রাফা অভিযানে ব্যবহারের আশঙ্কায় ইসরায়েলে বোমার চালান বন্ধ: যুক্তরাষ্ট্র

রাফায় ইসরায়েলি বোমা হামলার মধ্যেই স্বাভাবিক জীবন যাপনের চেষ্ঠা চালাচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স
রাফায় ইসরায়েলি বোমা হামলার মধ্যেই স্বাভাবিক জীবন যাপনের চেষ্ঠা চালাচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের শুরু থেকেই দেশটিকে অস্ত্র সরবরাহ করে এসেছে ওয়াশিংটন। তবে সপ্তাহে বোমার চালান আটকে দিয়েছে জো বাইডেন প্রশাসন। সাত মাস ধরে চলমান এই সংঘাতে এবারই প্রথম এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

আজ বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

এর আগে জানা গিয়েছিল প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন তেল আবিবে অস্ত্রের একটি চালান সরবরাহে দেরি করছে। তবে কেন এই দেরি বা কোন ধরনের অস্ত্রের চালান বন্ধ হয়েছে, তখন তা জানা যায়নি।

বাইডেন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা গতকাল মঙ্গলবার জানান, ওয়াশিংটন ১,৮০০টি ২,০০০ পাউন্ড (৯০৭ কেজি) ও ১,৭০০টি ৫০০ পাউন্ড (২২৬ কেজি) মানের বোমার চালান আটকে দিয়েছে, কারণ ইসরায়েল রাফায় বড় আকারে স্থল হামলা চালানো বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ 'পুরোপুরি নিরসন' করতে ব্যর্থ হয়েছে।

ইতোমধ্যে হোয়াইট হাউস রাফা সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে 'অগ্রহণযোগ্য' উদ্যোগ হিসেবে অভিহিত করেছে। উল্লেখ্য, গতকাল মিশর-গাজা সীমান্তের রাফা ক্রসিংয়ে ইসরায়েলি ট্যাংক অবস্থান নিয়েছে। কার্যত এই সীমান্ত চৌকি এখন ইসরায়েলের দখলে।

উল্লেখ্য, গাজায় ত্রাণ সরবরাহের গুরুত্বপূর্ণ পথ এই রাফা সীমান্ত। ইসরায়েলি ট্যাংক অবস্থান নেওয়ার পর থেকে গাজায় নতুন করে কোনো ত্রাণ প্রবেশ করতে পারছে না।

গত এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট বাইডেন হুশিয়ারি দিয়েছিলেন, বেসামরিক ব্যক্তিদের সুরক্ষা না দিতে পারলে ইসরায়েল প্রসঙ্গে মার্কিন নীতিমালায় পরিবর্তন আসতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, বোমার চালান বন্ধ রাখা সেই হুশিয়ারির বাস্তবায়ন।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা জানান বাইডেন প্রশাসন যখন জানতে পেরেছে, ইসরায়েল রাফায় বড় আকারে স্থল অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে, তখন তারা বোমার চালান বন্ধের সিদ্ধান নেয়।

সাত মাসের যুদ্ধের শুরুতেই উত্তর গাজায় হামলা শুরুর পর সেখান থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে আসা ১০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিক আশ্রয় দক্ষিণ গাজার শহর রাফায় আশ্রয় নিয়েছেন।

রাফাহ সীমান্তে গাজার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা আশ্রয় নিয়েছেন। ছবি: এএফপি
রাফাহ সীমান্তে গাজার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা আশ্রয় নিয়েছেন। ছবি: এএফপি

ইসরায়েল হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্যে গাজায় স্থল হামলার পরিকল্পনা শুরু করে। তাদের দাবি, রাফায় চার ব্যাটেলিয়ন হামাস যোদ্ধা বেসামরিক মানুষের মধ্যে লুকিয়ে আছেন। ইতোমধ্যে রাফায় হামলার পরিকল্পনা ইসরায়েলি যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেয়েছে।

তবে শুরু থেকেই এই উদ্যোগ ও পরিকল্পনার চরম বিরোধিতা করে এসেছেন জো বাইডেন।

নাম না প্রকাশের শর্তে জ্যেষ্ঠ্য মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা রাফা অভিযানের বিকল্প নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু এখনো 'আমাদের সব উদ্বেগের বিষয়গুলোর সুরাহা হয়নি।'

'আমাদের ধারণা হয়েছে ইসরায়েলি নেতারা এই অভিযান শুরু করার সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেছেন। তাই আমরা গুরুত্ব সহকারে ইসরায়েলের কাছে সুনিদৃষ্ট কিছু অস্ত্র পাঠানোর সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করি। কারণ এগুলো রাফায় ব্যবহার করা হতে পারে। এ প্রক্রিয়াটি এপ্রিলে শুরু হয়েছে', যোগ করেন তিনি।

কর্মকর্তা জানান, ওয়াশিংটন সবচেয়ে ভারী দুই হাজার পাউন্ডের বোমাগুলো নিয়ে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন।

'গাজার অন্যান্য অংশে আমরা যেমন দেখেছে, জনবহুল শহুরে পরিবেশে এই বোমার প্রভাব ভয়াবহ হতে পারে', যোগ করেন তিনি।

এখনো চালানের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি বলেন, 'আপাতত শুধু স্থগিত রাখা হয়েছে।'

যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলে জেডিএএমএস বোমাসহ অন্যান্য অস্ত্র পাঠানোর বিষয়টিও নিরীক্ষা করছে।  

ইসরায়েলের দাবি, রাফায় 'সীমিত আকারে' সামরিক অভিযান চলছে। ছবি: রয়টার্স (৭ মে)
ইসরায়েলের দাবি, রাফায় 'সীমিত আকারে' সামরিক অভিযান চলছে। ছবি: রয়টার্স (৭ মে)

এর আগে হোয়াইট হাউস বলেছিল, ইসরায়েল প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা এখন রাফায় 'সীমিত আকারে' সামরিক অভিযান চালাচ্ছে। এটা সেই তথাকথিত বড় আকারের 'স্থল অভিযান' নয়।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজার ১৭০ জন নিহত হন। হামাসের হাতে জিম্মি হন ২৫০ জন।

এই হামলার প্রতিশোধ হিসেবে সেদিনই গাজার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন ও নির্বিচার বিমানহামলা শুরু করে ইসরায়েল। পরবর্তীতে স্থলবাহিনীও এতে যোগ দেয়। এই আগ্রাসনে গত ৭ মাসে অন্তত ৩৪ হাজার ৭৮৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

 

Comments

The Daily Star  | English

A budget without illusions

No soaring GDP promises. No obsession with mega projects. No grand applause in parliament. This year, it’s just the finance adviser and his unemotional speech to be broadcast in the quiet hum of state television.

8h ago