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে যাদের পরিবারে ডিমেনশিয়া আছে তাদের হতে পারে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, ধূমপান করেন, অতিরিক্ত মদ্যপান করেন, এ ছাড়া থাইরয়েডের সমস্যা যদি কারো থাকে তাদের ডিমেনশিয়া হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যক্রম থেকে যারা দূরে আছেন তাদের হতে পারে। তবে এগুলো সরাসরি ডিমেনশিয়ার কারণ না, এগুলোকে ঝুঁকি বলা হয় বলে জানান ডা. হেলাল উদ্দিন।

ডিমেনশিয়ার লক্ষণ

প্রথমত, ভুলে যাওয়ার প্রবণতা হবে, নিকটবর্তী স্মৃতি কমে যাবে। যেমন আজকে সকালে কী খেয়েছেন মনে করতে পারবেন না, গতকাল রাতে কী করেছেন মনে করতে পারবেন না, একই কথা বারবার বলতে থাকবেন, একই কাজ বারবার করতে থাকবেন। কারণ তিনি ভুলে যাচ্ছেন।

দূরবর্তী স্মৃতিশক্তিগুলো, যেগুলো মস্তিষ্কে ইতোমধ্যে সঞ্চিত আছে সেগুলো থাকবে। ১০ বছর আগে কী হয়েছিল, ২০ বছর আগে কী হয়েছিল সেগুলো মনে থাকবে। কিন্তু একদম নিকটবর্তী স্মৃতি ধ্বংস হবে। সাম্প্রতিক কিছু মনে রাখতে পারবেন না।

দ্বিতীয়ত, ডিমেনশিয়ার কারণে বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যক্রম, চিন্তা করার প্রবণতা, যুক্তি দিয়ে কিছু করার প্রবণতা, সাধারণ যোগ বিয়োগ করার প্রবণতা, কোনো কিছুকে দেখে সেটাকে আবার তৈরি করার প্রবণতা, অন্যকে অনুকরণ করা ইত্যাদির প্রবণতা কমতে থাকবে।

তৃতীয়ত, তার ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন ঘটবে। ডিমেনশিয়া হওয়ার পর আগে যে ব্যক্তিত্ব ছিল সেটির পরিবর্তন ঘটবে, আচরণজনিত সমস্যা হবে।

ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ

ডিমেনশিয়া প্রতিরোধের উপায় হচ্ছে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণে রাখা, বিভিন্নভাবে মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখা। সক্রিয় মস্তিষ্কের মানুষের ডিমেনশিয়া কম হয় জানান ডা. হেলাল উদ্দিন।

ডিমেনশিয়ার চিকিৎসা

ডিমেনশিয়া হয়ে গেলে সেটাকে ভালো করা যায় না। তবে ডিমেনশিয়ার যে ন্যাচারাল কোর্স, তার দ্রুত গতিটাকে কমিয়ে রাখা যায় বলে জানান ডা. হেলাল উদ্দিন। এর জন্য কিছু ওষুধ রয়েছে, লাইফস্টাইল মোডিফিকেশন আছে, মনস্তাত্ত্বিক থেরাপি আছে। এগুলোর মাধ্যমে ডিমেনশিয়ার গতিটাকে কমানো যায়, কিন্তু রোগটি সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব হয় না।

ডিমেনশিয়া রোগীদের জন্য স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ বা নিউরোলজিস্ট এবং মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ উভয়েরই সম্মিলিত চিকিৎসার প্রয়োজন আছে বলে জানান ডা. হেলাল উদ্দিন।

কারণ স্মৃতিশক্তির কারণে যে সমস্যাগুলো হয় তা নিউরোলজিস্টরা দেখবেন এবং বুদ্ধিবৃত্তিক ও ব্যক্তিত্বের কারণে যে সমস্যা হয় সেটি মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা দেখবেন। অনেক সময় ফিজিওথেরাপিস্ট প্রয়োজন হয়, কেয়ার গিভারদের প্রশিক্ষণ লাগে, পরিবারের সদস্যদেরও প্রশিক্ষণ লাগে। অর্থাৎ ডিমেনশিয়ার চিকিৎসা এককভাবে নয়, বরং একটি টিমের মাধ্যমে সমন্বিতভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়।

ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে সচেতনতা

৬৫ বছরের পর যত বয়স বাড়তে থাকে, তত ডিমেনশিয়া বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, এক্ষেত্রে মানুষের সচেতনতা খুব জরুরি। একটা সাধারণ ধারণা আছে যে বয়স্ক মানুষ ভুলেই যাবে, একটু অন্যরকম আচরণ করবে। এই চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

বয়স্ক মানুষের ভুলে যাওয়া, অস্বাভাবিক আচরণ ডিমেনশিয়ার লক্ষণ। যদি দ্রুত শনাক্ত করে চিকিৎসার আওতায় আনা যায় তাহলে ওই ব্যক্তি প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন।

 

Comments

The Daily Star  | English

Ishraque alleges political obstruction in DSCC mayoral appointment

Announces establishment of 'Mayor's Cell' to monitor service delivery in the city

1h ago