শিগগির উন্নতি হচ্ছে না বিদ্যুৎ সরবরাহ

বিদ্যুৎ সরবরাহের উন্নতি নেই
প্রতীকী ছবি

আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং অদূর ভবিষ্যতে উৎপাদন বৃদ্ধির কোনো লক্ষণ না থাকায় সারাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। 

পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসির তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার মাঝরাতে দেশে সর্বোচ্চ ২,৩১২ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে যা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে একটি রেকর্ড।

তথ্য অনুসারে, সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ বিভ্রাটে পড়েছে রাজশাহী, রংপুর, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চল।

গত সোমবার সন্ধ্যায় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দিনাজপুরের ৫২৫ মেগাওয়াট বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একমাত্র কার্যকরী ইউনিটটি বন্ধ হয়ে গেলে পুরো বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে বৃহত্তর রংপুর এলাকা দিনের একটা বড় সময় বিদ্যুৎহীন থাকে।

এই ইউনিটটি দিনে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করত।

উৎপাদন বন্ধের জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক চীনা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হারবিন ইন্টারন্যাশনালকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি সময়মতো কারিগরি সহায়তা দিতে ব্যর্থ হওয়াই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ।

হারবিন রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত চুক্তির বাধ্যবাধকতা মেনে চলেনি জানিয়ে তিনি বলেন, চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি প্রযুক্তিগত ত্রুটি সারানোর জন্য দুই সপ্তাহ সময় চেয়েছে।

এই এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকেরা হঠাৎ করেই বড় বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন।

দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার চালকল মালিক আব্দুল হান্নান জানান, বার বার বিদ্যুৎ যাওয়ায় তার মিলের উৎপাদন অনেক কমে গেছে।

নবাবগঞ্জ উপজেলায় পিভিসি প্রিন্টিং ব্যবসা করেন সুলতান মাহমুদ। তিনি জানান, গত কয়েকদিন ধরে ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাওয়ায় তার ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে।

তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তত ছয় ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না।

বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় রাজধানী ঢাকাতেও লোডশেডিং বেড়েছে। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি ও ঢাকার পল্লী বিদ্যুৎগুলো মিলে গতকাল প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ ঘাটতিতে পড়ে।

গত ২৭ মে ঘূর্ণিঝড় রিমাল আঘাত হানার পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ২৫টি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ আছে।

ঘূর্ণিঝড়ে দেশের দুটি ভাসমান স্টোরেজ এবং রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিটের (এফএসআরইউ) মধ্যে একটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা এলএনজি রিগ্যাসিফিকেশন (পুনরায় গ্যাসে পরিণত করা) ক্ষমতা ১১০০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফডি) থেকে প্রতিদিন ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুটে নামিয়ে এনেছে।

এফএসআরইউটি বেশ কয়েকবার কার্যক্রম চালু করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাম্প্রতিক ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে এটি পুনরায় কাজ শুরু করার কথা রয়েছে।

তবে পিডিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, এফএসআরইউ চালু হলেও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের কার্গো না আসায় পরিস্থিতির এখনই উন্নতি হবে না।

তিনি জানান, সরকার সম্প্রতি ক্রয় প্রক্রিয়া শুরু করেছে এবং কার্গো আসতে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে।

গ্যাস ঘাটতির পাশাপাশি বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর অপর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনকে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য দায়ী করছেন পিডিবি কর্মকর্তারা।

এদিকে, প্রায় ৮০ কোটি ডলারের বকেয়া বিল থাকায় আদানি ভারতের গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পিডিবির নির্দেশনা মেনে প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট কম সরবরাহ করছে।

কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ডেইলি স্টার জানতে পেরেছে পিডিবির কাছে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার বকেয়া বিল রয়েছে, যার বেশিরভাগই ডলারে পরিশোধ করতে হবে।

ডলারের সংকটের কারণে বিল পরিশোধ আটকে রাখা হয়েছে বলে জানান তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬০০ কোটি ডলার, যা চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে পারবে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে কয়লা, গ্যাস ও ফার্নেস অয়েলসহ প্রাথমিক জ্বালানি আমদানি বাধাগ্রস্ত হয়েছে, যা বিদ্যুৎখাতে প্রভাব ফেলেছে।

যে কারণে ক্রমবর্ধমান চাহিদা থাকার পরও পিডিবি উৎপাদন বাড়াতে পারেনি।

বর্তমানে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৭ হাজার ৮৬ মেগাওয়াট।

Comments

The Daily Star  | English

The end of exemption?

TRIPS waiver end poses dual challenge: legal and technological

21h ago