বিপিএল প্রথম ধাপ

টস জিতলেই যেন ম্যাচ জয়, পিচ নয় ব্যাটারদেরই আড়ষ্টতা

বরিশাল-কুমিল্লা ম্যাচে তাও যা তুমুল লড়াই হয়েছে। বাকি সাত ম্যাচ একদম জমেনি। আগে ব্যাটিং পাওয়া দল পর্যাপ্ত রান করতে পারেনি। রান তাড়ায় যাওয়া দল মাঝেমধ্যে চাপে পড়লেও তেমন কোন দোলাচল ছাড়াই জয় নিশ্চিত করেছে।
Babar Azam & Azmatullah Omarzai
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

ডেভ হোয়াটমোর হাসতে হাসতে বললেন, 'আমি ভেবেছিলাম আট ম্যাচের মধ্যে এই একটা ম্যাচ ভিন্ন হবে, হলো না।' কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে টস হেরে আগে ব্যাট করা ম্যাচেও প্রায় জিতে গিয়েছিলো ফরচুন বরিশাল। শেষ পর্যন্ত শুরু থেকে চলা 'ট্রেন্ডে' কোন ভিন্নতা হয়নি, জিতেছে কুমিল্লাই।

বরিশাল-কুমিল্লা ম্যাচে তাও যা তুমুল লড়াই হয়েছে। বাকি সাত ম্যাচ একদম জমেনি। আগে ব্যাটিং পাওয়া দল পর্যাপ্ত রান করতে পারেনি। রান তাড়ায় যাওয়া দল মাঝেমধ্যে চাপে পড়লেও তেমন কোন দোলাচল ছাড়াই জয় নিশ্চিত করেছে।

বিপিএলের ঢাকা পর্বের প্রথম ৮ ম্যাচে সবগুলোতেই টস জয়ী দলই ম্যাচ জিতেছে। টস জিতলে প্রতি অধিনায়ক আগে বোলিং বেছে নিয়েছেন, এই ছক মেনেই ম্যাচ বের করে ফেলেছেন। মেহেদী হাসান মিরাজ যেমন বলছিলেন, 'আগে ব্যাটিং করলে কত রান নিরাপদ হবে তা বোঝা যায় না। রান তাড়া করা কন্ডিশনের কারণেই তাই সহজ।'

Toss
বিপিএলে টসই গড়ে দিচ্ছে ম্যাচের গতি। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

মিরপুরের উইকেটে ম্যাচ শুরুর দিকে কিছুটা আঠালো ভাব থাকে। ম্যাচে আয়ু বাড়তে উইকেট হতে থাকে সহজ। শীতের এই সময়টায় শিশির প্রতি ম্যাচেই রাখছে প্রভাব। ব্যাটিং যত পরে হচ্ছে শিশিরের সুবিধা তত ব্যাটারদের পক্ষে আসছে।

৮ ম্যাচের মধ্যে এখনো পর্যন্ত দুইশো রানের ইনিংসের দেখা মেলেনি। সর্বোচ্চ ১৮৭ রান তাড়া দেখা গেছে। দেড়শো পেরুনো ইনিংস দেখা গেছে তিন ম্যাচে। এই তিন ম্যাচই ছিলো রাতের আলোয়।

দিনের আলোয় প্রতিদিনই প্রথম ম্যাচ হচ্ছে লো স্কোরিং। এখন পর্যন্ত দিনের প্রথম ম্যাচে উদ্বোধনী ম্যাচেই বেশি রান হয়েছে। সেদিন কুমিল্লার ১৪৩ রান টপকে যায় দুর্দান্ত ঢাকা। বাকি ম্যাচগুলোতে ১৩০ ও ১২০ এর ঘরে ঘুরেছে দলীয় পুঁজি।

তবে রান কম হওয়ার দায় উইকেটকে দেননি কোন অধিনায়ক। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে ১৩৬ রান করে ৬ উইকেটে হেরে আসার পর বলেছিলেন, 'উইকেট ১৭০-১৭৫ রানের ছিলো। আমরাই পারিনি। আমরা বাজে ব্যাট করেছি।'

Batting collapse
ছবি: স্টার

একই মত মাশরাফি বিন মর্তুজার। রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে কেবল ১২০ রান করতে পেরেছিল তার দল সিলেট স্ট্রাইকার্স। ওই রান তাড়ায় ৩৯ রানে ৬ উইকেট হারালেও রংপুর শেষ পর্যন্ত জেতে ৪ উইকেটে। মাশরাফির মতে, 'বাজে ব্যাটিং' করেছেন তারা। উইকেট মানিয়ে নিয়ে বড় ইনিংস খেলার মতন ছিলো। কিন্তু ব্যটাররাই তাদের কাজটা করতে পারেননি।

ওই ম্যাচের স্কোরকার্ড বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় দুই দল মিলিয়ে বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্যে দুই অঙ্কে যেতে পেরেছিলেন কেবল একজন। সেই নাজমুল হোসেন শান্তর ২৪ বলে ১৪ রানের ইনিংস মোটেও আকর্ষণীয় কিছু ছিলো না। সিলেটের হয়ে অস্ট্রেলিয়ান বেন কাটিং ও ইংলিশ বেনি হাওয়েল করেন সমান ৩৭ রান করে। রান তাড়ায় রংপুরের বাবর আজম ৫৬ আর আজমতুল্লাহ ওমরজাই করেন ৪৭ রান।  উইকেট মন্থর হলে, কঠিন হলে দেশিয় ব্যাটারদেরই চেনা আঙিনায় দায়িত্ব বেশি নেওয়ার কথা। তারা সেটা করতে পারেননি। বরং তাদের দক্ষতা হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ।

খেলা দেখে থাকলে অতি মন্থর উইকেটের বদনাম মিরপুরকে দেওয়া এবার কঠিন। উইকেটে বেশ ভালো বাউন্স দেখা গেছে প্রতি ম্যাচে। বল ক্যারি করছিলো ভালোভাবেই। ব্যাটাররাও বলছেন বল পড়ে থেমে যায়নি, ব্যাটে আসছিল সহজে।

উইকেট যে স্পিনারদের জন্য স্বর্গ কিছু নয় সেই সাক্ষ্য দেবে পরিসংখ্যানও। এখন পর্যন্ত উইকেট শিকারে সেরা পাঁচ বোলারের তিনজনই পেসার।

উইকেটের দায় নেননি এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটার লিটন দাসও। টুর্নামেন্টের প্রথম দুই ম্যাচে রান পাননি তিনি। তবে এজন্য দায় নিচ্ছেন স্রেফ নিজেকে। এখনো ব্যাটিংয়ে গুছিয়ে উঠতে না পারার সংকট টের পাচ্ছেন, এজন্য অনুশীলনের তীব্রতা অনুভব করছেন তিনি।

টুর্নামেন্ট এখনো কেবল শুরু। উইকেট নিয়ে পর্যবেক্ষণ হয়ত আরও আসবে। তবে আপাতত উইকেট নয়, দেশিয় ব্যাটারদের আড়ষ্টতাই প্রকট হচ্ছে বেশি। জড়তা কাটিয়ে তারা কবে ডানা মেলে উড়তে পারেন, দেখার অপেক্ষা।

Comments

The Daily Star  | English
  July massacre victims

Dubious cases are an injustice to July massacre victims

Legal experts opined that there should be a judicial investigation into these cases.

8h ago