পটুয়াখালী-৪

সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর তালুকদারের ১৫ বছরে আয় বেড়েছে ২৯ গুণ, সম্পদ ৭ গুণ

পটুয়াখালী-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার। ছবি: সংগৃহীত

অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থাকায় পটুয়াখালী-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার। এই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তিনি।

নবম ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে মাহবুবুর তালুকদারের দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১৫ বছরের ব্যবধানে তার বার্ষিক আয় বেড়েছে প্রায় ২৯ গুণ। অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে সাত গুণের বেশি। তার স্ত্রীর কোনো বার্ষিক আয় না থাকলেও ১৫ বছরে অস্থাবর সম্পদ ১৮ গুণ এবং স্থাবর সম্পদ চার গুণের বেশি বেড়েছে।

পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী) আসনের আওতাধীন এলাকায় পায়রা সমুদ্র বন্দরসহ অনেকগুলো বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। এখনো কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে এখানে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২০০৯ সালে বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষা এই এলাকাকে ঘিরে বড় বড় প্রকল্প নেয় সরকার। ঠিক তখনই, এই আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য মাহবুবুর তালুকদার নিজের সম্পদ বৃদ্ধিতে নজর দেন। জবরদস্তি করে অন্যের জমি দখলের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগ তদন্তে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও করে সংস্থাটি। এসব কারণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে মাহবুবুর তালুকদারকে আর মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। মনোনয়ন দেওয়া হয় তার ফুফাতো ভাই মহিবুর রহমানকে।

এ বারের নির্বাচনেও কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুবুর তালুকদার এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তিনি।

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মাহবুবুর তালুকদারের বার্ষিক আয় ছিল মাত্র ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা। বর্তমানে তার বার্ষিক আয় ৬০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তার কৃষি জমি, বাড়ি বা দোকান ভাড়া ও অন্য কোন ব্যবসা খাত থেকে আয় না থাকলেও এখন তার কৃষি খাত থেকে বার্ষিক আয় ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা, বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে ২৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে (ব্যবসার ধরন উল্লেখ নেই) ২৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকা, স্থায়ী আমানত থেকে সুদ পান ৩৪ হাজার টাকা ও অন্যান্য খাত থেকে বার্ষিক আয় ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ১৫ বছরে তার বার্ষিক আয় বেড়েছে প্রায় ২৯ গুণ।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী তখন মাহবুবুর রহমান তালুকদারের অস্থাবর সম্পদ বলতে ছিল ব্যাংকে জমা ৮৩ হাজার টাকা, ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের একটি গাড়ি, ২০ তোলা স্বর্ণালংকার এবং ৩ লাখ টাকা ইলেকট্রনিক মালামাল ও আসবাবপত্রসহ তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল মাত্র ৩ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। তার স্ত্রীর ছিল মাত্র ৫ লাখ টাকা।

১৫ বছরের ব্যবধানে মাহবুবুর রহমান তালুকদারের অস্থাবর সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকে জমা আছে ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন ৩৫ লাখ টাকা । এ ছাড়া রয়েছে গাড়ি, স্বর্ণ, ইলেকট্রনিক সামগ্রী এবং আসবাবপত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র। এখন মাহবুবুর তালুকদারের স্ত্রীর ব্যাংকে জমা টাকা, কোম্পানির শেয়ার, স্থায়ী আমানত, গাড়ি, স্বর্ণালঙ্কার ও আসবাবপত্রসহ রয়েছে ৯০ লাখ ৩৩ হাজার টাকার সম্পদ।

বর্তমানে ২৬ দশমিক ১৭ একর কৃষি জমি, অকৃষি জমি ৬ কাঠা, আট তলা ভবন এবং মৎস্য খামারসহ ৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকার স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে মাহবুবুর তালুকদারের। তার স্ত্রীর নামে আছে ৭৮ শতাংশ অকৃষি জমি। সাবেক এই এমপির ব্যাংক ঋণ রয়েছে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা। ১৫ বছর আগে তার স্থাবর সম্পদ বলতে ছিল রাজউক থেকে পাওয়া ৫ কাঠার একটি প্লট ও ৫৫ হাজার টাকার কৃষি জমি। তখন তার ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যাংক ঋণ থাকলেও স্ত্রীর কোনো স্থাবর সম্পদ ছিল না।

নবম ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে জেলা রিটার্নিং অফিসারের নিকট দাখিলকৃত হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মাহবুবুর তালুকদারের ১৫ বছরের ব্যবধানে তার বার্ষিক আয় বেড়েছে প্রায় ২৯ গুণ। অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে সাত গুণেরও বেশি। তার স্ত্রীর কোনো বার্ষিক আয় না থাকলেও ১৫ বছরে অস্থাবর সম্পদ ১৮ গুণ ও স্থাবর সম্পদ বেড়েছে চার গুণেরও বেশি।

Comments

The Daily Star  | English

Scuffles in Los Angeles as soldiers sent by Trump fan out

Unrest broke out for a third day, with protesters angry at action by immigration officials that has resulted in dozens of arrests of what authorities say are illegal migrants and gang members

42m ago