ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩: প্রার্থিতা ফিরে পেলেন ফিরোজুর রহমান
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফিরোজুর রহমান ওলিও তার প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।
আজ বুধবার বিকেলে আপিল শুনানির চতুর্থ দিনে তার প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগে গত ৩ ডিসেম্বর তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহগীর আলম।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
ফিরোজুর রহমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য। তিনি সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদে টানা ২৬ বছর চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৯ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে পদত্যাগ করেন তিনি।
দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছেন ফিরোজুর রহমান। প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই বর্তমান সংসদ সদস্য উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর পক্ষের লোকজন ফিরোজুর রহমানকে বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ৩০ নভেম্বর ফিরোজুর রহমানের সমর্থনকারী এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরের তালিকা মোকতাদির চৌধুরীর এপিএস আবু মূসা আনসারী ছিনিয়ে নেন বলে অভিযোগ ওঠে।
এই ঘটনার ব্যাপারে ফিরোজুর রহমানের পক্ষে তার ছেলে সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ ওমর ফারুক সেদিনই প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলার পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। দুই দিন পর ফিরোজুর রহমান নিজেও অভিযোগ দেন।
এসব বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অভিযোগের জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ফিরোজুর রহমানের পক্ষে তার ছেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে অভিযোগ করেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলমকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন।
ফিরোজুর রহমানের প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে নির্বাচনে নির্বাচনের সমীকরণ পাল্টে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন এলাকাবাসী।
প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার পর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ফিরোজুর রহমান বলেন, 'আপিলে আমার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এভাবে কমিশন কাজ করলে সুষ্ঠু ভোট হবেই। এ আসনের এমপির এপিএস মুসা আনসারি আমার ভোটারদের স্বাক্ষর হাইজ্যাক করেছিল। হাজার হাজার মানুষ আমার জন্য দোয়া করেছে, আমি দেশবাসী ও এলাকাবাসীর কাছে কৃতজ্ঞ।'
তিনি আরও বলেন, 'আমার পরিচয়টা আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন না। বলতে গেলে আমার কলিজা ফেটে যায়...! আমি বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় ছেলে শেখ জামালকে ১৯৭১ সালে বন্দিদশা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে শুক্রাবাদের বাসায় আসি। সেখান থেকেই আমরা হেঁটে মুক্তিযুদ্ধে যাই।'
ফিরোজুর রহমানের সঙ্গে থাকা বাবুল মিয়া নামের একজন ভোটার বলেন, 'তার পক্ষে স্বাক্ষর দেওয়ায় আমার স্ত্রী ও ছেলেকে এমপির লোকেরা অপহরণ করেছে। তাদেরকে এখনো পাইনি। এখন আমার ছেলে বাইজিদ ও স্ত্রীকে ফিরে পেতে চাই।'
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদেকুল ইসলাম বলেন, 'ফিরোজুর রহমানের করা আপিলের রায়ের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে চিঠি পাঠাবে নির্বাচন কমিশন। বৈধ প্রার্থীদের তালিকায় তার নাম যুক্ত হবে। প্রতীক বরাদ্দের দিন তাকেও প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে।'
Comments