নয়নাভিরাম নওগাঁর যত দর্শনীয় স্থান
ইতিহাস-ঐতিহ্যে ভরপুর নওগাঁ। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার, কুসুম্বা মসজিদ, পতিসর রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি, শালবন জাতীয় উদ্যান, আলতাদিঘী, রাস্তার দুধারে সারি সারি তালগাছ ছাড়াও দেখার মতো আরও স্থান রয়েছে এখানে। এই জেলা ঘুরতে তাই বেরিয়ে পড়তে পারেন সময় করে।
নওগাঁর দর্শনীয় স্থান
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার
নওগাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান হলো পাহাড়পুর। এটি মূলত ধ্বংসপ্রাপ্ত বৌদ্ধ মন্দির। একে সোমপুর বিহার বা মহাবিহারও বলা হয়ে থাকে। পাল বংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপাল দেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে এ বিহার নির্মাণ করেছিলেন। এটি ইউনেস্কো স্বীকৃতি একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান।
বৌদ্ধবিহারে রয়েছে একটি কেন্দ্রীয় মন্দির, স্নানাগার, শৌচাগার, সন্ধ্যাবতীর ঘাট, উন্মুক্ত অঙ্গন, সত্যপীরের ভিটা ও গন্ধেশ্বরী মন্দির। এ ছাড়াও পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার খনন করে মূর্তি, রৌপ্য মুদ্রা ও শিলালিপি পাওয়া যায়, যা পাশেই জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।
নওগাঁ সদর থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে বদলগাছী উপজেলায় পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার অবস্থিত। বাসে বা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় সরাসরি পাহাড়পুর যাওয়া যায়। তবে জয়পুরহাট সদর থেকে পাহাড়পুর যাওয়া সহজ। মাত্র ১৩ কিলোমিটার। তাই চাইলে জয়পুরহাট হয়েও যেতে পারেন।
পাহাড়পুর সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সোমবার আধাবেলা ও রোববার পূর্ণদিন বন্ধ থাকে। বিহারে প্রবেশ করতে হলে প্রাপ্তবয়স্কদের ২০ টাকা ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ৫ টাকা প্রবেশমূল্য দিতে হয়। সার্কভুক্ত দেশগুলোর জন্য ১০০ টাকা ও অন্য বিদেশিদের জন্য ২০০ টাকা প্রবেশমূল্য।
পতিসর রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি
নওগাঁ থেকে ৩৬ কিলোমিটার দূরে আত্রাই উপজেলার পতিসর গ্রামে এটি অবস্থিত। এখানেও বাস বা সিনজিচালিত অটোরিকশা চড়ে সরাসরি যাওয়া যায়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার জমিদারি দেখাশোনার জন্য এখানে এসেছিলেন। বাড়িটি প্রায় ১০ একর জায়গা জুড়ে এবং দ্বিতল ভবন বিশিষ্ট। সামনে সিংহ দুয়ার, ভেতরে আঙিনা ও আশপাশে বেশকিছু ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবন রয়েছে। এ ছাড়াও বাড়ির সামনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় একটি ভাস্কর্য রয়েছে। এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যবহৃত জিনিসপত্রও রয়েছে।
কুসুম্বা মসজিদ
নওগাঁ সদর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে এ মসজিদ অবস্থিত। এখানে যেতে হলে নওগাঁ সদর থেকে প্রথমে মান্দা উপজেলায় যেতে হবে। তারপর সেখান থেকে অটোরিকশায় সরাসরি এখানে যাওয়া যাবে।
মসজিদটি প্রায় সাড়ে চারশ বছরের পুরোনো। বাংলাদেশের পাঁচ টাকার নোটে এ মসজিদের ছবি মুদ্রিত রয়েছে। সুলতানি আমলের সাক্ষী হিসেবে এ মসজিদটি এখনও অক্ষত রয়েছে। মসজিদটি মুসলিম স্থাপত্যরীতির এক চমৎকার নিদর্শন। চতুষ্কোণ আকৃতির এ মসজিদটিতে চারটি মিনার রয়েছে। মসজিদে প্রবেশের জন্য তিনটি দরজা রয়েছে।
আলতাদিঘী
নওগাঁর অন্যতম আরেকটি দর্শনীয় স্থান হলো আলতাদিঘী। নওগাঁ সদর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে এটি অবস্থিত। এখানে যেতে হলে প্রথমেই যেতে হবে ধামরাইহাট উপজেলায়। সেখান থেকে অটোরিকশায় যাওয়া যায়।
সুবিশাল এ দীঘিটিতে শীতকালে প্রচুর অতিথি পাখির আগমন ঘটে। তাই এখানে যাওয়ার উপযুক্ত সময় এখনই অর্থাৎ শীতকাল। এর চারপাশ সবুজে ঘেরা। দীঘির উত্তরপাশ ঘেঁষেই রয়েছে ভারত বাংলাদেশের সীমান্ত।
শালবন জাতীয় উদ্যান
আলতাদিঘীর পাশেই শালবন। আলতাদিঘীতে যাওয়ার আগেই সামনে পড়বে এটি। একে আলতাদিঘী শালবনও বলা হয়। সবুজে ঘেরা এ বন একবার দেখলেই মনে হবে আশপাশ ঘুরে দেখি। শালবনকে ২০১২ সালে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। শালবনে যাওয়ার আঁকাবাঁকা লাল মাটির পথ আপনাকে রোমাঞ্চিত করবে। এ বনের আয়তন ২৬৪.১২ হেক্টর।
শালগাছ ছাড়াও এখানে রয়েছে হিংলো লতা, অনন্তমূল ও বনবড়ইসহ নানা লতাগুল্ম আর বনফুল। এ ছাড়া রয়েছে ঔষধী গাছসহ আরও নাম না জানা নানা প্রজাতির গাছ। শালবনে শিয়াল, বেজি, খরগোশ, বনবিড়াল, মেছোবাঘ, হনুমান, বানরসহ নানা প্রজাতির প্রাণী ও পাখিও রয়েছে।
তালগাছের রাস্তা
নওগাঁর নিয়ামপুর উপজেলার হাজিনগর গ্রামের ঘুঘু ডাঙার তালতলীতে এ রাস্তা অবস্থিত। এ রাস্তা ধরে দুধারে সারি সারি তাল গাছ। দেখে মনে হবে যেন তাল গাছের সাম্রাজ্য। এ এক অন্যান্য দর্শনীয় স্থান। তাল গাছের এ সারি আপনাকে মুগ্ধ করবেই। চোখের বিশ্রাম চাইলে আপনাকে এখানে আসতে হবে। ১০০ থেকে ২০০ টাকায় অটোরিকশা ভাড়ায় ঘুরতে পারবেন এর আশপাশ।
ঢাকা থেকে নওগাঁ যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সরাসরি বাস ও ট্রেনে নওগাঁ যাওয়া যায়। বাসে যেতে চাইলে গাবতলী বা মহাখালী থেকে শ্যামলী, হানিফ, এসআর, কেয়া, টিআর এবং মৌ এন্টারপ্রাইজে যেতে পারেন। এসি, নন-এসিভেদে এসব বাসের ভাড়া জনপ্রতি ৪০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা।
আর ট্রেনে যেতে চাইলে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বেশকিছু ট্রেন চলাচল করে। লালমনি এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস, নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনে সান্তাহার যেতে হবে। এসি, নন-এসিভেদে এসব ট্রেনের সিট ভাড়া ৩০০ টাকা থেকে ৭১৫ টাকা। এরপর সান্তাহার স্টেশনে নেমে অটোরিকশা বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা চড়ে নওগাঁ শহরে যেতে হবে।
যেখানে থাকবেন
নওগাঁ জেলায় ভালো মানের হোটেল না থাকলেও বেশকিছু মধ্যম মানের হোটেল রয়েছে। যেগুলোতে ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় রাতযাপন করা যায়।
যা খাবেন
নওগাঁয় খাওয়ার জন্য বেশকিছু ভালো মানের খাবার হোটেল রয়েছে। এ ছাড়াও নওগাঁর বিখ্যাত খাবার প্যারা সন্দেশ, যা শহরের মিষ্টির দোকানেই পাবেন। বিখ্যাত এ সন্দেশ খেতে ভুলবেন না কিন্তু।
Comments