‘যখন সময় হবে এমনিতেই আমার ডাক এসে যাবে’

এবার  বিসিএলে চার ম্যাচে ৯৮.৪০ গড়ে সর্বোচ্চ ৪৯২ রান করেন জাকের আলি অনিক। ৬ ইনিংস  ব্যাট করে ৩ সেঞ্চুরি আর ১ ফিফটি এসেছে তার ব্যাটে।  উইকেটকিপিংয়ে করেছেন সর্বোচ্চ ডিসমিসাল। অলরাউন্ড নৈপুণ্যে হয়েছেন  টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়। ঘরোয়া অন্য টুর্নামেন্টেও গত দুই বছর ধরে ভালো করতে দেখা যাচ্ছে তাকে। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপে এই তরুণ জানিয়েছেন তার স্বপ্নের কথা। 
Jaker Ali Anik
জাকের আলি অনিক

এবার  বিসিএলে চার ম্যাচে ৯৮.৪০ গড়ে সর্বোচ্চ ৪৯২ রান করেন জাকের আলি অনিক। ৬ ইনিংস  ব্যাট করে ৩ সেঞ্চুরি আর ১ ফিফটি এসেছে তার ব্যাটে।  উইকেটকিপিংয়ে করেছেন সর্বোচ্চ ডিসমিসাল। অলরাউন্ড নৈপুণ্যে হয়েছেন  টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়। ঘরোয়া অন্য টুর্নামেন্টেও গত দুই বছর ধরে ভালো করতে দেখা যাচ্ছে তাকে। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপে এই তরুণ জানিয়েছেন তার স্বপ্নের কথা। 

বিসিএলের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন। নিশ্চয়ই অন্যরকম অনুভূতি?

জাকের: পেশাদার ক্রিকেটে এটা প্রথম ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট। বুঝতেই পারছেন ভালো লাগাটা অন্যরকম। বলা যায় পরিশ্রমের ফল পেয়েছি।'

কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?

জাকের:  টানা তিনটা সেঞ্চুরি করেছি। যে তিনটা সেঞ্চুরি করেছি বিশ্বাস করেন তিনটা তিন ধরণের উইকেট ছিল। একটা স্লো বাউন্সি উইকেটে ছিল, একটা ছিল টার্নিং উইকেট, ট্রিকি উইকেট। বগুড়ায় আরেকটা ছিল একদম ঘাসের উইকেট ছিল পেসারদের অনেক মুভমেন্ট ছিল। সেখানেও সেঞ্চুরি করেছি। তিন ধরণের উইকেটে তিনটা সেঞ্চুরি করেছি, বুঝতে পারছেন কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল। কতটা মনোযোগ ধরে রাখতে হয়েছে। আমাদের মতো তরুণদের জন্য প্রত্যেকটা ঘরোয়া খেলে গুরুত্বপূর্ণ, এখানে নির্ভার হওয়ার কোন সুযোগই নাই।

বেশ কিছু দিন ধরেই রান করছেন। ব্যাটিং উন্নত করতে কি কাজ করেছেন?

জাকের:   আগে যেমন ছিলাম, তারচেয়েও ব্যাটিং নিয়ে অনেক বেশি সিরিয়াস হয়েছি। অনেক বেশি অনুশীলন করছি। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা আমি প্রচুর ম্যাচ খেলেছি। গত ১৫-১৬ মাসে আমি ২৬টার মতো চারদিনের ম্যাচ খেলেছি। 'এ' দলের ট্যুর, তারপর ভারতের 'এ' দলের বিপক্ষে ম্যাচ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ 'এ' দলের বিপক্ষে খেলেছি। এই হাই ইন্টেনসিটির ম্যাচগুলো আসলে খেলে আসার পরে ঘরোয়াটা একটু হলেও সহজ মনে হয়েছে। আর কোচদের কথা বলব, 'এ'  দলে তো জেমি সিডন্স ছিল, বাবুল স্যার ছিল (মিজানুর রহমান)। আসলে কি বাংলাদেশের যেখানেই খেলতে যান বিভিন্ন রকমের কোচ থাকে। আমি চেষ্টা করি সবার সঙ্গে মানিয়ে নিতে, সবার যে পরিকল্পনা সেই অনুযায়ী খেলতে।

বিসিএলের দুই রাউন্ড পর বিপিএল ছিল, পরে আবার বিসিএল। বিরতির পরও রান পেয়েছেন। এই সুইচটা কতটা কঠিন ছিল?

জাকের:  কিছুটা কঠিন ছিল। ধরেন যখনই টেস্ট ক্রিকেট (প্রথম শ্রেণী) থেকে টি-টোয়েন্টিতে যাবেন একদম  বিপরীত একটা খেলায় অবশ্যই মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়েছে। প্রথম দুই ম্যাচ শেষ করে যখন টি-টোয়েন্টির প্রস্তুতি নিতে গেলাম তখন এক-দুই দিন সময় লেগেছে থিতু হতে। একইভাবে যখন টি-টোয়েন্টি শেষ করে যখন টেস্টে আসলাম তখনো অনুশীলন সেশনে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লেগেছে। ম্যানেজ করে ফেলছি এটাই আরকি।'

আপনার শক্তির জায়গা কি?

জাকের: টেম্পারমেন্ট বলেন, ধৈর্য বলেন, মেন্টালি টাফনেস বলেন সব সময় রাখতে হয় কারণ লঙ্গার ভার্সন এমন একটা গেম যেখানে ঘণ্টায় ঘণ্টায় পিচের আচরণ বদল হয়। বল বদল হয়, ব্রেকের পর বোলারের এনার্জি আসে। অনেক মনোযোগ রাখতে হয়। এই টুর্নামেন্টে আমি অনেক মনোযোগী ছিলাম। এটাই বোধহয়। 

গত জাতীয় লিগ হয়েছে ডিউক বলে, এটার কোন প্রভাব ছিল?

জাকের: বিসিএল হয়েছে কোকাবুরা বলে।  কিন্তু এটা বলতে চাই ডিউক বলে জাতীয় লিগ খেলার কারণে কোকাবুরাটা একদম সহজ মনে হয়েছে। ডিউক বলে যেরকম সাফার করতে হয়েছে, স্যুইং ছিল, বাউন্স ছিল। যখন ওইগুলা খেলে অভ্যস্ত হবেন। কোকাবুরা বলে যখন স্যুইং কম থাকবে তখন একটু সহজ মনে হবে। ডিউক বলে খেলার কারণেও একটা উন্নতি হয়েছে।

এমন পারফরম্যান্সের পর জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার আশা কতটা? 

জাকের: ভালো খেললে আশা সব সময় থাকে। যেটা বুঝি আমার ভালো খেলাটা চালিয়ে যেতে হবে। আমি চাইব আমি আমার পারফরম্যান্সটা করে যাই। যখন সময় হবে এমনিতেই আমার ডাক এসে যাবে। আমার এখন একটাই চিন্তা পারফর্ম করে যাব। রান করব, ভালো কিপিং করব। যে সংস্করণেই খেলি না কেন। সামনে প্রিমিয়ার লিগ আছে। আপাতত সেখানে ভালো করার ইচ্ছা।

কোন পজিশনে নিজেকে প্রস্তুত রাখবেন?

জাকের: আগে আমি সাত নম্বরেই ব্যাট করতাম। সম্প্রতি আমাকে উপরে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, এটাও বড় রান করার একটা কারণ। আমার মনে হয় না ব্যাটিং পজিশন নিয়ে সমস্যা হবে। যেহেতু লঙ্গার ভার্সন রান নিয়ে এত চিন্তা করতে হয় না। আপনি মাঠে প্রপার ওয়েতে দাঁড়িয়ে থাকলে মনোযোগ ধরে রাখতে পারলে, বোলারকে চুজ করতে পারেন, তাহলে যেকোনো জায়গায় রান করতে পারেন।

জাতীয় দলে কোন সংস্করণে সুযোগ বেশি দেখেন?

জাকের: আমি তিনটা সংস্করণই খুবই উপভোগ করি। এখন সম্প্রতি লঙ্গার ভার্সন খুব ভালো যাচ্ছে বলে টেস্টটা আগে ধরতে পারেন। আমি সত্যিকথা বলতে কোন সংস্করণ ছেড়ে বলতে পারব না।  আমি তো আমার প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি ভাই। যেকোনো জায়গায় হতে পারে। এটা টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে যেকোনো জায়গায়। আমি কেবল নিজেকে প্রস্তুত রাখছি, বাকিটা নির্বাচকরা আছেন। উনারা দেখবেন। আমি কোন জায়গায় খেললে ভালো হবে উনারা ঠিক করবেন।

কিপার ব্যাটার হিসেবে আপনি কাকে অনুসরণ করেন?

জাকের: আমার ক্রিকেটিং আদর্শ মুশফিক ভাই। কিন্তু উইকেট কিপার হিসেবে ব্র্যাড হাডিনকে অনুসরণ করতাম। আমার খুবই ভালো লাগত, এখনো তার হাইলাইটস দেখি। উইকেটকিপিংটা আমার সবচেয়ে গুরুত্বের জায়গা। সব সময় বলি, কিপিং সবার আগে। উইকেট কিপিংয়ের কারণে একটা শক্ত জায়গায় যেতে পারি। গত কয়েক সিজন ধরে কিপিংয়ে ভাল করছিলাম, ব্যাটিংয়েও শীর্ষে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। এবার সর্বোচ্চ রান করলাম এখানেও। দুইটাই একসঙ্গে হয়েছে।  আমি উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে পছন্দ করি বেশি।

জাকির হাসান, আফিফ হোসেন আপনার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তারা জাতীয় দলে খেলে ফেলেছে। তাদের দেখে তাড়না অনুভব করেন কিনা 

জাকের: আমার কয়েকজন বন্ধু জাতীয় দলে খেলে ফেলেছে। সম্প্রতি জাকির হাসান খেলল। আফিফ তো আছেই। ওরা নিজেকে বেটার প্রমাণ করতে পেরেছে বলেই আগে সুযোগ পেয়েছে। এখন আমি যে পারফর্ম করছি। যখন বড় বড় পারফর্ম করতে থাকবেন তখন স্বপ্নগুলো মনের ভেতর দোলা দেয়, যে আমারও হবে। আমি চাই বড় পারফরমেন্স, বড় রান করে পুশ করতে। তাহলে হয়ত কোন না কোন পথ বের হয়ে যাবে।

Comments