আড়িয়াল বিল: কুমড়ার প্রচুর ফলনেও চাষির আশাভঙ্গ, দাম অনেক কম

আড়িয়াল বিলে সাধারণত দুই রকমের মিষ্টি কুমড়া চাষ করেন কৃষকরা। একটি দেশি, অন্যটি হাইব্রিড। ছবি: স্টার

দেশের মধ্যাঞ্চলের মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বড় অংশজুড়ে বিস্তৃত আড়িয়াল বিলে এবার কুমড়ার প্রচুর ফলন হয়েছে। কিন্তু প্রত্যাশিত দাম না পেয়ে আশাভঙ্গ হয়েছে চাষির।

চাষিরা বলছেন, গত বছরও তারা প্রতি কেজি কুমড়া বিক্রি করেছেন ৩০ থেকে ৩২ টাকায়। এ বছর তা ১০ থেকে ১২ টাকায় নেমে এসেছে।

আড়িয়াল বিলের ২৬০ বর্গমাইল এলাকার ১ লাখ ৬৬ হাজার একর জমির পুরোটাই শস্যক্ষেত্র, জলাশয় আর জনবসতি। এখানে এক টুকরা জমিও অনাবাদি নয়। এই বিলের মাটি খুবই উর্বর হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে সবজি চাষ করেন কৃষক। এর মধ্যে বিভিন্ন জাতের মিষ্টি কুমড়া চাষের পরিমাণই বেশি।

এখন মাঘ মাসের মাঝামাঝি। বিলের পানি শুকিয়েছে বেশ আগেই। বিলের জমিতে কৃষকরা ধান চাষ করেছেন। এখানে রয়েছে ছোট-বড় অনেক পুকুর, খাল। এসব পুকুর ও খালপাড়কে স্থানীয়রা বলেন ডাঙা। এই ডাঙার পাড়েই কৃষকেরা চাষ করেছেন মিষ্টি কুমড়া।

আড়িয়াল বিলে সাধারণত দুই রকমের মিষ্টি কুমড়া চাষ করেন কৃষকরা। একটি দেশি, অন্যটি হাইব্রিড। চাষিদের ভাষ্য, দেশি কুমড়া আকারে বেশ বড় হয়। রঙও হয় বেশ সুন্দর। তবে এ জাতের কুমড়া ইঁদুর ও পোকার কারণে বেশি নষ্ট হয়। এ কারণে অনেক কৃষক হাইব্রিড জাতের কুমড়া চাষের দিকে ঝুঁকেছেন।

এখানকার চাষিরা বলছেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার কুমড়ার ফলন অনেক বেশি। কিন্তু প্রত্যাশিত দামের চেয়ে অনেক কম দামে তা বিক্রি করতে হচ্ছে।

চাষিরা বলছেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার কুমড়ার ফলন অনেক বেশি। কিন্তু প্রত্যাশিত দামের চেয়ে অনেক কম দামে তা বিক্রি করতে হচ্ছে। ছবি: স্টার

মুন্সীগঞ্জের শ্যামসিদ্ধি ইউনিয়নের গাদিঘাট এলাকার আবুল কাশেম অন্য অনেকের মতো এবারও মিষ্টি কুমড়া ফলিয়েছেন। হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, 'প্রতি কেজি কুমড়া এবার ১০-১২ টাকার বেশিতে বিক্রি করা যাচ্ছে না। গতবছরই এই কুমড়া বিক্রি করেছি ৩০-৩২ টাকায়। বাজারে অন্য সবজিরও দাম কম।'

আবুল কাশেম জানান, এ এলাকায় তার মতো হাজারচারেক কৃষক আছেন। তারা অন্য ফসলের পাশাপাশি কুমড়াও ফলান। তাদের সবারও প্রায় একই অবস্থা।

আরেক চাষি নুরুল হকের সঙ্গে কথা বলে কুমড়ার বীজ লাগানো থেকে শুরু করে পুরো উৎপাদনপ্রক্রিয়া ও বাজারজাতকরন সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া গেল। তিনি বলেন, 'বীজ লাগানোর পর থেকে নিয়মিত পানি-সার দেওয়ার পাশাপাশি অনেক পরিচর্যার কাজ করতে হয়। পরে পাকা কুমড়া বিলের ডাঙার পাড় থেকে শ্রমিক দিয়ে সংগ্রহ করে ঘাট পর্যন্ত আনতে হয়। এরপর পিকআপ বা ছোট ট্রাকে করে পাঠানো ঢাকার কারওয়ান বাজার ও মিরপুরে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই কাজে প্রতি ট্রাক কুমড়ায় খরচ হয় প্রায় ১৫ হাজার টাকার মতো। কিন্তু এবার কুমড়ার দাম এতটাই কমেছে যে উৎপাদন খরচই উঠছে না।

নুরুল হক বললেন, 'অনেক ক্ষেত্রে প্রতি কেজি কুমড়া ৮-১০ টাকায় বিক্রি করতেও বাধ্য হচ্ছি।

এবা কুমড়া চাষের মৌসুমে সারের দাম বেশি থাকায় উৎপাদন খরচও বেশি পড়েছে বলে জানান নুরুল হক। বলেন, 'এবার প্রতি বস্তা সার ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়েছে।'

আবার বিলের 'ডাঙা' থেকে কুমড়া তুলে তা ট্রাক কিংবা পিকআপ পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য যে শ্রমিকের খরচ সেটাও এবার বাড়তি বলে জানালেন কৃষক কামাল হোসেন। বলেন, 'শ্রমিকরা সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কাজ করেন। এই কাজে তাদের ৭০০ টাকা করে দিতে হয়।

কৃষক ইকবাল হোসেনের হিসাবে, এবার কুমড়া চাষে খরচ বেড়েছে দেড়গুণ। কিন্তু বিক্রি করতে হচ্ছে অর্ধেকেরও কম দামে। এবার আর লাভের মুখ দেখার সম্ভাবনা নেই।'

মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানালেন, এবার মুন্সীগঞ্জে ২২৫ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে। তার দাবি, প্রতি কেজি কুমড়া কৃষকরা বিক্রি করছেন ১৫-২০ টাকায়।

মুন্সীগঞ্জ কৃষি বিপনন কর্মকর্তা মো. সামির হোসাইন সিয়াম বলেন, 'কৃষকরা যেন ভালো দাম পান সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি যে কোন কোন জেলায় কুমড়ার চাহিদা বেশি। চাহিদা বেশি থাকলে সেসব জেলায় সরাসরি কুমড়া বাজারজাত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Pilots faked flying records

CAAB inquiry finds, regulator yet to take action

10h ago