‘আগে হয়ত দশ জন নেতিবাচক মন্তব্য করত, এখন ছয় জন করে’

টি-টোয়েন্টিতে প্রথম বাংলাদেশি নারী ক্রিকেটার হিসেবে একশো উইকেটের দ্বারপ্রান্তে আছেন নাহিদা আক্তার। ঈদের ছুটির মাঝে দ্য ডেইলি স্টারের মুখোমুখি হয়েছিলেন এই নারী ক্রিকেটার। 
Nahida Akter

বাংলাদেশের প্রথম নারী ক্রিকেটার হিসেবে আইসিসির মাস সেরা পুরস্কার জেতেন নাহিদা আক্তার। ওয়ানডেতে র‍্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের সেরা দশ বোলারের একজনও তিনি। টি-টোয়েন্টিতে প্রথম বাংলাদেশি নারী ক্রিকেটার হিসেবে একশো উইকেটের দ্বারপ্রান্তে আছেন বাঁহাতি এই স্পিনার। ঈদের ছুটির মাঝে দ্য ডেইলি স্টারের মুখোমুখি হয়েছিলেন এই নারী ক্রিকেটার। 

ঈদে কোথায় আছেন?

নাহিদা আক্তার: ঈদে ঢাকাতেই আছি। বাড়ি যাওয়ার কথা ছিলো, গ্রামের বাড়ি। তবে রাস্তাঘাটের ঝামেলা চিন্তা করে এবার আর যাওয়া হয়নি। পরিবারের সবাই ঢাকাতেই আছে। ঢাকাতেই সবাইকে নিয়ে ঈদ করব।

খেলার জন্য তো বাইরেও অনেক ঈদ করা হয়েছে, সেসব অভিজ্ঞতা কেমন?

নাহিদা: পরিবারের বাইরে ঈদ করলে তো অবশ্যই খারাপ লাগা কাজ করে। তবে জাতীয় দলও আমার পরিবার। তখন ওই পরিবারের সঙ্গে মজা করি, সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগ করি। দুইটাই আমার পরিবার। তারপরও ধরেন একটা খারাপ লাগা কাজ করেই। তবে পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে সব কিছু মেনে নিতে হয়।

ছোট বেলার ঈদ আর এখানকার ঈদের মধ্যে পার্থক্য কি আপনার কাছে?

নাহিদা:  পার্থক্য বলতে আগে সবার কাছ থেকে সেলামি নিতাম, এখন সেলামি দিতেও হয়। যেহেতু আমি ইনকাম করি, এখন দিতে হয় বেশি।

সেটা কতটা উপভোগ করেন?

নাহিদা: খুবই ভালো লাগে, পরিবারের মানুষদের উপহার দেওয়া। আমার ছোটভাই আছে একজন, বোনদের বাচ্চা কাচ্চা আছে তারাও চায়। ভালো লাগে এটা।

ঈদের কোন জিনিস সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে?

নাহিদা: সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে আমার বাবা-ভাই একত্রে নামাজে যায়। আমি তখন তাদের জন্য ঈদের পাঞ্জাবি, টুপি। এই জায়গাটা ভালো লাগে যে বাবা- ভাইরা একসঙ্গে যাচ্ছে

রান্না বান্নাও করেন নাকি?

নাহিদা: না রান্না বান্না সবটা আমার আম্মুই করে। আমি চেষ্টা করি কিছু করার, আমাকে কিছু করতে দেয় না।

সতীর্থদের সঙ্গেও তো ঈদের দিনে কথাবার্তা হয়?

নাহিদা: অবশ্যই অবশ্যই। প্রতি ঈদেই আমরা কথা বলি আলাদা করে। ঈদের দিন কোন একটা সময়ে গ্রুপ কলে কথা বলি। আমরা একত্রিত হই। ওইটা একটা ভালো লাগা কাজ করে।

জাতীয় দলের সঙ্গে ঈদে থাকার অভিজ্ঞতা

নাহিদা: আমাদের দেশের বাইরে ঈদ করতে হয়েছে, অনেক সময় প্লেনেও থাকতে হয়েছে। একটা ঈদ (কোরবানির ঈদ) আমাদের কাতারে করতে হয়েছে। তো সেখানে তো একদিন আগে ঈদ হয়। আমরা ওখানে ঈদ করে এসে বাংলাদেশেও পরদিন ঈদ পেয়েছি।

ঈদের সময় জাতীয় দলের সঙ্গে থাকলে রিতু মনি, জ্যোতি (নিগার সুলতানা) , হ্যাপি (মুরশিদা খাতুন) এদের সঙ্গেই বেশি মজা করা হয়।

সামনে তো অনেক খেলা, তার আগে পরিবারের সঙ্গে আনন্দ উৎসব পার করে কতটা চাঙ্গা হতে পারবেন?

নাহিদা: সামনে আমাদের অনেক খেলা। তো সেদিক চিন্তা করলে পরিবারকে বেশি সময় দেওয়া হবে না। যা ছুটি পেয়েছি খুব ভালোভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। আশা করছি সামনের কদিন খুব ভালো যাবে। আমার মনে হয় এই ছুটিটা, এই রিকোভারিটা খুব দরকার ছিলো। টানা খেলার মধ্যে থাকলে অনেক সময় হয় কি, মানসিক অনেক চাপ আসে। এখন ছুটিতে ফুরফুরে হয়ে পরের সিরিজে ভালোভাবে ফিরতে পারব।

সামনে ভারত সিরিজ, এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপ। আপনার নিজের কোন লক্ষ্য আছে?

নাহিদা: ব্যক্তিগত কোন লক্ষ্য নেই। আমার কাছে দল আগে। দল যেটা চাহিদা মনে করবে সেটাই পূরণের চেষ্টা করব। দল যখন জেতে তখন ভালো লাগা কাজ করে। দলের জেতায় অবদান রাখতে পারলেই খুশি হবো।

ওয়ানডেতে আপনি বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে দশে আছেন, একবার আইসিসির মাসসেরাও হয়েছিলেন। আপনাকে তো দল অনেক ভরসা করে

নাহিদা: আমি সেরা দশে আছি আলহামদুলিল্লাহ। এটার পুরোপুরি কৃতিত্ব দেব আমার সতীর্থদের। তারা ছাড়া আমি এটা অর্জন করতে পারতাম না। বিশেষ করে নিগার সুলতানা জ্যোতি, আমাদের অধিনায়ক। সে যেভাবে আমাকে সমর্থন করে এসেছে এটা আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া। দলের সবাই আমাকে সমর্থন করে বলে এই ফলটা আসছে। আমি আশা করছি এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারব।

আর ৯ উইকেট পেলে প্রথম বাংলাদেশি নারী ক্রিকেটার হিসেবে ১০০ উইকেট হবে টি-টোয়েন্টিতে…

নাহিদা: এটা জানতাম না ভাইয়া, আপনার কাছ থেকেই শুনলাম। আমি কখনই গুনি না আমার কতগুলো উইকেট হয়েছে। আমার কাছে দল আগে, আমার অবদানে যদি দল জিততে পারে সেটা ভালো লাগা কাজ করে।

বাঁহাতি স্পিনে কাউকে অনুসরণ করেন?

নাহিদা: আমি অনেকের বোলিং দেখি। যেটা ভালো লাগে মনে হয় নেওয়ার চেষ্টা করি। আমি অনেকের ভিডিও দেখি। আমি সাকিব ভাইয়ের বোলিং দেখি, সাকিব ভাইয়ের বোলিংয়ের আগ্রাসণটা দেখি। তিনি কীভাবে এত শান্ত থাকে সেটা বোঝার চেষ্টা করি।  জাদেজার বোলিংও দেখি। সেখান থেকে যদি ছোট ছোট জিনিস নেওয়ার থাকে তাহলে চেষ্টা করি নিতে। আমার এখন যে কোন আছেন শ্রীলঙ্কান দিনুকা (হেত্তিয়ারাচ্চি) , উনি আমাকে অনেক সমর্থন করে। মাঠে ও মাঠের বাইরে অনেক সমর্থন করছেন। তার অবদানে আমি ভালো কাজ করতে পারছি। এটা আমার ক্যারিয়ারের জন্য ভালো হবে।

আপনার ব্যাটিংও তো সাম্প্রতিক সময়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে

নাহিদা: ব্যাট হাতে যখন নামি আমি একজন ব্যাটার। বল হাতে নামলে আমি একজন বোলার। আমি যে পজিশনে ব্যাট করতে নামি দল আমার কাছে অনেক কিছু আশা করে। আমি চেষ্টা করি। যখন সময় পাই ব্যাটিং নিয়ে কাজ করি। দলের পরিস্থিতিতে ব্যাটিং করতে হয়। আমি চেষ্টা করি বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংটা উন্নত করতে। আমাদের যে কোচ আছেন হাশান তিলকরত্নে, আমাদের (মাহমুদ) ইমন স্যার  সবাই পরামর্শন দেন।

মেয়েদের ক্রিকেটে অনেক খেলা হচ্ছে, আপনাদের উপর অনেক নজর এখন। সেটা কতটা উপভোগ করেন?

নাহিদা: আগে থেকে আমাদের অনেক গুরুত্ব দিচ্ছে। আগে আমরা এফটিপির অধীনে ছিলাম না, তেমন খেলা হতো না। এখন অনেক খেলা হয়। এদিন থেকে আমরা ভাগ্যবান। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড আমাদের অনেক সমর্থন দিচ্ছে। আমরা খুবই ভালো অবস্থানে আছি।

সমাজে আগে যেমন দেখা হতো মেয়েদের খেলাধুলা। সেটা কি বদল হয়েছে কিনা? 

নাহিদা: অবশ্যই। পাঁচ বছর আগে যে পরিস্থিতি ছিল এখন তা নেই, এখন অনেক এগিয়েছে। হ্যাঁ, কিছু মানুষ আছে সমাজে যারা অন্যভাবে দেখে। কিন্তু সমর্থনের দিকটা অনেক বেড়েছে, গুরুত্ব বোঝে এখন অনেকে। আগের থেকে আমার মনে হয় অনেক ভালো পরিস্থিতি। আগে হয়ত ১০ জন নেতিবাচক মন্তব্য করত, এখন ৬ জন করে। আগের থেকে উন্নতি হচ্ছে আমি বলব।

 

Comments