রেলে কর্মবিরতিতে সারাদেশে যাত্রীদের দুর্ভোগ

সিলেটে রেল স্টেশনে আসা যাত্রীরা। ছবি: শেখ নাসির/ স্টার

রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রেনের যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। দেশের বিভিন্ন রেলস্টেশনে আসা যাত্রীরা গন্তব্যে না যেতে পেরে ক্ষুব্ধ ও হতাশার কথা জানিয়েছে। গন্তব্যে যেতে অনেক জায়গায় বাস ও অটোরিকশায় অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে।

ঠাকুরগাঁও

ছবি: স্টার

পূর্ব নোটিশ ছাড়া এবং অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বিক্রি বন্ধ না করে কর্মবিরতি কর্মসূচি নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা জানিয়েছেন ঠাকুরগাঁও রোড রেলওয়ে স্টেশনে আসা যাত্রীরা।

মঙ্গলবার সকালে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষরা বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রার জন্য প্ল্যাটফর্মে এসে জড়ো হয়েছেন।

ট্রেনে বন্ধ হওয়ার খবর পেয়ে অনেকেই তাদের হতাশা প্রকাশ করেন এবং পরবর্তীতে কী করা উচিত সে বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকেন।

ছবি: স্টার

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার খোচাবাড়ি গ্রামের জয়া রায় (২৫) দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি গত রাতে অনলাইনে ঢাকা যাওয়ার জন্য টিকিট কিনেছেন। স্টেশনে এসে জানতে পারেন চালকদের কর্মবিরতির কারণে ট্রেন সেবা বন্ধ আছে।

জয়পুরহাট যাওয়ার উদ্দেশ্যে আসা ফরিদা আখতার (২৫) বলেন, 'এই শীতে এক বছর বয়সী সন্তান নিয়ে ১৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এসে শুনি ট্রেন চলবে না।

তিনি প্রশ্ন রাখেন, 'যদি ট্রেন বন্ধই থাকবে তাহলে অনলাইনে টিকিট বিক্রি বন্ধ করা হয়নি কেন?

ফরিদাও গতকাল রাতে অনলাইনে টিকিট কেটেছেন বলে জানান।

লালমনিরহাটের আব্দুল কবির (৩০) জানান, তিনি ঠাকুরগাঁওয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে এসেছিলেন। গত রাত সাড়ে ১১টার দিকে ৪টি টিকিট কিনে দোলনচাপা এক্সপ্রেসে করে আজ গাইবান্ধা যাওয়ার কথা।

'এখন তো শুনি ট্রেন বন্ধ। শিশুসন্তানসহ স্ত্রী, বৃদ্ধ মাকে নিয়ে কী করব, বুঝতে পারছি না।'

জানতে চাইলে, ঠাকুরগাঁও রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশনমাস্টার আবু তারেক বলেন, 'অনলাইন টিকিট বিক্রি সকাল পর্যন্ত চলছিল। ঢাকা বা অন্য স্থান থেকে আসা ট্রেনগুলো সকালে পৌঁছেছে, তবে কর্মবিরতি প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে।'

গাজীপুর

জয়দেবপুর জংশন, টংগী ও শ্রীপুর

ছবি: স্টার

ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় স্টেশনগুলোতে যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। যাত্রীরা জানান, আগে থেকে কোনো নোটিশ না থাকায় তারা অন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নিতে পারেননি।

নিয়মিত ট্রেনে ঢাকাযাত্রী মেজবাহ উদ্দিন জয়দেবপুর স্টেশনে এসে জানতে পারেন ট্রেন চলবে না। জরুরি কাজে ঢাকা যাওয়া দরকার হওয়ায় বেশি খরচে সড়ক পথে যেতে হবে বলে জানান তিনি।  

মোহনগঞ্জ যাওয়ার উদ্দেশ্যে জয়দেবপুর রেল জংশনে পরিবার নিয়ে এসেছিলেন ইব্রাহিম। তিনিও কীভাবে যাবেন তা নিয়ে চিন্তায় পড়েন।

ঈশ্বরদী যাওয়ার উদ্দেশ্যে এসেছিলেন পোশাককর্মী রুনা বেগম। বাড়িতে জরুরি কাজে যাওয়ার জন্য অফিস থেকে তিন দিনের ছুটি নিয়েছিলেন। ট্রেন চলাচল না করায় বেশি খরচের বিষয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান তিনি।  তিনি কখনো এর আগে সড়কপথে যাতায়াত করেননি বলেও জানান।  

করিমন নেসা মাওনা থেকে গফরগাঁও যাওয়ার জন্য সকালে শ্রীপুর স্টেশনে আসেন। ট্রেন না পেয়ে হতাশ তিনি। বলেন, অটোরিকশা চালকেরা সুযোগ বুঝে বেশি ভাড়া চাইছেন।

সকাল ১০ টায় গাজীপুরের জয়দেবপুরে জংশন রেলস্টেশন মাস্টার হানিফ আলি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আন্দোলনের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

কখন রেল যোগাযোগ পুনরায় চালু হবে, সে বিষয়ে এখনও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

খুলনা

খুলনা স্টেশনে আটকা পড়া যাত্রীরা বলছেন কর্মবিরতিতে চরম অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন তারা।

ভোরে অনেক যাত্রী দূরবর্তী এলাকা থেকে খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে এসে জানতে পারেন যে ট্রেন চলছে না। স্টেশন কর্তৃপক্ষ অগ্রিম টিকিটের টাকা ফেরত দিয়েছে।

এদিকে, রেল সেবা বন্ধ থাকায় বাসের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়েছে। সেইসঙ্গে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।

অনেক যাত্রী বাসের টিকিট পেতে না পেয়ে স্টেশনের আশেপাশে অপেক্ষা করছেন, ট্রেন পুনরায় চালু হওয়ার আশায়।

ছবি: হাবিবুর রহমান/ স্টার

পাবনার সুজাপুরের বাসিন্দা সানোয়ার হোসেন খুলনা স্টেশনে বসেছিলেন। তিনি খুলনার বটিয়াঘাটা থেকে বাড়ি যাবেন বলে এসেছিলেন।

'প্রায় এক মাস আগে আমন ধান কাটার জন্য খুলনায় এসেছিলাম। সকালে, আমি বাড়ি যাওয়ার জন্য স্টেশনে এলাম, কিন্তু ট্রেন চলছে না। সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে গিয়েছিলাম, কিন্তু বাসের ভাড়া অনেক বেশি তাই আবার স্টেশনে এসে অপেক্ষা করছি, বলেন তিনি।

যশোরের নাভারণ উপজেলার সাদিকুর ইসলামও কৃষিকাজের জন্য খুলনায় এসেছিলেন। তার সাথে আরও কয়েকজন ছিলেন।

'আমি জানতাম না যে ট্রেন চলছে না। সকাল ৮টায় স্টেশনে পৌঁছে দেখি ট্রেন চলছে না। এখন যদি বাসে করে যেতে হয় তাহলে খরচ অনেক পড়ে আর সময়ও লাগে অনেক বেশি।'

ছবি: হাবিবুর রহমান/ স্টার

খুলনা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. জাকির হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, ঢাকা, রাজশাহী, বেনাপোল এবং নীলফামারীগামী ট্রেনগুলো সাধারণত ভোরে খুলনা থেকে ছেড়ে যায়। তবে, রানিং স্টাফদের ধর্মঘটের কারণে সোমবার মধ্যরাত থেকে কোনো ট্রেন চলাচল করেনি।

'ধর্মঘটের কারণে আজ খুলনা থেকে কোনো ট্রেন ছেড়ে যায়নি। যারা আগে থেকে টিকিট বুক করেছিলেন তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। তবে, এই সমস্যার সমাধান কখন হবে তা আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Rawhide market disappoints again as prices drop below govt-fixed rates

The Ministry of Commerce had increased the price of cowhide in Dhaka by Tk 5-10 per square foot, setting the official rate at Tk 60-65

50m ago