বিদেশে পড়াশোনা এবং পরিবার-পরিচিতজনদের প্রত্যাশার চাপ

বিদেশে পড়াশোনা ও পরিবারের চাপ
ছবি: সংগৃহীত

বহির্বিশ্বে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীরা সাধারণত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কলারশিপ কিংবা টিউশন খরচ ওয়েভ পেয়ে থাকেন। এরপর তাদের থাকা-খাওয়ার জন্য ফান্ডিং কিংবা খণ্ডকালীন চাকরি করতে হয়, যেটার আর্থিক মূল্য যৎসামান্য।

স্টেট বা শহরে ফান্ডিংয়ের পরিমাণ ভালো হলে হয়তো কিছুটা স্বস্তির। কিন্তু তারপরও পড়াশোনা, খণ্ডকালীন চাকরি মিলিয়ে একজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর স্বল্প আয়ে বেশ রুটিনমাফিক জীবন। তারপরও দেখা যায়, এই শিক্ষার্থীদের ওপর তাদের পরিবার, পরিচিতজনদের বেশ কিছু প্রত্যাশা থাকে যা অনেক সময় অস্বস্তিকর হতে পারে। সবচেয়ে প্রচলিত বিষয়টি হলো, প্রতি বছর দেশে আসার বাধ্যবাধকতা এবং পরিচিতদের জন্য তাদের পছন্দের উপহারসামগ্রী নিয়ে আসা।

প্রথমত, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্র বেশ দূরত্বে হওয়ায় এই যাত্রাপথের টিকিটের মূল্য অনেক বেশি। যে সময়গুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার শেষ হয় অর্থাৎ ছুটি শুরু হয়, তখন হয় সামার বা গ্রীষ্মের সময়, না হয় বড়দিনের শীতকালীন বন্ধ। বছরের এ দুটো সময়েই উড়োজাহাজের টিকিটের দাম আরও বেড়ে যায়। এই হিসেব ছাড়াও একজন শিক্ষার্থী যখন ১০-১৫ দিন কিংবা বড়জোর এক মাসের ছুটি নিয়ে আসেন, তখনও তাকে পুরো মাসের ডর্ম বা ঘর ভাড়াটা গুনতে হয়, যা একটি বাড়তি খরচ। আর যুক্তরাষ্ট্রসহ বহির্বিশ্বে বাসা ভাড়া দেওয়াই হয় লিজ হিসেবে। যত যাই হোক, এই ঘর ভাড়া সময়ের মধ্যে না দিলে উল্টো জরিমানা যুক্ত হতে থাকে।

এসবের পরেও থাকে একেকটি এয়ারলাইন্সের ওজন, নানা নিয়মকানুন মেনে বাক্সপেটরা গুছগাছ করা। একে তো লাগেজের ওজন সীমিত, কিন্তু দীর্ঘদিন পর দেশে যাওয়ার সময় আসলে প্রত্যেকেই কম-বেশি চেষ্টা করেন কিছু উপহার নিতে। কিন্তু পরিবার থেকে শুরু করে আত্মীয়, বন্ধু কিংবা সহকর্মী- এভাবে একের পর এক এই তালিকা বড় হতেই থাকে। অনেকের আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পছন্দের কোনো শিক্ষক, অফিসের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থাকতে পারেন এ তালিকায়। সবার জন্য পছন্দের বিষয়টি মাথায় রেখে সীমিত ফান্ডিং থেকে উপহার কেনাটাও কিন্তু শেষ মুহূর্তে বেশ ঝামেলার। আবার অনেক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরই ব্যক্তিগত গাড়ি থাকে না। তাই সময় মিলিয়ে বিভিন্ন দোকান ঘুরে যখন এই উপহারসামগ্রী কিনতে হয়, তখন আসলেই একটি ভালো সময়, পরিশ্রম যায় এর পেছনে।

কিন্তু এরপরেও পরিবার বা আত্মীয়দের মধ্যে অনেকেই থাকেন, যারা প্রত্যাশা রাখেন আরও বেশি। খুবই অযাচিত ঠেকে যখন দামি ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেট থেকে শুরু করে উপহারের নির্দিষ্ট তালিকা করে দেওয়া হয়। আমার নিজেকেই গ্রীষ্মকালীন সময়ে ফান্ডিং ছাড়া দুটো খণ্ডকালীন চাকরি করতে হয়েছে। সে সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় বাস বন্ধ থাকায় হাঁটতে হয়েছে প্রচুর। এরপর যখন উপহার হিসেবে কেউ আশা করে দামি গ্যাজেট কিংবা ব্র্যান্ডের জিনিসপাতি তখন বিষয়টা বেশ অস্বস্তির হয়ে দাঁড়ায়।

আরও একটি বিষয় প্রায়ই শুনতে হয়, প্রবাস থেকে কেউ কিছু পাঠাবেন, তাদের জিনিস দেশে নিয়ে আসা। একে তো বছর খানেক পর দেশে আসার সময় ব্যক্তি নিজেই হিমশিম খান কোনটা নেবেন আর কোনটা রেখে যাবেন। অনেককেই দেখতাম দেশে যাওয়ার আগে যেহেতু ডর্ম ছেড়ে যাচ্ছেন, তাদের পোশাক, ক্রোকারিজ কমিউনিটি রুমে রেখে যেতে। অনেকেই আবার ডোনেট করে দেন। এইসব জিনিসের মধ্যে হয়তো অনেক পছন্দের জিনিসও থাকে, যা ব্যক্তি অনেক শখ করে কিনেছিলেন কিংবা বেশ যত্ন করে রেখেছিলেন। কিন্তু ব্যাগের ওজন তো সীমিত। এরপরেও অনেকেই আবদার করে বসেন তাদের জিনিসপত্র বহন করতে হবে। কেউ কেউ এমন ভারী জিনিসপত্র ধরিয়ে দেন যে, তার ওজন হয়ে যায় কয়েক কেজি। আবার অনেকেই খাবার-দাবারও দিয়ে দেন, যা বহন করা বেশ ঝামেলার।

এই বিষয়গুলো আসলে আমাদের সচেতনভাবে এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। একে তো যার থেকে আমরা প্রত্যাশা করছি, সেই ব্যক্তি একজন শিক্ষার্থী। ওখানে তিনি কোনো চাকরি করছেন না, সুতরাং তার আয় বেশ সীমিত। এরপর নতুন একটা দেশে যারা পরিবার-পরিজন ছেড়ে একাই সব মানিয়ে নিচ্ছেন, তারও বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। হতে পারে সেটা সময়ের, ব্যক্তিগত যানবাহনের। তাই এ বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখেই আমাদের প্রত্যাশা রাখা উচিত।

নাদিয়া রহমান: সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কেন্টাকির সাবেক শিক্ষার্থী।

 

Comments

The Daily Star  | English

Scuffles in Los Angeles as soldiers sent by Trump fan out

Unrest broke out for a third day, with protesters angry at action by immigration officials that has resulted in dozens of arrests of what authorities say are illegal migrants and gang members

52m ago