১১ বছর শেষ, ৪৮ ঘণ্টা শেষ হবে কবে

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনি নিহত হওয়ার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে।
সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি। ছবি: সংগৃহীত

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত এত দীর্ঘ সময় ধরে চলছে যে তাদের হত্যাকারী কে বা কারা এবং কেন তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে, তা হয়তো আর কোনোদিন জানা যাবে না বলে ধারণা করা যেতে পারে।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন তৈরিতে বারবার ব্যর্থ হওয়ায় ঢাকার একটি আদালত গতকাল বৃহস্পতিবার অবিশ্বাস্যভাবে ১০১ বারের মতো প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা বাড়িয়েছে।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনি নিহত হওয়ার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে।

সেই ৪৮ ঘণ্টা ১১ বছরেও শেষ হয়নি এবং আরও দীর্ঘ হচ্ছে। এই ঘটনা আমাদের আইনি ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ উপহাস করছে।

২০১২ সাল থেকে সাংবাদিক ও মানবাধিকার আইনজীবীরা বারবার উত্তর চাইলেও পেয়েছেন কেবল প্রতিশ্রুতি আর সময়সীমা।

নিহত এই দম্পতির পরিবারের হতাশ সদস্যরা এখন বিশ্বাস করেন, সরকার এই মামলার সমাধান চায় না, কিংবা আন্তরিক না।

সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া যে অযৌক্তিকভাবে বিলম্বিত হচ্ছে, তাতে কি ওই পরিবারকে এমন চিন্তা করার জন্য দায়ী করা যায়?

সাগর-রুনি হত্যার বিচার দাবি জানাতে জানাতে আমরাও ক্লান্ত। এ বিষয়ে আমরা কিছুই করতে পারছি না। কিন্তু, কিছু প্রশ্ন এখানে চলেই আসে। র‌্যাব কি এই মামলা তদন্তে যথেষ্ট সক্ষম নয়? এই সংস্থা না পারলে অন্য কোনো সংস্থার কাছে তদন্তভার দেওয়া হচ্ছে না কেন? সরকার যদি সত্যিই এই রহস্যের সমাধান চায়, তাহলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া ফাস্ট-ট্র্যাক করার জন্য কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে?

সাগর-রুনি হত্যা তদন্তে সেই কথাটিই পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, বিচার বিলম্বিত হওয়ার অর্থ ন্যায়বিচার অস্বীকার করা।

সার্বিক প্রক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে, এই মামলায় বিচার অধরাই থেকে যেতে পারে। গত এক দশকে সাংবাদিকদের হয়রানি ও নির্যাতনের মামলাগুলো যেভাবে পরিচালনা করা হয়েছে, তাতেও কেবল এই উদ্বেগ বেড়েছে।

এভাবে জবাবদিহিতার অভাব থাকলে মুক্ত গণমাধ্যমের শত্রুরা কেবলই উৎসাহিত হবে। যেমন: সম্প্রতি জামালপুরে সাংবাদিককে গোলাম রব্বানী নাদিমকে পিটিয়ে হত্যা করেছে এক ইউপি চেয়ারম্যান।

এই প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। সাংবাদিক ও সাংবাদিকতাকে রক্ষা করতে হবে। সাগর-রুনি হত্যা মামলার বিষয়ে আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাই, সঠিকভাবে এবং দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হোক এবং নিহতের পরিবারকে তাদের প্রাপ্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হোক।

Comments