যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান কি সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার দ্বারপ্রান্তে?

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান কি সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার দ্বারপ্রান্তে
প্রতীকী ছবি | রয়টার্স

ইসরায়েল ও হামাসের যুদ্ধ এখন আর কেবল গাজার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এর আঁচ। এতে আঞ্চলিক ও বিশ্ব শক্তিগুলোর মধ্যে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা তীব্র থেকে আরও তীব্রতর হচ্ছে।

সিএনএনের আজ বৃহস্পতিবারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এতকাল ধরে এই অঞ্চলে যে লড়াই চলছিল, এটি একদিকে মূলত ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়া এবং অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্রদের মধ্যেকার টিট-ফর-ট্যাট হামলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হস্তক্ষেপ এই আশঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছে যে, উভয়ের মধ্যে চলমান প্রক্সি লড়াই সরাসরি যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।

এখন পর্যন্ত একে অপরের সম্মুখ লড়াই এড়াতে পেরেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে ইয়েমেন, সিরিয়া ও ইরাকে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর ওপর হামলা করছে। অপরদিকে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করছে। তেহরানও ইরাক, সিরিয়া ও পাকিস্তানে ইরান-বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর ওপর হামলার কথা জানিয়েছে। যদিও ইরানের হামলার পাল্টা জবাব দিয়েছে পাকিস্তান।

গোটা মধ্যপ্রাচ্যকেই ইরান নিজের বাড়ির উঠান বলে মনে করে এবং এ অঞ্চলে মার্কিন বাহিনীর উপস্থিতির ঘোরবিরোধী। সিএনএনের প্রতিবেদনটির ভাষ্য, এই কারণেই গত কয়েক দশক ধরে তারা আঞ্চলিক ইসলামপন্থী, পশ্চিমা ও ইসরায়েল-বিরোধী মিলিশিয়াদের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে অর্থ ব্যয়ের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে। বর্তমানে এর ফল পেতে শুরু করেছে ইরান। দেরিতে হলেও ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে নিজেদের পারঙ্গমতা জানান দিতে সক্ষম হচ্ছে।

বিশেষ করে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা, যারা একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক জলপথ লোহিত সাগরে মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এতে বিশ্ব বাণিজ্য সরবরাহ ব্যবস্থা বেশ বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে। ফলশ্রুতিতে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোকে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করেছে। হুতিরা এখানেই থেমে নেই, হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের পাশাপাশি তাদের অর্থায়নও করছে।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানের অভিজ্ঞতা ততটা সুখকর না হওয়ায়, বছরের পর বছর ধরে এ অঞ্চল থেকে দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করলেও ভাগ্য ফের তাদের মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে ফিরিয়ে এনেছে। যদিও ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর আগ থেকেই ৩০ হাজারের বেশি সেনাসহ এ অঞ্চলে তাদের একটি শক্তিশালী সামরিক অবস্থান ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের সামরিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন করে প্রায় এক হাজার ২০০ সেনার পাশাপাশি নেভি ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপের হাজারো সেনা ও মোটামুটি দুই হাজার জনবল সম্বলিত একটি মেরিন এক্সপিডিশনারি ইউনিট মোতায়েন করেছে।

তাছাড়া, ইরাক ও সিরিয়াসহ কিছু জায়গায় মার্কিন সামরিক উপস্থিতি ইরান ও তার মিত্রদের চেয়েও বেশি।

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পিছিয়ে নেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান। ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক অঞ্চলে নিজেদের বা মিত্রদের অবস্থান লক্ষ্য করে পাল্টাপাল্টি সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছে তারা।

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি উত্তর কোরিয়া ও তাইওয়ানের প্রতি চীনের রক্তচক্ষু তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের বার্তা-বাতাস দিচ্ছে। এই বাতাসে মাতোয়ারা হয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান প্রক্সি প্রক্সি খেলার খোলস ছেড়ে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে কি না, তা সময়ই বলে দেবে।

Comments

The Daily Star  | English
Eid-ul-Azha 2025

Main Eid congregation held at National Eidgah

With due religious solemnity and fervour, the main congregation of Eid-ul-Azha was held at the National Eidgah.

55m ago