ঢাকার অদূরে পদ্মার পাড়ে বসে তাজা ইলিশ খেতে চাইলে

ইলিশ মানেই বাঙালির আবেগ। আর সেই ইলিশ যদি হয় পদ্মার তাজা ধরা, সরিষার তেলে ঝাঁজালো করে ভাজা, তাহলে তো কথাই নেই। ঢাকার অদূরে, পদ্মা সেতুর কাছেই গড়ে উঠেছে এমনই এক পর্যটন কেন্দ্র মাওয়া ঘাট, যেখানে নদীতে চাঁদের ছায়া দেখতে দেখতে খেতে পারবেন গরম গরম ইলিশ ভাজা।
পদ্মার পাড়ে ইলিশের ঘ্রাণ
মাওয়া ঘাটে পৌঁছালেই কানে ভেসে আসে হাঁকডাক, 'ইলিশ আছে ভাই! টাটকা ইলিশ!' হোটেলগুলোর সামনে বড় একটা ট্রেতে সারি সারি আস্ত ইলিশ সাজানো, কিছু হয়তো ঘণ্টা খানেক আগেই ধরা পড়েছে জেলেদের জালে।
চাইলে মাছ নিজের চোখের সামনে বেছে নিতে পারবেন, সেই সঙ্গে করে নেবেন দরদাম। একবার বাছাই হয়ে গেলে টুকরো করে কেটে দেবে, পরিষ্কার করে দেবে, তারপর আপনার পছন্দ অনুযায়ী কড়া করে ভেজে পরিবেশন করবে গরম গরম ভাতের সঙ্গে।
শুধুই কি ইলিশ? ভাজা ইলিশের সঙ্গে যা যা মেলে তার মধ্যে রয়েছে বেগুন ভাজা, আলু ভর্তা, শুঁটকি ভর্তা, আর বিশেষভাবে পরিচিত ইলিশের লেজের ভর্তা। যারা একটু ব্যতিক্রমী স্বাদের খোঁজে থাকেন, তাদের জন্য রয়েছে সুস্বাদু ইলিশের ডিম ভাজা।
খরচাপাতি
মাওয়াঘাটে বেশকিছু দোকান, রেস্টুরেন্ট রয়েছে। বড় বড় চাকচিক্যময় রেস্টুরেন্ট যেমন রয়েছে, তেমনি খোলামেলা রেস্টুরেন্টও রয়েছে।

খাওয়ার খরচ জায়গাভেদে ও মাছের ওজনভেদে পরিবর্তিত হয়। বড় সাইজের ইলিশ নিজে বাছাই করে কিনতে চাইলে গুনতে হতে পারে ১১০০–১২০০ টাকা। সঙ্গে ভাত, ভর্তা, ভাজি—সব মিলিয়ে চার-পাঁচজনের একটি পরিবারের রাতের ভোজন সারতে গড়ে ২০০০–২৫০০ টাকা ধরে নিতে পারেন। আবার এর কমেও পাবেন। অন্যদিকে এসির হাওয়াসমেত বড় রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে গুনতে হবে আরও বেশি টাকা। তবে আমার মতে, খোলামেলা পরিবেশে নদীর হাওয়া খেতে খেতে ইলিশ খাওয়াই ভালো।
মাওয়া ঘাটে অবস্থিত নিরিবিলি হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী বলেন, 'আমাদের এখানে প্যাকেজ সিস্টেমেও খাবার পাওয়া যায়। চার-পাঁচ জনের টিম বা পরিবারের সদস্য হলে দুই থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যেই হয়ে যায়। এছাড়া ছোট-বড় সাইজ অনুযায়ীও ইলিশের টুকরা পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে আকার অনুযায়ী সাধারণত ১০০ টাকা পিছ পড়বে।'
পদ্মার সৌন্দর্য
মাওয়া ঘাটের পরিবেশটাই আলাদা। একদিকে পদ্মার নিরবধি ঢেউ, অন্যদিকে ধোঁয়া ওঠা ভাজা ইলিশের কড়া ঘ্রাণ। সোজা কথা—এটা শুধু খাওয়ার জায়গা নয়, এটা এক ধরনের নদীপাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জায়গায়ও। আর রয়েছে পদ্মা সেতুর জাঁকজমকপূর্ণ দৃশ্য। রাতের বেলায় সেতুর আলোকসজ্জা যেন পুরো ঘাটকেই রূপকথার শহরে পরিণত করে।
সাধারণত মাওয়া ঘাট সন্ধ্যার পর থেকে জমে ওঠে। বিশেষ করে শুক্র ও শনিবার রাতে ভীষণ ভিড় থাকে।

কীভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে মাওয়া ঘাটের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। আপনি চাইলে যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান বা সায়েদাবাদ থেকে ইলিশ, স্বাধীন, প্রচেষ্টা বাসে সরাসরি মাওয়ায় চলে যেতে পারেন। বাসভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৭০ থেকে ১০০ টাকা।
যদি নিজস্ব গাড়ি থাকে তবে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেস হাইওয়ের সুবাদে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যেতে পারবেন। এমনকি কেউ কেউ বাইক নিয়ে দল বেঁধে ভোজনভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন সন্ধ্যার পর।
বিশেষ সতর্কতা
১. সাধারণত মার্চ–এপ্রিল এবং অক্টোবর মাসে পদ্মায় ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। তাই মেনুতে ইলিশ পাবেন কি না আগে জেনে নেওয়া ভালো। যদিও ইলিশ না পেলেও অন্যান্য অনেক মাছ পাওয়া যায়।
২. মাওয়া গেলে বিকেলে যাওয়াই ভালো। আশেপাশে ঘুরে পদ্মার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্তই মূলত খাবারের উৎসব জমে উঠে। বিকেলে গিয়ে ঘুরে ফিরে রাতের খাওয়া সেরে ফিরতে পারেন।
৩. ইলিশ কেনার আগে অবশ্যই দরদাম করে নেবেন। পর্যটকরা প্রায়ই একটু বেশি দাম দিয়ে ফেলেন।
৪. চাইলে কাঁচা ইলিশ কিনে বাড়িও নিয়ে যেতে পারেন।
Comments