‘আমার লোকজনের ওপর হাত দিলে কেটে ফেলব’ পুলিশকে নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজ

সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর
সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও দ্বাদশ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী পুলিশের হাত কেটে ফেলার হুমকি দিয়েছেন।

এছাড়া, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে হুমকি দেওয়া বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুল হক চৌধুরীর যেন কোনো সমস্যা না হয় পুলিশকে তা খেয়াল রাখার নির্দেশও দেন তিনি।

মোবাইল ফোনে বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদের কথা বলার সময় এ হুমকি দেন সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর। 

ওই কথোপকথনের এক মিনিট ৪০ সেকেন্ডের একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে গেছে। জেলা পুলিশ সুপার ওই অডিও ক্লিপের সত্যতা স্বীকার করলেও, হুমকির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন ওসি।

অডিওর শুরুতে এমপি মোস্তাফিজুরকে বলতে শোনা যায়, 'ছনুয়াতে হাবিব গেছিল? ছনুয়া?' ওসি বলেন, 'না না স্যার। ও তো এখন নেই। সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত থেকে চলে এসেছে স্যার।' এমপি জানতে চান, 'কী জন্য গেছে?' ওসি বলেন, 'নিয়মিত ডিউটি স্যার।'

তখন মোস্তাফিজ বলেন, 'আমার লোকজনের ওপর হাত দিলে আমি হাত কেটে ফেলব বলে দিলাম।'

ওসিকে তখন বলতে শোনা যায়, 'স্যার, দিবে না স্যার। আমি বলে দিচ্ছি স্যার। এখনই বলে দিচ্ছি।'

মোস্তাফিজ তখন বলেন, 'ওখানে আমাদের লোকজন ধরার জন্য হাফিজ না হাবিব গেছে। আমাদের আলমগীর একটা আছে তাকে খুঁজতেছে।'

ওসি তখন বলেন, 'না না স্যার। ওটা তো প্রশ্নই উঠে না। ও চলে আসছে স্যার অনেক আগে।'

এমপি তখন আবার বলেন, 'এমনি ঘুরে ফিরে থাক (পুলিশ) অসুবিধা নাই। কিন্তু আমার কোনো লোকজনের ওপর হাত দিলে বহুত অসুবিধা হবে।'

ওসি তখন বলেন, 'স্যার দিবে না। স্যার আপনি যেভাবে বলেন।'

মোস্তাফিজ তখন বলেন, 'আপনি তো আমার ঘরেও পুলিশ পাঠাইছেন।' 

ওসি তোফায়েল জবাবে বলেন, 'স্যার আমিতো…পুলিশ সেদিন যায় নি। ওদিন আমি আপার সাথে কথা বললাম। এমনিতেই ওরা নিয়মিত যায়। আপার সাথে ডিটেলস কথা বলছি। আপনার সম্মান বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করছি। এমপি স্যারের বাড়িতে তাও সাদা পোশাকে গেছে জানান দেওয়ার জন্য।'

'কী জন্য গেছে,' জানতে চান এমপি মোস্তাফিজ। তখন ওসি বলেন, 'এমনিতে গেছে স্যার। কোনো কারণ নেই, কাউকে ধরার জন্য না।'

মোস্তাফিজ তখন বলেন, 'চাম্বলের মুজিবের ওপর যেন কোনো কিছু না হয়। ওখানে যেন সে কাজ করতে পারে খেয়াল রাখিও।' ওসি বলেন, 'কিছু হবে না স্যার ইনশাল্লাহ।'

টেলিফোনের এ কথোপকথনের বিষয়ে জানতে বাঁশখালীর থানার ওসি তোফায়েলকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

অন্যদিকে এমপি মোস্তাফিজকে ফোন দেওয়ার পর তিনি রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ামাত্র ফোন কেটে দেন।

এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আবু তৈয়ব মো. আরিফকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

জেলা পুলিশের আরেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান রুবেলকে ফোন করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি এখনো বিস্তারিত জানি না। আমাকে ওসি কিছু জানাননি।'

এমপি মোস্তাফিজ ও ওসি তোফায়েলের কথোপকথনের সত্যতার বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গতকাল এমপি মোস্তাফিজ টেলিফোনে ওসিকে ওই কথাগুলো বলেছেন। বিষয়টা আমি শুনেছি। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। উনিও নন। এ বিষয়ে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।'

মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে আবার নির্বাচিত হন তিনি। 

এবারও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন এই সংসদ সদস্য। 

তার বিপরীতে এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীকে নির্বাচন করছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ব্যবসায়ী মুজিবর রহমান।

গত ৩০ নভেম্বর চট্টগ্রামের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের কার্যালয়ে চট্টগ্রাম-১৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান। সেদিন সাংবাদিকদের প্রশ্ন শুনে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির প্রতিবেদক রাকিব উদ্দিনকে মারতে যান তিনি।

এর আগে, ২০১৬ সালের ১ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামকে ডেকে নিয়ে এসে  চড়-থাপ্পড় ও কিল-ঘুষি মেরে আলোচনায় আসেন মোস্তাফিজুর রহমান। 

এরপর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে মোস্তাফিজুর রহমানের কটূক্তি করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে আবার আলোচনায় আসেন তিনি। ২০২০ সালের আগস্টে 'বাঁশখালীতে মুক্তিযুদ্ধ হয়নি' মন্তব্য করেও বিতর্কের সৃষ্টি করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

SWISS Banks: Funds linked to Bangladesh hit 3-year high

Bangladeshi-linked funds parked in Swiss banks surged to 589.5 million Swiss francs, or about Tk 8,800 crore, in 2024, their highest level in three years, according to data released by the Swiss National Bank (SNB) yesterday.

7h ago