লিবিয়ায় নৌকা ডুবে ২০ বাংলাদেশির মৃত্যুর আশঙ্কা

লিবিয়ার নৌকাডুবি। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
লিবিয়ার নৌকাডুবি। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

লিবিয়ার ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী এলাকা থেকে ২০ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তারা বাংলাদেশি নাগরিক। তবে পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত বৃহস্পতিবার দূতাবাসের ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বলা হয়, 'লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে ভূমধ্যসাগরের ব্রেগা তীর থেকে গত দুদিনে বেশ কয়েকজন অভিবাসীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে দূতাবাস বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছে। স্থানীয় উদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষের মতে, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের একটি নৌকা ভূমধ্যসাগরে ডুবে যাওয়ার পর এসব মরদেহ ব্রেগা তীরে ভেসে এসেছে।'

দূতাবাসের ওই ফেসবুক পোস্টে আরও জানানো হয়, 'উদ্ধার হওয়া মরদেহের মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিক থাকার আশঙ্কার কথা বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে দূতাবাস এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি। বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ করছে দূতাবাস।'

আজ শনিবার দূতাবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, 'এসব মানুষ কোন দেশের নাগরিক তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় রেড ক্রিসেন্টের ধারণা, তাঁরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। আর যে স্থান থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার হয়েছে সেখানে যাওয়ার অনুমতি এখনো পায়নি দূতাবাস।'

মরদেহগুলোতে পচন ধরে যাচ্ছিল উল্লেখ করে দূতাবাস আরও জানিয়েছে, এসব মরদেহের সঙ্গে জাতীয়তা–সংক্রান্ত কোনো নথিপত্র পাওয়া যায়নি। পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় মরদেহগুলো ব্রেগা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে আজদাবিয়া এলাকায় দাফন করা হয়েছে।

ঘটনাটি লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় সরকারের অধীনস্থ এলাকায় ঘটেছে, যার প্রশাসনিক কেন্দ্র বেনগাজিতে। তবে বাংলাদেশের দূতাবাস এখনো ঘটনাস্থলে যাওয়ার প্রয়োজনীয় অনুমতি পায়নি বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

এদিকে, ব্র্যাকের মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্মের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান গতকাল রাতে এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, নিহতদের বেশিরভাগই মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলার বাসিন্দা। এছাড়া, কয়েকজন ভৈরবের বাসিন্দাও রয়েছেন।

তিনি জানান, লিবিয়ায় বাংলাদেশের দূতাবাস এবং নিহতদের পরিবারের সদস্যদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই ধারণা করা হয়েছে।

'আমার কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, অন্তত আরও তিনটি মরদেহ ভেসে আসতে পারে। ওই নৌকায় কমপক্ষে ২৫ জন যাত্রী ছিলেন। তাদের মধ্যে দুই জন জীবিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে তারা কোথায় আছেন, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নই। দুর্ঘটনা কীভাবে ঘটেছে, সেটাও স্পষ্ট নয়,' তিনি লেখেন।

তিনি আরও জানান, ২০২৪ সালে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করা অভিবাসীদের মধ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। শুধু গত এক বছরেই অন্তত ১৩ হাজার ৪৪ বাংলাদেশিকে এই বিপজ্জনক রুট ব্যবহার করতে দেখা গেছে।

এদিকে, লিবিয়ায় বাংলাদেশের দূতাবাস এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি যে, নৌকাডুবিতে কতজন বাংলাদেশি মারা গেছেন।

'আমরা শুনেছি যে এই নৌকাডুবিতে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন, তবে এখনো কোনো নিশ্চয়তা পাইনি,' গতকাল রাতে দ্য ডেইলি স্টারকে এক কর্মকর্তা বলেন।

পরিস্থিতি অনুকূল হলে, দূতাবাসের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ শনাক্তকরণ ও প্রয়োজনে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করবে বলে তিনি জানান।

গত ৩০ জানুয়ারি, বাংলাদেশের দূতাবাস তাদের ফেসবুক পেজে জানিয়েছিল যে, গত দুই দিনে ব্রেগা উপকূলে বেশ কয়েকটি মরদেহ ভেসে এসেছে। তারা জানিয়েছিল, ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির পর এসব মরদেহ উপকূলে ভেসে ওঠে।

দূতাবাসের পক্ষ থেকে নিহত, আহত বা এই দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশিদের সম্পর্কে তথ্য জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দূতাবাসের ফেসবুক পেজ অথবা অফিসিয়াল মোবাইল নম্বর +২১৮৯১৬৯৯৪২০২ এবং +২১৮৯১৬৯৯৪২০৭ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারবেন।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh-Myanmar border landmine explosion

Bangladesh-Myanmar border: Landmine-related injuries on the rise

Having lost her right leg in a landmine explosion, Nur Kaida, a 23-year-old Rohingya woman, now feels helpless at a refugee camp in Teknaf.

13h ago