উচ্চশিক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাঙ্কিংই কি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ?

উচ্চশিক্ষা,
ছবি: সংগৃহীত

উচ্চশিক্ষার গন্তব্য ঠিক করার ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই আমরা চিন্তা করি বিশ্ববিদ্যালয়ের 'র‍্যাঙ্কিং' বা পরিচিতির দিকে। 'ভালো' বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেই মনে করা হয় ক্যারিয়ারে ভালো করা যাবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, উচ্চশিক্ষায় কি সব সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের মানই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ? নাকি আসল লক্ষ্য হওয়া উচিত গবেষণা এবং জ্ঞান অর্জনের পরিবেশ?

উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে এখনো একটা মানসিকতা রয়েছে—'নামী' বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়লে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা বলে, যে কাজটা আপনি ভালোবাসেন, যে বিষয়ে গভীরভাবে গবেষণা করতে চান, সেটাই আপনাকে এগিয়ে নেবে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নয়, নিজের আগ্রহ ও গবেষণার পরিবেশ বিচার করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ। একটি প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো, শিক্ষক-গবেষকের মান, একাডেমিক সংস্কৃতি এবং আন্তর্জাতিক সুযোগ-সুবিধা—সব কিছুই একজন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ গঠনে প্রভাব ফেলে। তবে শুধু নামী প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হলেই যে গবেষণার উপযুক্ত পরিবেশ পাওয়া যাবে, এমনটি নয়। অনেক সময় দেখা যায়, অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়েও নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে উচ্চমানের গবেষণা হয়, যেখানে একজন শিক্ষার্থী নিজের আগ্রহ ও দক্ষতা অনুযায়ী কাজ করতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয় বেশ পরিচিত হলেও যদি আপনার গবেষণার সুবিধা, সুপারভাইজারের আগ্রহ কিংবা ফান্ডিং না থাকে, তবে উচ্চশিক্ষার মূল উদ্দেশ্য—জ্ঞান অন্বেষণ ব্যাহত হতে পারে। বিশেষ করে যারা মাস্টার্স বা পিএইচডি করতে চান, তাদের জন্য সুপারভাইজার নির্বাচন, গবেষণার বিষয় এবং ল্যাবের কাজের পরিবেশ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

অনেক সময় এমনও দেখা যায়, একজন গবেষক খুব সাধারণ একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা করে ফেলেন, শুধু একটি ভালো সুপারভাইজার ও একাগ্র চেষ্টার ফলে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বিষয়গুলো বেশ সংবেদনশীল। কেননা পুরো ভিন্ন একটি সংস্কৃতি এবং পরিবেশ থেকে আসার কারণে সুপারভাইজরের সহযোগিতা বেশ প্রয়োজন। শুধু ক্লাসরুমেই নয়, এর বাইরেও মানসিক সুস্থতার জন্য সুপারভাইজর এমন ধরনের হওয়া উচিত, যিনি শিক্ষার্থীকে কাজটি শেখাবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীর সার্বিক সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কেও তিনি অবহিত থাকবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কেন্টাকিতে গবেষণা শুরু করার পর বুঝেছি, সত্যিকারের শেখা শুরু হয় আসলে শ্রেণিকক্ষের বাইরে। সুপারভাইজারের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা, প্রজেক্টে অংশ নেওয়া এবং নিজের হাতে কিছু তৈরি করার যে আনন্দ, এসব আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। এখানেই মূলত আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে বাইরের কারিকুলামের পার্থক্য। আমরা সাধারণত ক্লাসে 'লেকচার' এর ভিত্তিতে পাঠদানে অভ্যস্ত। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থী সংখ্যা কম হওয়ায়, একজন শিক্ষক সরাসরি তার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে আলোচনা করেন। গবেষণার যে তত্ত্বটি পড়ানো হলো, এর ব্যবহারিক প্রয়োগ সেখানে শেখানো হয়। আর এ সময় সুপারভাইজর যদি সহযোগিতা না করেন, সেটার প্রভাব পুরো সেমিস্টারের গ্রেডিংয়ের ওপর পড়ে।

এছাড়া গবেষণার ক্ষেত্রে ব্যক্তি উদ্যোগ একটি বড় বিষয়। নামী প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েও যদি নিজে থেকে কাজের প্রতি নিষ্ঠা না থাকে, তাহলে ফল আশানুরূপ নাও হতে পারে। এর বিপরীতে, গবেষণাকে যদি নিজের লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করা যায়, তাহলে মোটামুটি ভালো মানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকেও কাজে সফলতা সম্ভব।

তাই উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করতে গিয়ে শুধু র‍্যাঙ্কিং বা নাম দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেয়ে নিজের গবেষণার আগ্রহ, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও কাঙ্ক্ষিত বিষয়ের গবেষণার সুযোগ ও পরিবেশ যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়াই অধিক যুক্তিসঙ্গত। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান গুরুত্বপূর্ণ। তবে খেয়াল রাখা প্রয়োজন, গবেষণার মান ও পরিবেশই শেষ পর্যন্ত ভবিষ্যৎ গড়ে দেয়।

Comments

The Daily Star  | English

‘People's will, not mine’

Yunus tells Malaysia's Bernama why he stepped into Bangladesh's political hot seat

9h ago