ভাঙা হয়েছে জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল, শামীম ওসমানকে দায়ী করল বিএনপি

ম্যুরালসহ চাষাঢ়ায় জিয়া হলের সাম্প্রতিক ছবি (বামে) ও ম্যুরালটি ভেঙে ফেলার পর বুধবারের ছবি (ডানে)। ছবি: স্টার

নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় শহীদ জিয়া হল মিলনায়তনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ম্যুরালটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। 

বুধবার গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা ম্যুরালটি ভেঙেছে বলে জানান মিলনায়তনের তদারকির দায়িত্বে থাকা আরিফুর রহমান।

তবে, ম্যুরাল ভাঙার জন্য নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানকে দুষছেন বিএনপির নেতারা।

ম্যুরাল ভাঙা হয়েছে, এমন খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে যান মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান, সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার প্রধানসহ কয়েকজন নেতা।

সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, 'শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সম্মানে ১৯৮১ সালে এই মিলনায়তনটিকে শহীদ জিয়া হল হিসেবে নামকরণ করা হয়। তার ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়েছে।'

'মিলনায়তনটি জেলা প্রশাসনের অধীনে থাকায় প্রথমে আমরা ডিসির সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা বলেছেন যে, ম্যুরাল ভাঙার বিষয়ে তাদের কোনো নির্দেশনা নেই। সম্প্রতি জিয়া হল ভেঙে আরেকটি ভবন করার প্রস্তাব দিয়ে সংসদে বক্তব্য রেখেছিলেন শামীম ওসমান। আজকের এ ঘটনার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় সরকারি দলের নীলনকশার মাধ্যমে শহীদ জিয়ার এ ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়েছে। এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা,' বলেন তিনি।

আবু আল ইউসুফ খান বলেন, 'আমরা দেখেছি সংসদে দাঁড়িয়ে শামীম ওসমান জিয়া হল ভাঙার কথা বলেছেন। রাতের অন্ধকারে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে এ ম্যুরাল ভেঙে প্রমাণ করেছেন, তিনি আসলে প্রতিহিংসাপরায়ন একজন রাজনীতিবিদ। নারায়ণগঞ্জে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করতে এই কাজটি করেছেন তিনি।'

ম্যুরাল ভাঙার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পুনরায় ম্যুরালটি স্থাপন করার দাবি জানান বিএনপি নেতারা। না হলে তারা আন্দোলনের দিকে যাবেন বলে জানান সাখাওয়াত।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দিনের বেলায় জিয়া হলের চাবি থাকে স্থানীয় ফল বিক্রেতা আরিফুর রহমানের কাছে। তার বাবা লুৎফর রহমান এই হলের কেয়ারটেকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। গত ৭ মাস আগে লুৎফর রহমান মারা যাওয়ার পর থেকে আরিফুর তদারকি করছেন।

জানতে চাইলে আরিফুর ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বুধবার রাতে বাসায় যাওয়ার সময়ও বিল্ডিংয়ে ম্যুরালটি দেখেছি। সকালে এসে দেখি ম্যুরাল নেই। চাবি খুলে উপরে গিয়ে দেখি ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভাঙা অবস্থায় সেটি ছাদের উপর পড়ে আছে।'

জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভবনটি জরাজীর্ণ। এটি ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা আছে। তবে, এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।'

'কে বা কারা ম্যুরালটি ভেঙেছে, সে বিষয়ে তদন্তের জন্য পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে,' বলেন তিনি।

জানা গেছে, ১৯৭৮ সালে নারায়ণগঞ্জ সফরকালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চাষাঢ়ায় 'টাউন হল' নামে ওই মিলনায়তনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। 

জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ১৯৮১ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এমএ সাত্তার টাউন হল উদ্বোধনের সময় হলটির নাম রাখেন শহীদ জিয়া হল।

তবে, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর মিলনায়তনটির নাম পরিবর্তন করে 'শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তন' রাখা হয়। 

২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে আবারও নাম পরিবর্তন করে 'শহীদ জিয়া হল' করা হয়। পরে ভবনটির উপরের অংশে জিয়াউর রহমানের একটি ম্যুরাল স্থাপন করা হয়।

এদিকে, চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদের অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে এক সম্পূরক প্রশ্নে শামীম ওসমান জিয়া হলের জায়গায় নতুন ভবন নির্মাণ করে সেটিকে 'ছয় দফা ভবন' করার দাবি জানান।

ম্যুরালটি ভাঙার অভিযোগ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি শুনেছি ম্যুরালটি ভাঙা হয়েছে কিংবা ভেঙে পড়েছে, দুইটার একটা হতে পারে। কেননা ২০১৪ সালে ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল।'

'এখন যদি কেউ আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করে, সেটা তার বা তাদের ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করব না। হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী, জিয়াউর রহমানের শাসনামল অবৈধ। আইন অনুযায়ী তো, তার ম্যুরাল বাংলাদেশের কোথাও থাকার কথা না। যদিও এইটা সরকারি ব্যাপার,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Power grid failure causes outage across 21 districts

According to the Power Grid Bangladesh PLC, the situation has since returned to normal

7h ago