উদ্যোক্তা হতে চাইলে দেখতে পারেন যে ৫ সিনেমা

উদ্যোক্তা, সিনেমা
ছবি: সংগৃহীত

জীবনের অনেক খুঁটিনাটি বিষয়ই ক্লাসরুম থেকে নয়, বরং শেখা হয় জীবনে চলার পথে। সিনেমাকে অনেকে 'লার্জার দ্যান লাইফ' বলে থাকেন, কেননা এতেও থাকে বাস্তব জীবনের বহু জটিল পাঠের সরলীকরণ। যদি আপনি একজন উদ্যোক্তা হয়ে থাকেন কিংবা নতুন কোনো ব্যবসা শুরুর কথা ভেবে থাকেন, তবে আপনাকে অনুপ্রাণিত করতে আজকের তালিকার সিনেমাগুলো খুবই জরুরি।

দ্য পারস্যুইট অব হ্যাপিনেস

একজন উদ্যোক্তার বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অধ্যবসায়—ব্যর্থতা থেকেও গা-ঝাড়া দিয়ে নতুন করে শুরু করবার ক্ষমতা। উইল স্মিথ অভিনীত এবং গ্যাব্রিয়েল মুচ্চিনো পরিচালিত 'দ্য পারস্যুইট অব হ্যাপিনেস' একটি বাস্তব-জীবন ভিত্তিক গল্প। এই গল্পের মূল চরিত্র ক্রিস গার্ডনার, যে কিনা দর্শককে তার কঠোর অধ্যবসায় এবং হাজারো বাধা-বিপত্তির পরও অনুপ্রাণিত থাকার মন্ত্র শেখায়।

একা একা নিজের ছোট্ট সন্তানকে সামলানোর পাশাপাশি পরিবারকে আরও ভালো জীবন দেওয়ার তার যে চেষ্টা, এরই মধ্যে ফুটে ওঠে তার জীবনের পরিশ্রমী চেহারা। এই সিনেমাটি কারো ক্যারিয়ারের ঝুটঝামেলা নিয়েই শুধু নয়, বরং ক্যারিয়ার গড়ে তোলার সময় ব্যক্তিজীবনে আসা সমস্যাগুলোর ওপরও জোর দেয়। জীবনে চলার পথে আসা বাধাগুলো জয় করতে এই সিনেমার কাহিনিটি মনে জোর আনতে সাহায্য করবে নিঃসন্দেহে।

জয়

২০১৫ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমাটি থেকে আমরা জানতে পারি যে, জীবনে যত বাধা-বিপত্তিই আসুক না কেন, প্রকৃত উদ্যোক্তারা সত্যিই শূন্য থেকে যাত্রা শুরু করতে পারে।

সিনেমাটির মূল চরিত্র জয় ম্যাংগানো যখন নিজের ব্যবসা দাঁড় করাতে চেষ্টা করে, তখন সে গৃহস্থালী জিনিসপত্র নিয়ে বিভিন্ন রকম নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করে। আর এসবের মাঝেই সে শিকার হয় প্রবঞ্চনা, ধোঁকাবাজি ও বহু অপ্রত্যাশিত সমস্যার।

পরবর্তী সময়ে জয়কে একইসঙ্গে দেখা যায় একজন মাতৃতান্ত্রিক প্রধান এবং সফল ব্যবসায়ী হয়ে উঠতে। জয়ের উদ্ভাবনী মন-মানসিকতা ও ধারাবাহিকভাবে কাজে লেগে থাকার এই যাত্রার মূল বিষয়টি হচ্ছে, 'পাছে লোকে কিছু বলে' ভুলে গিয়ে নিজের সমস্যা নিজেই সমাধান করা, যা এটি উদ্যোক্তাদের মনোবল ধরে রাখতে দারুণভাবে সহায়তা করবে। এই সিনেমার মূল চরিত্রে আছেন জেনিফার লরেন্স।

ওয়াল স্ট্রিট

এই চলচ্চিত্রে আমরা একইসঙ্গে দুটো গল্পের খোঁজ পাই। একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষার, অন্যটি লোভের। সাফল্য ও অর্থ নিয়ে অন্যতম বিখ্যাত এই সিনেমাটিতে মূলত তরুণদের সাফল্যের পেছনে ছোটা এবং সেই ছুটন্ত পথে কাউকে নিজেদের 'আদর্শ' হিসেবে দেখার যাত্রাটা দেখানো হয়েছে।

এ ছাড়াও 'ওয়াল স্ট্রিট'র বিখ্যাত, কিংবা অতি কুখ্যাত 'গ্রিড ইজ গুড' বা 'লোভই ভালো' উক্তিটির জন্যও দর্শকমহলে সুপরিচিত। চার্লি শিন অভিনীত চরিত্র বাড ফক্স এ সিনেমার মূল চরিত্র। গল্পের আরেকটি চরিত্র মাইকেল ডাগলাস অভিনীত গর্ডন গেকো তার আদর্শ এবং বাড ফক্স তার মতো সফল হওয়ার জন্য নিজেকে সাফল্যের যাত্রায় সঁপে দেয়। আর পথিমধ্যে বাড একদিন বাণিজ্যের কুচক্রে ফেঁসে যায় এবং ঝামেলায় পড়ে।

ওয়াল স্ট্রিট তরুণ সমাজের জন্য একটি সতর্কতাবাণীর কাজ করে। তরুণ যে উদ্যোক্তারা সহজ উপায়ে, কম সময়ে বেশি সাফল্য পেতে চান—তাদেরকে সাবধান করে দেয়।

দ্য অ্যাভিয়েটর

মার্টিন স্করসেজি ও লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও যুগলের এই সিনেমাটি একজন বাস্তব জীবনের উদ্যোক্তা—হাওয়ার্ড হিউসকে নিয়ে তৈরি। সাফল্যের শিখর ছুঁতে গিয়ে মানুষ যে শুধু বাহ্যিক বাধার মুখোমুখিই হয় না, বরং নিজের মধ্যকার বহু দ্বন্দ্ব তাকে সামলাতে হয়—এরই জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ 'দ্য অ্যাভিয়েটর'।

হাওয়ার্ডের দিনকে দিন বাড়তে থাকা ওসিডি তার দৈনন্দিন জীবনে বাজে প্রভাব ফেলে। এ ছাড়াও ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বহু প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি ও অগ্রগণ্যদের সঙ্গে তাকে প্রতিনিয়তই লড়ে যেতে হয়।

কিন্তু এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তিনি তার কর্মক্ষেত্রে খ্যাতি ও সাফল্যকে দুই হাতে করে এগিয়ে গেছেন।

রকেট সিং: সেলসম্যান অব দ্য ইয়ার

বলিউডের এই সিনেমাটি এমন এক উদ্যোক্তাকে নিয়ে, যে কিনা নিজের জীবনের ঘূর্ণিপাক নিয়েই দ্বন্দ্বে মশগুল ছিল। সিনেমার মূল কুশীলব হারপ্রীত সিং চরিত্রে অভিনয় করেছেন রণবীর কাপুর। হারপ্রীতের পড়াশোনার অবস্থা কখনোই ভালো ছিল, তাই তাকে সেলসম্যানের চাকরি নিতে হয়। প্রতিনিয়ত সিনিয়র ও সহকর্মীদের কাছ থেকে হাস্য-পরিহাস তো সইতে হয়ই, সেইসঙ্গে রয়েছে নিজেকে প্রমাণ করার এক পাহাড়সম চ্যালেঞ্জ। তবে একদিন সে যে কোম্পানিতে কাজ করত, সেখান থেকেই রসদ জুটিয়ে নিজের একটি কোম্পানি চালু করে ফেলে।

এই সিনেমা থেকে শিক্ষণীয় বিষয়টি হচ্ছে এই যে, সাফল্য কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা বা সার্টিফিকেটের মানদণ্ডে লেখা হয় না, বরং ব্যক্তির প্রতিভাই তাকে সফল করে তোলে। আমরা বদ্ধপরিকর হলে যেকোনো সময় নিজের পথ ঘুরিয়ে সফলতার দিকে যাত্রা করতে পারি। এ ছাড়া, হারপ্রীতের ঝুঁকি নেওয়ার ইচ্ছা, রোমাঞ্চপ্রেমী স্বভাব, দল থেকে উপযুক্ত সদস্য বাছাই করার সক্ষমতা এবং তার গ্রাহকদের জন্য সম্মানবোধ— এই সবকিছুই তাকে আলাদাভাবে সফল হতে সাহায্য করেছে।

যে শিক্ষার্থীরা গ্রাজুয়েশনের পর কী করবেন, এ নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছেন, তারা এই সিনেমাটি অবশ্যই দেখবেন। হতাশার মেঘাচ্ছন্ন আকাশে আশা ও প্রেরণার এক চিলতে আলো আসবেই।

অনুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী

Comments

The Daily Star  | English
remittance earning of Bangladesh

Remittance rises 30% in July

Migrants sent home $2.47 billion in the first month of the current fiscal year

5h ago