দিলদারের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তিনি নিজেই

দিলদার। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাই সিনেমায় যুগে যুগে অনেক কৌতুক শিল্পীর আগমন ঘটেছে। দর্শকদের মাতিয়ে রাখতেন তারা। তবে বেশিরভাগ সিনিয়র কৌতুক শিল্পেই এখন বেঁচে নেই। তাদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন দিলদার। ঢাকাই সিনেমার কৌতুক সম্রাট ছিলেন তিনি। কেউ কেউ বলতেন, ঢাকাই সিনেমার হাসির রাজা। আবার কেউ বলতেন হাসির ফেরিওয়ালা।

জীবদ্দশায় পাঁচ শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন দিলদার। পেয়েছেন তারকাখ্যাতি। শাবানা, জসিম থেকে শুরু করে বেশিরভাগ তারকাদের সঙ্গে অভিনয় করে দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছেন। প্রয়াত সালমান শাহর সঙ্গেও একাধিক সিনেমা করেছেন তিনি।

'আব্দুল্লাহ' নামের একটি সিনেমায় নায়কও ছিলেন দিলদার। এই সিনেমা ব্যাপকভাবে ব্যবসা করে। নায়ক হিসেবেও তিনি দর্শকদের ভালোবাসা ও প্রশংসা অর্জন করেছেন। সেই সময় অনেকেই তাকে আব্দুল্লাহ বলে ডাকতেন।

আব্দুল্লাহ সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন তোজাম্মেল হক বকুল। তার নায়িকা ছিলেন নূতন।

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

দিলদারের চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে ১৯৭২ সালে। তখন তার বয়স ছিল ২০ বছর। প্রথম সিনেমার নাম 'কেন এমন হয়'। পরিচালক ছিলেন অমল বোস। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ঢালিউডের এই কমেডি কিংকে।

কৌতুক অভিনেতা হিসেবে দিলদার আলাদা একটা ইমেজ গড়ে তুলেছিলেন। তার তুলনা তিনি নিজেই। সিনেমা সংশ্লিষ্টরা বলতেন, তার সমকক্ষ কেউ ছিল না। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তিনি নিজেই। পর্দায় তার উপস্থিতি মানেই হলভর্তি দর্শকরা তুমুল করতালি দিতেন। বড়দের পাশাপাশি ছোটরাও তার ভক্ত ছিল।

ব্যক্তিজীবনে নানা আড্ডা ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে মানুষকে খুব হাসাতে পারতেন তিনি। তার মৃত্যুর পর ঢাকার সিনেমায় বড় একটা শূন্যতা দেখা দেয়। এই শূন্যতা এখনো অপূরণীয়।

স্ত্রী-কন্যার সঙ্গে কৌতুক অভিনেতা দিলদার। ছবি: সংগৃহীত

দিলদারের ব্যস্ততা ছিল উল্লেখ করার মতো। জনপ্রিয় নায়কদের চেয়ে তার ব্যস্ততা কম ছিল না। পরিচালকদের কাছে তার চাহিদাও ছিল বেশ। পরিচালকরা নায়ক-নায়িকা চূড়ান্ত করার পাশাপাশি কৌতুক অভিনেতা হিসেবে প্রথমেই দিলদারের নামটিও মাথায় রাখতেন। কেননা, তার উপস্থিতি মানেই দর্শকদের বাড়তি আগ্রহ।

অভিনয় দিয়ে মানুষকে হাসাতেন। নিজেও হাসতেন। ঢাকাই সিনেমায় অনেক কৌতুক অভিনেতা এসেছেন। কিন্তু তার অভাব অপূরণীয়। এখনো দর্শকরা তাকে মিস করেন। অনেকেই বলতেন, হাসির রাজা দিলদার। আবার  বলতেন, কৌতুক সম্রাট দিলদার।

টানা ৩৮ বছরের ক্যারিয়ার ছিল দিলদারের। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে শুধু অভিনয়ই করেছেন। যে কারণে মৃত্যুর পরও দর্শকরা তাকে মিস করেন।

দিলদার অভিনীত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সিনেমা হচ্ছে—বেদের মেয়ে জোছনা, স্বপ্নের পৃথিবী, বিক্ষোভ, অন্তরে অন্তরে, স্বপ্নের নায়ক, আনন্দ অশ্রু, গুন্ডা নাম্বার ওয়ান, শান্ত কেন মাস্তান, খাইরুন সুন্দরী, নসিমন, কন্যাদান, শুধু তুমি, প্রিয়জন, বাঁশিওয়ালা, গাড়িয়াল ভাই, প্রেম যমুনা, অচিন দেশের রাজকুমার, লাইলি মজনু এবং নাগ নাগিনী।

দিলদার
কৌতুক অভিনেতা দিলদার। ছবি: সংগৃহীত

দিলদারের স্ত্রীর নাম রোকেয়া বেগম। দুই কন্যা আছে তার। একজনের নাম মাসুমা আক্তার, অপরজনের নাম জিনিয়া আফরোজ। কমেডি কিং দিলদারের জন্ম ১৯৪৫ সালের ১৩ জানুয়ারি চাঁদপুরে।

২০০৩ সালের ১৩ জুলাই ৫৮ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ঢাকাই সিনেমার 'হাসির রাজা' দিলদার।

Comments

The Daily Star  | English

Next nat'l polls: BNP urges CA, CEC to disclose what they discussed

Ensuring free and fair polls is now the main responsibility of EC and govt, he says

1h ago