এত রাজনৈতিক দল কী করবে?

দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম সম্প্রতি তার কলামে সদ্য গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) ইঙ্গিত করে প্রশ্ন রেখেছেন, নতুন দল কি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির সূচনা করবে?
তিনি লিখেছেন, 'বাংলাদেশে একটি নতুন রাজনৈতিক দল প্রয়োজন, যেটি তারুণ্যের শক্তিতে ভরপুর, দেশপ্রেমে উজ্জীবিত এবং গরিব ও নিপীড়িত মানুষকে সত্যিকারেই ভালোবাসবে। এমন একটি দল প্রয়োজন, যারা অত্যাচার ও শোষণের শৃঙ্খল মুক্ত ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন দেখবে। এমন একটি দল দরকার, যারা আমাদের সামনে এগিয়ে নেবে, পিছনে নয়। দীর্ঘদিন ধরে আমরা এমন রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের শাসনে আছি, যাদের একমাত্র লক্ষ্য ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থরক্ষা। আমাদের দরকার একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক দল—যারা সবার অধিকার ও জনগণের সমৃদ্ধির জন্য কাজ করবে।'
তার ভাষায়, এই দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরাই, যারা আমাদেরকে মুক্ত করেছে দুর্নীতিগ্রস্ত স্বৈরাচারের কবল থেকে। তারা দল নিয়ে কতটা সফল হতে পারবে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। সেইসঙ্গে তিনি এনসিপির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান এবং এরপরে একটি পাঁচতারকা হোটেলে জমকালো ইফতারের প্রসঙ্গ টেনে দলের আর্থিক বিষয়গুলোতে স্বচ্ছতা বজায় রাখারও আহ্বান জানান।
প্রসঙ্গত, গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে জাতীয় নাগরিক পার্টি ছাড়া আরও অনেকগুলো দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ইত্তেফাকের একটি সংবাদ শিরোনাম—ছয় মাসে ১৬টি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ। এনসিপির আত্মপ্রকাশের পাঁচদিন আগে প্রকাশিত এই খবরে বলা হয়, এই ১৬টি দলের মধ্যে ১১টি দল আত্মপ্রকাশ করেছে গত বছর, আর চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে আরও পাঁচটি।
জাতীয় নাগরিক পার্টি
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গত আট মাসে গড়ে ওঠা দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। কেননা এই দলটি গড়ে উঠেছে জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং এরপর গড়ে ওঠা জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে। এনসিপির আত্মপ্রকাশের আগে থেকেই গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় এই দলটিকে নিয়ে যে পরিমাণ আগ্রহ, উদ্দীপনা, আলোচনা ও সমালোচনা হয়েছে বাংলাদেশের আর কোনো রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের ক্ষেত্রে এরকম ঘটনা ঘটেনি। এই সময়কালে গড়ে ওঠা আর কোনো দল এতটা আলোড়ন তৈরি করতে পারেনি।
জনতার দল
রাজনীতি সচেতন মানুষের কিছুটা দৃষ্টি কেড়েছে সাবেক কিছু সেনা কর্মকর্তাকে নিয়ে গঠিত 'জনতার দল'। এই দলের চেয়ারপারসন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. শামীম কামাল। আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি তার বক্তব্যে বলেন, 'আমরা বাম বা ডান দিকে তাকাব না। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করা আমাদের লক্ষ্য নয়। আমরা ইতিহাসের অমীমাংসিত বিষয়গুলোতে যুক্ত হব না, আমরা সামনের দিকে তাকাতে চাই।'
তার এই কথাগুলোর পেছনে কিছু কারণ আছে।
গত ৫ আগস্টের পর থেকে দেশের রাজনীতিতে ডানপন্থার উত্থান (কোথাও কোথাও উগ্রপন্থা) নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। বিভিন্ন ঘটনায় দেশে সক্রিয় ইসলামপন্থি দল ও সংগঠনগুলো অনেক বেশি সোচ্চার হয়েছে। এর একটি কারণ হতে পারে এই যে, বিগত বছরগুলোয় তারা কোণঠাসা ছিল। ফলে আওয়ামী লীগের পতনের পরে তারা তাদের পুঞ্জীভূত রাগ ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে নানাভাবে। কিন্তু বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক দলের ভোট ও জনপ্রিয়তা কেমন তা নিয়ে যেহেতু প্রশ্ন আছে এবং বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ হলেও তাদের অধিকাংশই যেহেতু কট্টরপন্থা সমর্থন করে না; বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোও যেহেতু বাংলাদেশে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি, পারছে না বা পারার সম্ভাবনাও ক্ষীণ—এরকম বাস্তবতায় বাম-ডানে না তাকিয়ে মধ্যপন্থার কথা বলছে 'জনতার দল'।
ইতিহাসের অমীমাংসিত বিষয়গুলোতে তাদের যুক্ত না হওয়ার ঘোষণারও একটি প্রেক্ষাপট রয়েছে। সেটি হলো, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে অনেক ঘটনায় মনে হয়েছে যে, সরকার সমর্থিত এক ও একাধিক গোষ্ঠী বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭১, বঙ্গবন্ধু, বাহাত্তরের সংবিধান নিয়ে একধরনের নতুন বয়ান হাজির করেছে। স্বাধীনতার ঘোষক ইস্যুটাও নতুন করে সামনে এসেছে। কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এসব বাস্তবতায় 'জনতার দল' হয়তো এইসব ইস্যুর ভেতরে না ঢুকে একটি মধ্যবর্তী অবস্থানে থাকতে চায়।
এই সময়কালে গঠিত সবচেয়ে আলোচিত দল এনসিপিও শুরু থেকে বলছে, তারাও ডানে-বামে না গিয়ে মধ্যপন্থি রাজনৈতিক দল হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। কিন্তু তাদের দলের অনেক কর্মকাণ্ড এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্বে যারা আছেন তাদের অতীত রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে অনেকে মনে করছেন, এই দলটির পক্ষে শেষ পর্যন্ত মধ্যপন্থি চরিত্র ধরে রাখা কঠিন হবে। তারা হয়তো ডানঘেঁষা দল হিসেবেই বিকশিত হবে।
অন্যান্য দল
গত ১১ এপ্রিল 'গণতান্ত্রিক নাগরিক শক্তি'র আত্মপ্রকাশ ঘটে, যার চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মালেক ফরাজী। দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভূয়সী প্রশংসা করেন। জুলাই অভ্যুত্থানে ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এর বাইরে ওয়ার্ল্ড মুসলিম কমিউনিটি, সমতা পার্টি, আমজনতার দল, বাংলাদেশ জন-অধিকার পার্টি নামে নতুন দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এর মধ্যে ওয়ার্ল্ড মুসলিম কমিউনিটির আত্মপ্রকাশ ঘটে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের এক মাস পরে, গত বছর ১৯ সেপ্টেম্বর। হাফেজ মাওলানা মাহমুদ আব্বাস এই দলের আহবায়ক। যদিও এখন পর্যন্ত এই দলটির কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না। নামেই বোঝা যাচ্ছে, এটি একটি ধর্মভিত্তিক দল। বাংলাদেশে এ মুহূর্তে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর মধ্যে জামায়াত এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশই প্রভাবশালী। এর বাইরে নতুন কোনো ইসলামিক দল মাঠে এসে যে খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না—সেটি সহজেই অনুমেয়।
একই সময়ের মধ্যে সমতা পার্টি, গণ-অধিকার পরিষদ ভেঙে আসা একাংশের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত আমজনতার দল, বাংলাদেশ জন-অধিকার পার্টি, সার্বভৌমত্ব আন্দোলন, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ নামেও কয়েকটি দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এর মধ্যে সার্বভৌমত্ব আন্দোলনে প্রাথমিক পর্যায়ে সাতজনকে উপদেষ্টা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন কর্নেল (অব.) মশিউজ্জামান, সাবেক কূটনীতিক সাকিব আলী, ড. মেজর (অব.) সিদ্দিক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) তোফায়েল প্রমুখ।
মুসলিম জাতীয়তাবাদী নতুন ধারার রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা 'জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের' নেতৃত্বে আছেন খোমেনী এহসান।
গত বছরের ২৩ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে আত্মপ্রকাশ করে নিউক্লিয়াস পার্টি অব বাংলাদেশ (এনপিবি) নামে আরেকটি দল। এর ১৬ দিন পর ৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলে এস এম শাহাদাতের নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টি। এরপর বাংলাদেশ জনপ্রিয় পার্টি (বিপিপি), বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), বাংলাদেশ জাগ্রত পার্টি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), দেশ জনতা পার্টি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক শক্তি, বাংলাদেশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি নামেও কয়েকটি দলের আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু এসব দলের একটিও সেভাবে আলোচনার জন্ম দিতে পারেনি বা তাদের কার্যক্রমও দৃশ্যমান নয়।
নতুন করে আলোচনায় আপ বাংলাদেশ
সম্প্রতি আরেকটি রাজনৈতিক দল নিয়ে আলোচনা হচ্ছে—যারা নিজেদেরকে জুলাই অভ্যুত্থানের গর্ভ থেকে জন্ম বলে দাবি করছে। জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার নিয়ে ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ) নামে নতুন এই রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের নেতৃত্বে আছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আলী আহসান জুনায়েদ। তিনি নিজেকে এই প্ল্যাটফর্মের প্রধান উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আত্মপ্রকাশের আগে ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক দুই নেতা আলী আহসান জুনায়েদ ও রাফে সালমান রিফাত। সরকার পতনের এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের উদ্যোগে গঠিত এনসিপিতে তারা ভালো পদ পাবেন বলে আলোচনা চলছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এই দলে থাকবেন না বলে জানান তারা। এবার তাদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে। (প্রথম আলো, ১৬ মার্চ ২০২৫)
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শক্তির নতুন প্ল্যাটফর্মের প্রধান উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে জুনায়েদ লিখেছেন, 'পিলখানা, শাপলা ও জুলাই গণহত্যার মতো ভয়াবহ অপরাধের বিচার, ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা, দুর্নীতিমুক্ত সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামো নির্মাণ, ধর্মবিদ্বেষ ও ইসলামোফোবিয়ামুক্ত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ গঠন, ফ্যাসিবাদী কাঠামোর সম্পূর্ণ বিলোপ এবং আধিপত্যবাদের বিপক্ষে কার্যকর অবস্থান—এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আজ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে গৌণ হয়ে পড়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহত যোদ্ধাদের স্বীকৃতি ও সম্মান দেওয়ার কাজ এখনো অসম্পূর্ণ রয়েছে।' এই পরিস্থিতিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের সব রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, আপ বাংলাদেশ নামে এই নতুন রাজনৈতিক দলটিও জাতীয় নাগরিক পার্টির কাছাকাছি আদর্শ ও কর্মসূচি নিয়ে এগোবে। তবে যদি দুটি দলই নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হয়ে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে তারা যে তরুণ এবং মাদ্রাসাকেন্দ্রিক শিক্ষার্থীদের প্রধান ভোটব্যাংক বলে মনে করে, তাদের ভোটগুলো ভাগ যাবে কি না এবং তখন নির্বাচনের মাঠে সক্রিয় অন্য দলগুলো এর সুবিধা নেবে কি না—সেই প্রশ্ন যেমন আছে, তেমনি জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীরা রাজনৈতিক প্লাটফর্ম গঠনের প্রশ্নে কেন ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারলেন না, জনমনে সেই প্রশ্নও রয়েছে।
নতুন দলগুলোর উদ্দেশ্য কী?
প্রশ্ন হলো, নতুন গড়ে ওঠা এসব দলের লক্ষ্য উদ্দেশ্য কী? সবগুলো দল কি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পাবে? কেননা নিবন্ধন না পেলে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হওয়ার যেসব শর্ত, সেগুলো পূরণ করার যোগ্যতা কতগুলো দলের আছে? আবার নিবন্ধন পেলেই সবগুলো নতুন দল নির্বাচনে অংশ নেবে কি না; এককভাবে কতটি দল অংশ নেবে আর কতগুলো দল বড় দলের সঙ্গে জোট করবে; কারা কারা নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য করবে—এসব নিয়ে জনমনে প্রশ্ন আছে, আগ্রহ আছে। সব প্রশ্নের উত্তর এখনই দেওয়া সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের মতো একটি ছোট্ট আয়তনের দেশে কতগুলো রাজনৈতিক দল প্রয়োজন? অনেক বেশি রাজনৈতিক দল কি অনেক বেশি গণতন্ত্রের উদাহরণ?
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোয় কমিটি ও মনোনয়ন বাণিজ্য এবং দলের নির্বাচনি তহবিল গঠনের জন্য ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়ার ঘটনাগুলো ওপেন সিক্রেট। বলা হয়, যত বেশি দল, তত বেশি কমিটি। যত বেশি কমিটি, তত বেশি নেতা। আর মানুষ কেন নেতা হতে চায়—তার উত্তরও সবার জানা।
একটি দেশে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা কত, তারচেয়ে বড় প্রশ্ন দলগুলোর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কী? মাহফুজ আনামের ভাষায়, সেই দলগুলোর ভেতরে দেশপ্রেম কতটা আছে; গরিব ও নিপীড়িত মানুষকে তারা সত্যিকারেই ভালোবাসে কি না; তারা অত্যাচার ও শোষণের শৃঙ্খলমুক্ত ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন দেখে কি না এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে তাদের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা আছে কি না; তারা ব্যক্তি, পরিবার ও দলীয় স্বার্থরক্ষার জন্য কাজ করবে কি না; তারা গণতান্ত্রিক আদর্শ কতটুকু ধারণ করে এবং মানুষের অধিকার ও সমৃদ্ধির জন্য কাজ করছে কি না—সেসবই মূল বিবেচনা।
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত মিলিয়ে কয়েকশ রাজনৈতিক দল মানে কয়েক হাজার কমিটি; প্রতিটি কমিটিতে একজন করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, কয়েকজন সহ-সভাপতি, অসংখ্য সম্পাদক মিলিয়ে একটি বিরাট জনগোষ্ঠী। কিন্তু এই জনগোষ্ঠী দেশ গড়ার কাজে কতটুকু নিয়োজিত আর নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য তথা আখের গোছানোর কাজে তাদের কত শতাংশ ব্যস্ত—সেটি বিরাট প্রশ্ন।
পরিশেষে…
রাজনীতি একশো মিটার দৌড় নয়, বরং এটি হচ্ছে ম্যারাথন। অভ্যুত্থান বা রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে অনেক নতুন দলের জন্ম হয়। অনেক কিংস পার্টিও গড়ে ওঠে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবাই টিকে থাকে না। যেসব দল রাজনীতিকে একশো মিটার দৌড় মনে করে তারা দ্রুতই হারিয়ে যায়। টিকে থাকে কেবল তারাই, রাজনীতিকে ম্যারাথন হিসেবে গ্রহণ করার ধৈর্য, শক্তি, সাহস ও জনভিত্তি যাদের আছে।
সুতরাং, ৫ আগস্টের পরে যতগুলো নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে, তার মধ্যে দুয়েকটি বাদে কেউই ভবিষ্যতের রাজনীতিতে বড় ফ্যাক্টর হিসেবে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে পারবে বলে মনে হয় না।
আমীন আল রশীদ: সাংবাদিক ও লেখক
Comments