‘র‌্যামন ম্যাগসাইসাই’ পুরস্কারপ্রাপ্তির ৪০তম বার্ষিকীতে ড. ইউনূসকে ম্যানিলায় সম্মাননা

ড. ইউনূসের র‍্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার প্রাপ্তির ৪০তম বার্ষিকী ও আগামীকাল ২৮ জুন জন্মদিন উপলক্ষে তার হাতে তারই একটি প্রতিকৃতি উপহার হিসেবে তুলে দেন সুসান্না বি. আফান। ছবি: সংগৃহীত

শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের 'র‌্যামন ম্যাগসাইসাই' পুরস্কারপ্রাপ্তির ৪০তম বার্ষিকী উপলক্ষে তাকে এক বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেছে ফাউন্ডেশনটি।

গত ২ জুলাই ফিলিপাইনের ম্যানিলায় এই সম্মাননা দেওয়া হয়।

ড. ইউনূসকে প্রদত্ত এই সম্মাননা অনুষ্ঠানটিকে ম্যাগসাইসাই পুরস্কারের ৬৫তম বার্ষিকীর একটি অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়।

র‌্যামন ম্যাগসাইসাই অ্যাওয়ার্ড ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট সুসান্না বি. আফান তার সূচনা বক্তব্যে বলেন, ১৯৮৪ সালে প্রফেসর ইউনূসকে দেওয়া ম্যাগসাইসাই পুরস্কারটি তার প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মাননা, যা নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার ২০ বছরেরও আগে প্রদান করা হয়েছিল।

প্রফেসর ইউনূসের উদ্ভাবিত ক্ষুদ্রঋণ মডেল সারা বিশ্বে কোটি কোটি মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে তার বিবরণ দেন সুসান্না বি. আফান।

বিশ্বজুড়ে সামাজিক নেতাদের ওপর প্রফেসর ইউনূসের চিন্তাধারা ও কর্মের প্রভাব এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কোটি কোটি দরিদ্র পরিবারকে দারিদ্রমুক্ত করতে তার তত্ত্বের কার্যকর প্রয়োগের বিষয়েও তিনি বিস্তারিত আলোচনা করেন।

দরিদ্রদের কাছে ক্ষুদ্রঋণের সুবিধা পৌঁছে দিতে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করার জন্য এশিয়া অঞ্চলে এ পর্যন্ত কতজন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পেয়েছেন তিনি তার বিবরণও দেন।

সুসান্না বি. আফান ডক্টর আরিস আলিপকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবার কাছে পরিচয় করিয়ে দেন। ড. আলিপ ১৯৮৬ সালে ফিলিপাইনে 'সেন্টার ফর এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট—মিউচুয়াল রিইনফোর্সিং ইনস্টিটিউশন' নামে একটি গ্রামীণ রিপ্লিকেশন সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন—যা ২০০৭ সালে র‌্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার অর্জন করে। সংস্থাটি এখন একটি সামাজিক ব্যবসা হিসেবে ফিলিপাইনের ৯০ লাখ উপকারভোগীর কাছে পৌঁছেছে।

সুসান্না বি. আফান ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের অপর দুই ম্যাগসাইসাই পুরস্কারপ্রাপ্তকে পরিচয় করিয়ে দেন, যারা নিজ নিজ দেশে ক্ষুদ্র ঋণের অর্থায়নে তাদের কৃতিত্বের জন্য এই পুরস্কার অর্জন করেন।

ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত মানবিক সহায়তা প্রতিষ্ঠান 'ডোমপেট ধুয়াফা' ২০১৬ সালে ম্যাগসাইসাই পুরস্কারে ভূষিত হয়। পাকিস্তানের মুহাম্মদ আমজাদ সাকিব ২০০১ সালে তার প্রতিষ্ঠিত 'আখুয়াত' সংগঠনটির জন্য ২০১৬ সালে ম্যাগসাইসাই পুরস্কারে ভূষিত হন। উভয় সংস্থাই ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে তাদের নিজ নিজ এলাকার মানুষের ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।

সুসান্না বি. আফান বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে, এনডাব্লিউটিএফের নির্বাহী পরিচালক সুজেট ডি গ্যাস্টন ফিলিপাইনের আরেক গ্রামীণ রিপ্লিকেটর, যিনি তার পিতার প্রতিনিধি হিসেবে অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তার পিতা ১৯৭৩ সালে ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পেয়েছিলেন।

এনডাব্লিউটিএফ এ বছর ম্যানিলায় ইউনূস সেন্টারের সঙ্গে যৌথভাবে সামাজিক ব্যবসা দিবস ২০২৪ এর আয়োজন করেছে এবং একইসঙ্গে সংস্থাটির প্রতিষ্ঠার ৪০ বছর পূর্তি উদযাপন করছে। প্রফেসর ইউনূস এই উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এই সফরে যান।

এনডাব্লিউটিএফ ৩৫ বছর আগে প্রফেসর ইউনূসের পথনির্দেশনা ও গ্রামীণ ট্রাস্টের সহায়তায় ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি শুরু করে এবং সংস্থাটি বর্তমানে প্রায় ছয় লাখ পরিবারের নারীদের ক্ষুদ্রঋণ ও আর্থিক পরিষেবার মাধ্যমে এই পরিবারগুলোকে ক্ষমতায়িত করছে। সংস্থাটি সামাজিক ব্যবসায়ও বিনিয়োগ করছে এবং নেগ্রোস অক্সিডেন্টাল দ্বীপে থ্রি-জিরো ক্লাব সৃষ্টিতে সহায়তা করছে।

'সেলিব্রেটিং গ্রেটনেস অব স্পিরিট' নামের একটি ফাউন্ডেশন প্রফেসর ইউনূস এবং ফিলিপাইনের ম্যাগসাইসাই পুরস্কারপ্রাপ্তদেরকে তাদের একটি করে প্রতিকৃতি উপহার দেয়।

এই অনুষ্ঠানে র‌্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কারের ৬৫তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে একটি বিশেষ ভলিউম 'গ্রেটনেস অব স্পিরিট: স্টোরিজ অব লাভ কারেজ অ্যান্ড সার্ভিস' উপস্থাপন করা হয়।

১৮ জন রাষ্ট্রদূত এবং ম্যাগসাইসাই পরিবারের সদস্যসহ ফিলিপিনো সমাজের ১৩০ জন উচ্চপদস্থ ব্যক্তি এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

সুসান্না বি. আফান গত ২৭ জুন ইউনূস সেন্টারের বার্ষিক উদযাপন সোশ্যাল বিজনেস ডে ২০২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন এবং অধ্যাপক ইউনূসকে ম্যাগসাইসাই পুরস্কার প্রদানের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে তাকে এই পুরস্কার প্রদানের ছবি সবার সামনে প্রদর্শন করেন। একইসঙ্গে তিনি প্রফেসর ইউনূসের প্রতি তার ও ম্যাগসাইসাই ফাউন্ডেশনের গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

6h ago