Skip to main content
ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩  //  বুধবার
E-paper English
T
আজকের সংবাদ
‘আইএমএফের ঋণ অনুমোদন প্রমাণ করে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির ভিত্তি মজবুত’ ভুল তথ্যের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বিভাগের ডেপুটি গভর্নরকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি মাথা থেকে ধোঁয়া বের হওয়ার প্রকৃত কারণ যা জানা গেল এরশাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা ও বিদ্রোহ করে নির্বাচনে অংশ নিই: মুজিবুল হক ‘জোড়া যমজ’ নূহা-নাবার প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার সফল চার্লসের বিস্ফোরক সেঞ্চুরিতে রেকর্ড গড়ে প্লে অফে কুমিল্লা   ‘জনগণের টাকা লুট করতেই সরকার বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে’  বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে আগ্রহ দেখিয়েছে সার্বিয়া: পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিখোঁজের ৬ দিন পর শীতলক্ষ্যা থেকে স্কুলশিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার ‘মাশরাফি-তামিম-সাকিব বলেছে, হাথুরুসিংহে এলে খুবই ভালো’ বাংলাদেশে ৫০ বছর: বিশ্ব ব্যাংকের সফলতার বয়ান কতটা বিশ্বাসযোগ্য? ইসির সেই জয়নাল এবার জন্মনিবন্ধন সনদ জালিয়াতিতে হাথুরুসিংহের একাধিক সহকারি খুঁজছে বিসিবি যুক্তরাষ্ট্রে গ্রামীণ আমেরিকার বিনিয়োগ ৩০০ কোটি ডলার ছাড়াল
The Daily Star Bangla
সাহসিকতা • সততা • সাংবাদিকতা
  • E-paper
  • English
আজকের সংবাদ
‘আইএমএফের ঋণ অনুমোদন প্রমাণ করে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির ভিত্তি মজবুত’ ভুল তথ্যের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বিভাগের ডেপুটি গভর্নরকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি মাথা থেকে ধোঁয়া বের হওয়ার প্রকৃত কারণ যা জানা গেল এরশাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা ও বিদ্রোহ করে নির্বাচনে অংশ নিই: মুজিবুল হক ‘জোড়া যমজ’ নূহা-নাবার প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার সফল চার্লসের বিস্ফোরক সেঞ্চুরিতে রেকর্ড গড়ে প্লে অফে কুমিল্লা   ‘জনগণের টাকা লুট করতেই সরকার বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে’  বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে আগ্রহ দেখিয়েছে সার্বিয়া: পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিখোঁজের ৬ দিন পর শীতলক্ষ্যা থেকে স্কুলশিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার ‘মাশরাফি-তামিম-সাকিব বলেছে, হাথুরুসিংহে এলে খুবই ভালো’ বাংলাদেশে ৫০ বছর: বিশ্ব ব্যাংকের সফলতার বয়ান কতটা বিশ্বাসযোগ্য? ইসির সেই জয়নাল এবার জন্মনিবন্ধন সনদ জালিয়াতিতে হাথুরুসিংহের একাধিক সহকারি খুঁজছে বিসিবি যুক্তরাষ্ট্রে গ্রামীণ আমেরিকার বিনিয়োগ ৩০০ কোটি ডলার ছাড়াল
The Daily Star Bangla
বুধবার, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩ | সাহসিকতা • সততা • সাংবাদিকতা
  • হোম
  • সংবাদ
    • বাংলাদেশ
    • এশিয়া
    • বিশ্ব
  • মতামত
    • সম্পাদকীয়
    • অভিমত
    • সংবাদ বিশ্লেষণ
  • করোনাভাইরাস
  • খেলা
    • ক্রিকেট
    • ফুটবল
    • অন্যান্য খেলা
  • বাণিজ্য
    • অর্থনীতি
    • বিশ্ব অর্থনীতি
    • সংগঠন সংবাদ
  • বিনোদন
    • টিভি ও সিনেমা
    • মঞ্চ ও সংগীত
    • অন্যান্য
  • জীবনযাপন
    • ফ্যাশন ও সৌন্দর্য
    • খাদ্য ও সুস্থতা
    • ভ্রমণ
  • সাহিত্য
    • সংস্কৃতি
    • শিল্প
    • ইতিহাস-ঐতিহ্য
  • তারুণ্য
    • শিক্ষা
    • ক্যারিয়ার
    • তারুণ্যের জয়
  • প্রযুক্তি ও স্টার্টআপ
    • বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, গেজেটস
    • স্টার্টআপ
    • অটোমোবাইল
  • পরিবেশ
    • জলবায়ু পরিবর্তন
    • প্রাকৃতিক সম্পদ
    • দূষণ
  • প্রবাসে
    • অভিবাসন
    • পরবাস
    • যাওয়া-আসা
English T
  • হোম
  • সংবাদ
    • বাংলাদেশ
    • এশিয়া
    • বিশ্ব
  • মতামত
    • সম্পাদকীয়
    • অভিমত
    • সংবাদ বিশ্লেষণ
  • করোনাভাইরাস
  • খেলা
    • ক্রিকেট
    • ফুটবল
    • অন্যান্য খেলা
  • বাণিজ্য
    • অর্থনীতি
    • বিশ্ব অর্থনীতি
    • সংগঠন সংবাদ
  • বিনোদন
    • টিভি ও সিনেমা
    • মঞ্চ ও সংগীত
    • অন্যান্য
  • জীবনযাপন
    • ফ্যাশন ও সৌন্দর্য
    • খাদ্য ও সুস্থতা
    • ভ্রমণ
  • সাহিত্য
    • সংস্কৃতি
    • শিল্প
    • ইতিহাস-ঐতিহ্য
  • তারুণ্য
    • শিক্ষা
    • ক্যারিয়ার
    • তারুণ্যের জয়
  • প্রযুক্তি ও স্টার্টআপ
    • বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, গেজেটস
    • স্টার্টআপ
    • অটোমোবাইল
  • পরিবেশ
    • জলবায়ু পরিবর্তন
    • প্রাকৃতিক সম্পদ
    • দূষণ
  • প্রবাসে
    • অভিবাসন
    • পরবাস
    • যাওয়া-আসা

  • ABOUT US
  • CONTACT US
  • SMS SUBSCRIPTION
  • ADVERTISEMENT
  • APPS
  • NEWSLETTER
মতামত

‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ নদী হত্যা কতটা ‘স্মার্ট’

মাহফুজ আনাম
শুক্রবার, জানুয়ারি ২০, ২০২৩ ১১:১৮ পূর্বাহ্ন

মুঘল সাম্রাজ্যের বাংলা মহকুমার রাজধানী হিসেবে বুড়িগঙ্গার তীরের শহর ঢাকাকে বেছে নেওয়া হয় ১৬১০ সালে। কালের পরিক্রমায় আধুনিক যুগে প্রবেশ করলাম, ঢাকা সম্প্রসারিত হলো এবং অনুধাবন করলাম, অন্যান্য শহরের তুলনায় আমরা ৪ গুণ বেশি ভাগ্যবান। কারণ, বৃহত্তর ঢাকাকে ঘিরে রয়েছে ৩ নদী— তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা। টঙ্গী খালকেও যদি এর মধ্যে ধরি, তাহলে এ যেন পঞ্চনদীর এক কণ্ঠহার।

একমাত্র না হলেও নিঃসন্দেহে বিশ্বের অল্প কয়েকটি 'মিঠা পানির দ্বীপের' মধ্যে অন্যতম ঢাকা। প্রতি বছরের মৌসুমি বৃষ্টিতে এ শহর পুনরুজ্জীবিত হতো। এই শহরের ভূগর্ভস্থ পানির সঞ্চয় প্রায় সবসময়ই ভরপুর থাকত। ভূগর্ভস্থ পানির যতটা ব্যবহার হতো, তারচেয়ে অনেক বেশি বর্ষায় আবার ভরে যেত।

সর্বশেষ খবর দ্য ডেইলি স্টার বাংলার গুগল নিউজ চ্যানেলে।

আমাদের দেহের শিরা-উপশিরার মতো ২০০ খাল, শত শত লেক, হাজারো পুকুরসহ অসংখ্য জলাশয় ছিল ঢাকার মিঠা পানি উৎস। বলা যায়, এসব জলাশয় মিঠা পানির দিক থেকে ঢাকাকে বিশ্বের অন্যতম প্রাচুর্য্যবান শহর করে রেখেছিল। বিশ্বের খুব কম সংস্কৃতিতেই আমাদের মতো পানি, নদ-নদী ও বৃষ্টি নিয়ে সাহিত্য, গান, কবিতা, নাচ, বিশেষ রান্না, উৎসব ও সার্বিকভাবে জীবনের সব ক্ষেত্রে উদযাপন করা হয়।

তবে সবই এখন বদলে গেছে। আমরা যেন প্রতিহিংসা আর হিংস্রতার বশে একের পর এক জলাশয়গুলোকে ধ্বংস করে ফেলেছি। যা কিনা আত্মহত্যারই শামিল। আমাদের তথাকথিত উন্নয়নের মানসিকতায় কংক্রিটের অবকাঠামো ছাড়া আর কোনো কিছুরই মূল্য নেই। প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়েও আমাদের কোনো মাথাব্যথাই নেই, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পানি। অপব্যবহার, অতি ব্যবহার, যথেচ্ছ অপচয় ও অবিবেচকের মতো দূষিত করে চলেছি এই সম্পদ।

ঢাকার নদীগুলোর মধ্যে বুড়িগঙ্গা এত বেশি দূষিত হয়ে গেছে যে, সেখানে কোনো জলজ প্রাণীর জীবন বাঁচানো দায়। এই নদীর তলদেশে মিটারের পর মিটার প্লাস্টিক বর্জ্যের স্তর জমেছে। সবমিলিয়ে একে বড়সড় নর্দমা ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। এক বিশেষজ্ঞ ঠাট্টার ছলে বলেছিলেন, বুড়িগঙ্গার পানি এত বেশি বিষাক্ত এবং এতে এত বেশি প্রাণঘাতী রাসায়নিক রয়েছে যে, রোগ-জীবাণুও সেখানে বাঁচতে পারবে না।

শিল্প-কারখানা ও বাসাবাড়ির রাসায়নিক ও অন্যান্য বর্জ্যে তুরাগ ও বালু নদী মৃত্যুর দোরগোড়ায়। টঙ্গী খাল চলে যাচ্ছে লোকচক্ষুর অন্তরালে। এই নদীর চারপাশে যেন মাটি নয়, রয়েছে 'স্বর্ণ'। শীতলক্ষ্যা প্রাণপণে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছে, কিন্তু তা শোনার কেউ নেই।

আমাদের পরিবেশ অধিদপ্তর সেই ২০০৯ সালে 'বাস্তুসংকটাপন্ন এলাকা' হিসেবে ঘোষণা করে এই ৪ নদীকে বাঁচাতে জরুরি উদ্যোগ নেওয়ার বার্তা দিয়েছে। এ যেন প্রকৃতি ও আমাদের ভবিষ্যতের সঙ্গে নিদারুণ উপহাস যে গত ১৩ বছরেও এ বিষয়ে কিছুই করা হয়নি। বরং, সরকারের অনুমোদন নিয়েই নদী দূষণ চলছে।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের ২০২১ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালু নদীতে যথাক্রমে ২৫৮, ২৬৯ ও ১০৪টি পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন হাজারো টন বিষাক্ত রাসায়নিক উপকরণ ও গৃহস্থালি বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এগুলোই নদী ৩টির মৃত্যু ডেকে আনছে।

এ ছাড়া, হাজারো লঞ্চ, স্টিমার ও মালবাহী নৌযান থেকে হাজারো টন ব্যবহৃত ইঞ্জিন ওয়েল ও অন্যান্য বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে। এর ওপর কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই এবং এ নিয়ে কেউ চিন্তিতও না।

বৃহত্তর ঢাকা যত বেশি বাংলাদেশের উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তিতে পরিণত হয়েছে—২০২১ সালে বিআইডিএসের সম্মেলনে জমা দেওয়া এডিবির সমীক্ষা অনুযায়ী, বাংলাদেশের জিডিপির ৪০ শতাংশেরও বেশি আসে ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকা থেকে—ততবেশি নির্বিচারে গাছ কাটা, খাল ভরাট ও সবচেয়ে মর্মান্তিকভাবে জলজ সম্পদ ধ্বংসের মাধ্যমে এর প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের অবনতি হয়েছে।

প্রতিটি সরকারের উদ্বেগহীনতা, সমস্যার গভীরতা অনুধাবনের অভাব ও অতি মূল্যবান সম্পদ নদী ব্যবস্থাপনায় দূরদর্শিতার সীমাবদ্ধতা সুস্পষ্টভাবে দেখিয়ে দেয় একটি বিশেষ প্রকল্প।

প্রকল্পটি হচ্ছে, হাজারীবাগ থেকে ট্যানারিগুলো সাভারে স্থানান্তর। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল বুড়িগঙ্গায় বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা। কিন্তু বাস্তবে তা পর্যবসিত হলো সাভারের জিয়নকাঠি ধলেশ্বরী নদীকে 'মৃত্যুদণ্ড' দেওয়ায়। বুড়িগঙ্গার বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া না হলেও ধলেশ্বরীর ভারসাম্য ধ্বংসে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

১৯৪০ সালে ব্রিটিশ রাজত্বের সময় ঢাকায় প্রথম ট্যানারি স্থাপিত হয়। ২৩ বছর পাকিস্তানের শাসনের পর ১৯৭১ সালে আমরা যখন স্বাধীনতা অর্জন করি, তখন ঢাকায় ২৭০টি ট্যানারি ছিল। এর বেশিরভাগই ছিল বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে হাজারীবাগে। এসব ট্যানারির বর্জ্য ফেলা হতো এই নদীতেই।

২০০০ সালের মধ্যেই এই দূষণ এত বেশি হয়ে যায় যে জনগণ, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজ নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রতিবাদ জানাতে থাকে এবং হাইকোর্টের রায়ের পর সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে বাধ্য হয়ে 'সাভার ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট (এসটিআইই)' নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। এই প্রকল্পের জন্য খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ২০০ একর জমি কেনা হয়। তবে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই যে জমি কেনার পরই এ বিষয়ে তৎপরতায় ঘাটতি পড়ে।

এরপর আবার ২০০৩ সালে ১৭৫ কোটি টাকার বাজেট নিয়ে কাজ শুরু করে ২০১৬ সালে ১ হাজার ৭৮ কোটি খরচ করার পরও এই প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের (ইটিপি) কাজ অসমাপ্ত থেকে যায়। তারপরও ২০১৭ সালে আদালতের নির্দেশ ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কারণে ১৫৪টি ট্যানারি সাভারে চলে আসে এবং তাদের বিষাক্ত ও রাসায়নিক বর্জ্যে দূষণ হতে থাকে ধলেশ্বরী, ধ্বংস হতে থাকে এর বাস্তুতন্ত্র। ইতোমধ্যে ধলেশ্বরী নদীর আশেপাশের বাসিন্দারা নানান স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছেন। বলাই বাহুল্য, স্থানীয় জেলে ও নদীকেন্দ্রিক জীবিকা নির্বাহকারীরা নিশ্চিহ্ন প্রায়।

বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ৪ ধরনের নদী দূষণকারী উপাদান রয়েছে। এগুলো হলো: গৃহস্থালির তরল বর্জ্য (পয়ঃনিষ্কাশনসহ), শিল্প-কারখানার এফ্লুয়েন্ট (প্রায় ১০ হাজার শিল্প-কারখানা প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত বর্জ্য নদীতে ফেলে), জৈব রাসায়নিক বর্জ্য (হাসপাতাল, গবেষণাগার ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান থেকে উৎপাদিত) এবং নদী দখলের সঙ্গে সম্পর্কিত দূষণ উপকরণ।

দেশের বাকি অংশের চিত্রও খুব একটা ভিন্ন নয়। এক সময় আমাদের প্রবহমান নদী ছিল ৭০০। বর্তমানে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, সারা বছর প্রবাহিত হয় এমন ২৩০ নদী রয়েছে এবং ৩১০ থেকে ৪০৫টি নদী প্রবাহিত হয় শুধু বর্ষায়। কেবল মৌসুমে প্রবহমান থাকা এই নদীগুলো একে একে নদী দখলকারী এবং সরকারি প্রকল্পের দখলে চলে যাচ্ছে। এমনকি, প্রবহমান নদীগুলোরও উল্লেখযোগ্য অংশ স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশে দখল হয়ে যাচ্ছে।

২০১৬ সালে আমাদের নদ-নদীর পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশিত পরিবেশ অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৯টি নদী বড় আকারে দূষণের শিকার এবং এগুলোতে জলজ প্রাণের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। ২০২১ সালে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন দেশের নদী দখলকারী ৬৩ হাজার জনের একটি তালিকা প্রকাশ করে।

একদিকে আমরা নদীগুলোকে দূষিত করে ভূপৃষ্ঠের ওপরের পানি ব্যবহারের অনুপযোগী করে তুলছি, অপরদিকে কৃষি, গৃহস্থালি ও শিল্পখাতে ব্যবহারের জন্য মাত্রাতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। এখানেই দেখা যাচ্ছে ভয়াবহ চিত্র।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও ঢাকা ওয়াসার যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এক সমীক্ষা মতে, দেশের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছর ২ থেকে ৩ মিটার করে কমছে। এর জন্য দায়ী অতিমাত্রায় পানি উত্তোলন ও বৃষ্টির মাধ্যমে ভূগর্ভে পর্যাপ্ত পানি পুনরায় না ভরা। পানির স্তর কমে যাওয়ার হার ২০৩০ সাল নাগাদ বছরে ৫ মিটারে পৌঁছাতে পারে। এডিবির জ্যেষ্ঠ নগর বিশেষজ্ঞ মোমোকো তাদা ২০২১ সালে এক নিবন্ধে সতর্ক করেন, 'ভূগর্ভস্থ পানি কমে যাওয়ার পরিণামে বড় ধরনের ভূমিধস হতে পারে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যোগ হয়ে অনেক জায়গায় বন্যার প্রকোপ দেখা দিতে পারে। এর সঙ্গে ঢাকার বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য নিরাপদ পানির উৎসের ভয়াবহ স্বল্পতা তো রয়েছেই।'

ঢাকা যে কতটা বিপদে রয়েছে, তার একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরতে দেখা যেতে পারে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) ২০২২ সালের একটি প্রতিবেদন। এতে বলা হয়, খুলনা ও বরিশালের ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের গভীরতা যথাক্রমে ১ দশমিক ৫৬ মিটার ও ২ দশমিক ৯ মিটার। অপরদিকে, ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় পানির স্তরের গড় গভীরতা ৬৫ দশমিক ৯২ মিটার, যা প্রায় ২০তলা ভবনের সমান। এ থেকে বোঝা যায়, আমরা ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির কতটা এরই মধ্যে শেষ করে ফেলেছি। এই স্তর কেবল নিচেই নামছে। বর্তমানে ওয়াসার সরবরাহ করা পানির ৬৭ শতাংশই ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে আসে।

এই চিত্র তো শুধু ঢাকা শহরের। বিশ্বব্যাংকের ২০২১ সালের এক প্রতিবেদন মতে, শুষ্ক মৌসুমে সারা দেশের কৃষক প্রায় ৩২ ঘনকিলোমিটার পানি ব্যবহার করেন। এই পরিমাণ পানি দিয়ে পুরো দেশের ওপর একটি ৩তলা 'পানির দালান' নির্মাণ করা যাবে।

৭০ ও ৮০'র দশকের শুরুর দিকে মাটির নিচ থেকে বেশি পানি তোলার পেছনে যুক্তি ছিল বাড়তি খাদ্য উৎপাদন এবং একইসঙ্গে ডায়রিয়া প্রতিরোধ করা, যা ছিল শিশুমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। এখন আমরা মাটির নিচের পানি এমনভাবে ব্যবহার করছি, যেন এই উৎস অসীম। শিল্পখাতের নিরবচ্ছিন্ন প্রবৃদ্ধির অজুহাতে মাটির ওপরের পানিও একইভাবে নির্বিচারে এবং কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই দূষিত করছি।

বিশ্ব ব্যাংকের ২০১৮ সালের দেশভিত্তিক পরিবেশ বিশ্লেষণ প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি বছর আমরা নদী দূষণের কারণে ২ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার হারাচ্ছি। আগামী ২০ বছরে এই পরিমাণ বেড়ে ৫১ বিলিয়ন হবে। সময় এসেছে জরুরিভিত্তিতে মাটির ওপরের ও নিচের পানির ব্যবহারের দিকে নজর দেওয়ার।

কেন আমরা বিষয়টিকে অবহেলা করছি, কেন আমরা মাটির ওপরের মূল্যবান পানির উৎসগুলোকে ধ্বংস করছি? নদী শুধু পানির উৎস নয়, এটা জীবন।

যে পানি জমা হতে লাখো বছর লেগেছে, সেই ভূগর্ভস্থ পানি অতিমাত্রায় উত্তোলন করা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছ থেকে পানি চুরি করে নেওয়া ছাড়া আর কিছুই না। উন্নয়ন করতে গিয়ে যদি জীবনধারণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানই ধ্বংস করে ফেলা হয়, তাহলে সেই উন্নয়নের মূল্য এক কানাকড়িও নয়।

মুঘল সম্রাটদের মধ্যে সেরা ছিলেন আকবর। তিনি অসংখ্য বিষয়ে চূড়ান্ত সাফল্যের নিদর্শন রাখলেও একটি মারাত্মক ভুল করে বসেন। ফতেহপুর সিকরিকে (বিজয়ের শহর) রাজধানী (১৫৭১-৭৩) করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ১০ বছরের মাথায় এই সিদ্ধান্ত থেকে তিনি সরে আসতে বাধ্য হন। কারণে ওই শহরে পানি শেষ হয়ে গিয়েছিল। ঢাকার মতো আধুনিক শহরকে হয়তো পরিত্যক্ত করার প্রয়োজন হবে না, কারণ প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা দূরদূরান্ত থেকে পানি আনতে পারি। কিন্তু তাই বলে কি আমাদের যা আছে সেগুলোকে ধ্বংস করব? সার্বিক বিবেচনায় পানি একটি সীমিত সম্পদ এবং অনেক শহর ও লোকালয় ইতোমধ্যে পানির স্বল্পতায় কষ্ট ভোগ করছে। পানির এই কষ্ট যে কেবল শুষ্ক মৌসুমে হচ্ছে, তা কিন্তু নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিস্থিতি দিনে দিনে আরও খারাপ হবে।

মাহফুজ আনাম, সম্পাদক ও প্রকাশক, দ্য ডেইলি স্টার

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Related topic
নদী / নদী দূষণ / নদী হত্যা / মতামত / মাহফুজ আনাম / স্মার্ট বাংলাদেশ
Apple Google
Click to comment

Comments

Comments Policy

Related News

৩ দিন আগে | পরিবেশ

সুন্দরবনের ৩ নদীতে মাইক্রোপ্লাস্টিক: ঝুঁকিতে মাছ ও মানুষ

৩ মাস আগে | আলোকচিত্র

‘এই নদী শব্দ ক’রে হৃদয়ে বিস্ময় আনিতে পারে না আর’

৫ মাস আগে | অভিমত

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীর জন্য বিব্রতকর

দূষণ
৪ মাস আগে | দূষণ

‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দায়িত্বহীনতা ও অবহেলার কারণেই নদী দূষণ’

The Daily Star  | English
Now|Energy

Retail power price hiked again, within a month

The government yesterday increased the electricity price by another 5 percent at the retail level, 19 days after a similar increase.

1h ago|Southeast Asia

Myanmar slapped with fresh sanctions on eve of coup anniversary

The Daily Star
Follow Us
  • ABOUT US
  • CONTACT US
  • SMS SUBSCRIPTION
  • ADVERTISEMENT
  • APPS
  • NEWSLETTER
© 2023 thedailystar.net | Powered by: RSI LAB
Copyright: Any unauthorized use or reproduction of The Daily Star content for commercial purposes is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.