বেশি রেমিট্যান্স আসছে আরব আমিরাত থেকে, পাচারের অর্থ কিনা প্রশ্ন বিশেষজ্ঞদের

রেমিট্যান্স, প্রবাসী আয়, আরব আমিরাত,
প্রতীকী ছবি, স্টার ফাইল ফটো

শেষ চলা চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে উপসাগরীয় দেশটি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে—রেমিট্যান্স আয়ের দ্বিতীয় প্রধান উৎস যুক্তরাজ্য। তৃতীয় ও চতুর্থ যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব।

আরব আমিরাত থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া দেশের জন্য সুসংবাদ। কারণ গত দুই বছর ধরে রিজার্ভ সংকটে জর্জরিত অর্থনীতিকে এই রেমিট্যান্স বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে।

তবে বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন—পাচার হওয়া টাকার ওপর প্রণোদনা ও বৈধতা নিতে তা রেমিট্যান্স আকারে দেশে ফিরে আসছে না তো?

বিশেষজ্ঞদের মতে, আরব আমিরাতের সবচেয়ে সমৃদ্ধ শহর দুবাই ও রাজধানী আবুধাবি বর্তমানে অর্থপাচারের জন্য বিশ্বের ধনীদের অন্যতম পছন্দের জায়গা।

আরব আমিরাতে যাওয়া প্রবাসীরা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৩৬৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এটি আগের অর্থবছরের একই সময়ে পাঠানো ২৪১ কোটি ডলারের তুলনায় ৫২ শতাংশ বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিলে এর অবস্থান ছিল তৃতীয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এ সময়ে দেশে রেমিট্যান্স হিসেবে পাঠানো এক হাজার ৯১১ কোটি ডলারের মধ্যে আরব আমিরাতের শ্রমিকের অবদান ১৯ শতাংশ।

উপসাগরীয় এই দেশটি বাংলাদেশিদের বিনিয়োগের প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। যদিও বিনিয়োগের অর্থ কীভাবে পাঠানো হয়েছিল তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। কারণ কেবলমাত্র হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিদেশে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে অনুমতি পেয়েছে।

অনেকে অবৈধভাবে আরব আমিরাতে টাকা পাচার করে সেখানে বিনিয়োগ করেছেন বলে অভিযোগ আছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আরব আমিরাতের সবচেয়ে সমৃদ্ধ শহর দুবাই ও রাজধানী আবুধাবি বর্তমানে অর্থপাচারের জন্য বিশ্বের ধনীদের অন্যতম পছন্দের জায়গা।

আরব আমিরাতে যেহেতু বাংলাদেশি প্রবাসীদের সংখ্যা তেমন নেই, তাই সেখান থেকে রেমিট্যান্স বেশি আসাটা বিশেষজ্ঞদের সন্দেহকে আরও গভীর করেছে।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুসারে, ২০০৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২১ লাখ ৫৮ হাজার কর্মী কাজের খোঁজে আরব আমিরাতে গিয়েছেন। এই সংখ্যা সৌদি আরবে যাওয়া ৩৮ লাখ ৮৫ হাজার কর্মীর তুলনায় সাড়ে ৪৪ শতাংশ কম।

তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে আরব আমিরাত থেকে রেমিট্যান্স আয় সৌদি আরবের তুলনায় ৪০ দশমিক আট শতাংশ বেশি। গত জুলাই থেকে এপ্রিলে সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ২১৬ কোটি ডলার। এটি এর আগের বছরে ছিল ৩০৪ কোটি ডলার।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ডিসটিংগুইশড ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আরব আমিরাত ও সৌদি আরব যাওয়া শ্রমিকদের দক্ষতা ও বেতনে খুব তফাৎ নেই।'

তাই আরব আমিরাত থেকে কারা রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে এবং হঠাৎ করে কেন এর পরিমাণ বেড়ে গেল তা খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরব থেকে বেশি রেমিট্যান্স আসছে। ২০২২ সালের দ্বিতীয়ার্ধে অল্প সময়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এই জায়গায় চলে এসেছিল। ২০২৩ সালের শেষে শীর্ষস্থানে ফিরে আসে সৌদি আরব।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরু থেকেই আরব আমিরাত থেকে বেশি রেমিট্যান্স আসতে শুরু করে।

২০১৯ সালে সরকার রেমিট্যান্স আনতে দুই শতাংশ প্রণোদনা চালু করে। পরে তা আড়াই শতাংশ করা হয়।

দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা প্রণোদনা ও বৈধতা পেতে ফেরত আনা হচ্ছে কিনা তা দেখতে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

তিনি একে টাকার 'রাউন্ড ট্রিপ' হিসেবে অভিহিত করেছেন।

'দেশের রিজার্ভ ও ব্যালেন্স অব পেমেন্টের জন্য রেমিট্যান্স ভালো হলেও এর পেছনে অন্য উদ্দেশ্য আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার,' যোগ করেন তিনি।

মেঘনা ব্যাংক ও এনসিসি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আমিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দুবাই এখন আকর্ষণীয় গন্তব্য হওয়ায় অনেকে সেখানে বাড়ি কিনছেন।'

তার মতে, 'এখন ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠালে প্রবাসীরা প্রণোদনা পাচ্ছেন। আরব আমিরাত থেকে রেমিট্যান্স বেশি আসার পেছনে এটি একটি কারণ হতে পারে।'

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, প্রবাসীরা গত জুলাই থেকে এপ্রিলে যুক্তরাজ্য থেকে ২৩৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স ২৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ কমে দুই দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

‘We knew nothing about any open letter’

Journalist Bibhuranjan’s son says after identifying his body

2h ago