শহীদ মিনার নিয়ে অসন্তোষ, ২১ ফেব্রুয়ারি শ্রদ্ধা নিবেদন অস্থায়ী শহীদ মিনারে

চট্টগ্রামে নবনির্মিত শহীদ মিনার। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

চট্টগ্রামে নবনির্মিত শহীদ মিনার রাস্তা থেকে দৃশ্যমান না হওয়ার প্রতিবাদে ২১ ফেব্রুয়ারি অস্থায়ী শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নগরীর সুশীল সমাজ। 

এর আগে, একই দাবিতে ১৬ ডিসেম্বর অস্থায়ী শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন তারা।

২১ ফেব্রুয়ারি নগরীর মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল প্রাঙ্গণে অস্থায়ী শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সোমবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে বন্দরনগরীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মী এবং সুশীল সমাজের সদস্যদের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

এ প্রসঙ্গে একুশে পদক বিজয়ী নাট্যব্যক্তিত্ব আহমেদ ইকবাল হায়দার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শহীদ মিনারের নতুন রূপ চট্টগ্রামবাসীকে হতাশ করেছে। নন্দন কাননের কেসি দে রোডের পাশে একটি পাহাড়ের টিলায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের চারপাশ সবুজ ছিল। কিন্তু নবনির্মিত শহীদ মিনারের চারপাশে কোনো সবুজ নেই। বরং এর চারপাশ কংক্রিটের কাঠামো দিয়ে আচ্ছাদিত করা হয়েছে।' 

নবনির্মিত শহীদ মিনার। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

'এছাড়াও, মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের সঙ্গে শহীদ মিনারের সংযোগের জন্য ২১ ফুট উঁচু একটি ওভারপাস তৈরি করায় রাস্তা থেকে নবনির্মিত শহীদ মিনারটি ঠিকভাবে দেখা যাচ্ছে না,' তিনি বলেন।

তিনি আরও বলেন, 'শহীদ মিনার নিছক একটি স্থাপনা নয়, এটি গণমানুষের আবেগের জায়গা। শহীদ মিনারের চারপাশের কংক্রিটের কাঠামো অপসারণ করা হোক, যেন চারদিক থেকে শহীদ মিনার দৃশ্যমান হয়, সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে কিছু প্রস্তাব পাঠিয়েছি।' 

'আমাদের পক্ষ থেকে একদল স্থপতি সেই প্রস্তাবগুলো পাঠিয়েছেন প্রায় এক মাস আগে,' যোগ করেন তিনি।

আহমেদ ইকবাল হায়দার আরও বলেন, 'কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত না পাওয়ায়, আমরা সোমবার চসিক কার্যালয়ে এক বৈঠকে বসেছিলাম এবং বৈঠকে নবনির্মিত শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা না জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি ও মুসলিম ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম একই এলাকায় অবস্থিত। প্রথমটি রাস্তার একপাশে পাহাড়ের টিলায় এবং অন্য দুটি রাস্তার অপর পাশে একই কমপ্লেক্সে ছিল।  

জনসাধারণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালে এই এলাকায় একটি সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করে।

গণপূর্ত বিভাগ ২৮১ কোটি ৩৯ লাখ টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের আওতায় পুরোনো মুসলিম ইনস্টিটিউট, পাবলিক লাইব্রেরি ও শহীদ মিনার ভেঙে ফেলা হয়। মুসলিম ইনস্টিটিউটের জায়গায় আটতলা ভবন তৈরি করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ জানান, পুরোনো পাবলিক লাইব্রেরির জায়গায় একটি ১৫ তলা ভবন তৈরি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, 'এই প্রকল্পের অধীনে আগের চেহারা অপরিবর্তিত রেখে পুরোনো জায়গায় একটি নতুন শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। 

প্রকল্পের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে এবং জুন মাসের মধ্যে পুরো প্রকল্পটি শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

গত বছরের ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সটি উদ্বোধন করেন।

২০১৮ সালে পুরোনো শহীদ মিনার অপসারণের পর, প্রতি বছর অস্থায়ী শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করে আসছেন। 

মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নবনির্মিত শহীদ মিনারের সামনের ওভারপাসটি ভেঙে দিলে ভালো হবে। মুসলিম ইনস্টিটিউট ও পাবলিক লাইব্রেরি রাস্তার একপাশে আর শহীদ মিনার থাকবে রাস্তার অন্য পাশে। তাহলে আর কেউ আপত্তি করবে না।'

এ বিষয়ে প্রকৌশলী রাহুল গুহ বলেন, 'চসিক মেয়র সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছেন। কমিটিতে স্থপতি এবং প্রকৌশলী রয়েছেন। কমিটি ইতোমধ্যে জায়গাটি পরিদর্শন করেছে এবং আমাদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছে।'

'তারা মেয়রের কাছে সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন জমা দেবেন এবং তারপর মেয়র সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব জমা দেবেন,' বলেন তিনি।

রাহুল গুহ আরও বলেন, 'স্ট্রাকচারাল ডিজাইন সংশোধনের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা পেলে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Police struggle as key top posts lie vacant

Police are grappling with operational challenges as more than 400 key posts have remained vacant over the past 10 months, impairing the force’s ability to combat crime. 

10h ago