জাদেজা-সুন্দরের পাশে দাঁড়িয়ে স্টোকস-ব্রুকদের সমালোচনায় কুক

ম্যানচেস্টারের ভারত ও ইংল্যান্ডের টেস্ট ড্র হলেও তাতেও থাকল উত্তেজনা, নাটকীয়তা। কোণঠাসা অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ভারতের ম্যাচ বাঁচানোর লড়াইয়ের শেষ দিকে দেখা যায় নাটকীয় দৃশ্য। সেই সময় অধিনায়ক বেন স্টোকসসহ ইংল্যান্ড ক্রিকেটারদের আচরণকে কোনভাবে সমর্থন করছেন না তাদেরই প্রাক্তক ক্রিকেটার অ্যালিস্টার কুক। তিনি বরং রবীন্দ্র জাদেজা ও ওয়াশিংটন সুন্দরের পক্ষ নিয়েছেন।
পঞ্চম দিনের শেষ ঘন্টার খেলা তখন বাকি, ওভার বাকি ঠিক ১৪। ড্র অনেকটাই তখন নিশ্চিত বাস্তবতা। কিন্তু অসাধারণ জুটিতে যারা দলকে এই নিরাপদ জায়গায় আনলেন সেই জাদেজা ও সুন্দর দুজনেই ছিলেন সেঞ্চুরির কাছে। বেন স্টোকস এসে তাদের হাত মিলিয়ে খেলা শেষ করে দিতে বলেন।
স্বাভাবিকভাবেই দলীয় সিদ্ধান্তে সাড়া দেননি জাদেজা-সুন্দর। তারা স্টোকসের হ্যান্ডশেক প্রস্তাব তখন গ্রহণ করে খেলা বন্ধ করতে অস্বীকার করেন। এতেই রেগে যান ইংলিশ ক্রিকেটাররা। বেন ডাকেট, জ্যাক ক্রলি, জো রুট এবং হ্যারি ব্রুক-এর মতো বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় জাদেজা এবং সুন্দর দুজনকেই উপহাস করতে থাকেন।
স্টোকস জো রুটের পাশাপাশি অনিয়মিত স্পিনার হ্যারি ব্রুককে আক্রমণে আনেন। ব্রুকের বল করার ধরণ ছিলো দৃষ্টিকটু। তিনি ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে আলগা বল দিচ্ছিলেন। জাদেজা সহজেই তা বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে নিজের প্রয়োজনীয় রান তুলে নেন। অপরপ্রান্তে রুট অবশ্য স্বাভাবিক বলই করেন, তাকেও মেরে সেঞ্চুরি তুলতে সময় নেননি সুন্দর। সেঞ্চুরির পর তারা ড্র মেনে নিয়ে মাঠ ছাড়েন।
পরে ভারত অধিনায়ক শুবমান গিল বলেন, যারা এত লড়াই করে ম্যাচ বাঁচিয়ে এসেছে, সেঞ্চুরির কাছে এসে তা তাদের প্রাপ্য। এজন্য তারা আগেভাগে ড্র মেনে নেননি।
এই ঘটনায় বিভিন্ন দিক থেকে আলোচনা হচ্ছে। বেশিরভাগ সাবেক ক্রিকেটার জাদেজা ও সুন্দরের সিদ্ধান্ত সমর্থন করে স্টোকসদের আচরণের সমালোচনা করেছেন। সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক কুকও মনে করেন জাদেজা-সুন্দর ঠিক কাজটাই করেছে আর ব্রুক যা করেছে সেটা মনে রাখার মতন না।
বিবিসি স্পোর্টসকে কুক বলেন দীর্ঘ সময় মাঠে থাকার হতাশা ঝেড়েছেন স্টোকসরা, , 'তাদের (জাদেজা-সুন্দর) জন্য খেলা চালিয়ে যাওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল, কারণ তারা এর থেকে মোমেন্টাম পাবে। আপনি যখন মাঠে থাকেন, যখন আপনি ১৪০ ওভার ধরে মাঠে থাকেন, তখন আপনি হতাশ হয়ে পড়েন। তাই ইংল্যান্ডের জন্য একটু হতাশা ছিল।'
'আমি বুঝতে পারি কেন ভারত এটি করেছে। পাঁচ বছর পর, আপনি স্কোরকার্ডটি দেখবেন, আপনি খেলাটি বাঁচানোর জন্য দুটি দুর্দান্ত শতক দেখতে পাবেন। এছাড়াও শুভমান গিলেরটিও আছে। তাই হ্যারি ব্রুকের ঝুলিয়ে দেওয়া আলগা বলের আচরণ কেউ মনে রাখতে চাইবে না, এটা ভুলে যাওয়ার মতন দৃশ্য।'
চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনে ভারত যখন ব্যাট করতে নামে, তখন ম্যানচেস্টার টেস্টে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিকূলতা সত্যিই অনেক বেশি ছিল। ৩১১ রানে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় শূন্য রানেই হারায় ২ উইকেট। ইনিংস ব্যবধানে হেরে যাওয়াই তখন সম্ভাব্য ছবি।
চতুর্থ দিনেই খেলা শেষ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি ছিল। তবে লোকেশ রাহুল এবং শুভমান গিলের ভাবনা ছিলো ভিন্ন, দারুণ মুন্সিয়ানায় ১৭৪ রান তুলে দিন শেষ করেন। পরের দিন রাহুল নব্বুইতে থামলেও গিল করেন সেঞ্চুরি। এরপর সুন্দর-জাদেজার সেই স্মরণীয় লড়াই। ২০৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ম্যাচ বাঁচিয়ে সিরিজ ড্র করার আশা জিইয়ে রেখেছেন তারা।
Comments