এই ভারতীয় দল আসলে কেমন, সকালটা তারই সারসংক্ষেপ: গিল

শুবমান গিল বলেছেন যে, ভারতের 'কখনো হার না মানা' মানসিকতা এবং চাপের মুখে শান্ত থাকার ক্ষমতাই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২-২ সমতায় ফিরে আসার মূল কারণ। ওভালে অনুষ্ঠিত শেষ টেস্টে ইংল্যান্ডকে ৬ রানে হারিয়ে 'অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফি' হাতছাড়া করেনি ভারত। ম্যাচ শেষে গিল দলের আত্মবিশ্বাস, কৌশলগত স্বচ্ছতা এবং একটি তরুণ ভারতীয় দলকে এত চাপের মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়ে তার মতামত প্রকাশ করেন।
ইংল্যান্ড যখন জো রুট এবং হ্যারি ব্রুকের ব্যাটে ভর করে ৩টি উইকেট হারিয়ে ৩৭৪ রানের লক্ষ্য থেকে মাত্র ৭৩ রান দূরে ছিল, তখন ভারতের জয় অনেকটা অসম্ভব মনে হচ্ছিল। কিন্তু মোহাম্মদ সিরাজ এবং প্রসিধ কৃষ্ণর নেতৃত্বে বোলারদের ধারাবাহিক চাপের মুখে ইংল্যান্ড ভেঙে পড়ে। পঞ্চম দিনের সকালে ভারত অসাধারণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচ জিতে নেয়।
গিল বলেন, 'আজকের (সোমবার) সকালটা যেন এই দলের পরিচয় তুলে ধরেছে। ৭০-এর বেশি রান দরকার, হাতে ৭টা উইকেট। রুট আর ব্রুক যেভাবে খেলছিল, বিশ্বের বেশিরভাগ দলই হয়তো জেতার আশা ছেড়ে দিত। কিন্তু এই দলের বিশ্বাস আছে যে, আমরা যদি কোনো সুযোগ পাই, তবে তা কাজে লাগাতে পারব। ব্রুক আউট হওয়ার পর আমরা যখন (জ্যাকব) বেথেলের উইকেটটাও দ্রুত পেয়ে গেলাম, তখন আমাদের মধ্যে এই কথাই হচ্ছিল যে, এটাই আমাদের সুযোগ, চলো ওদের ওপর চাপ বাড়াই।'
গিল জানান, একবার যখন ব্রেক থ্রু এলো, তখন দলের মধ্যে একটা পরিবর্তন অনুভব করা গেল। তিনি বলেন, বার্তাটি ছিল সহজ - লক্ষ্য যত কাছেই হোক না কেন, চাপ ধরে রাখতে হবে।
'এখান থেকে যদি আমরা আরেকটি উইকেট নিতে পারি, তাহলে কে বলতে পারে! এটা ক্রিকেট। চতুর্থ দিনের উইকেটে ৭০ বা ৫০ রানও কিন্তু চাপের ব্যাপার। তবে সিরাজের মতো বোলার যখন বল করে, তখন অধিনায়ক হিসেবে আপনার কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। আপনাকে শুধু দাঁড়িয়ে থেকে ওদের বোলিং উপভোগ করতে হয়।'
'আমাদের কাছে দ্বিতীয় নতুন বল নেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু সিরাজ এবং প্রসিধ যেভাবে বল করছিল, তাতে আমাদের মনে হয়নি যে নতুন বলের দরকার আছে। ৮৪ ওভার পুরোনো বলেও ওরা আমাদের জন্য কাজটা করে দিতে পারত... আমরা জানতাম ওদের ওপর অনেক চাপ ছিল। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাটিং দলের ওপর চাপ সবসময়ই বেশি থাকে। কারণ, সেখানে একটি বলই খেলার ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে। তাই আমরা ভেবেছিলাম যে, খেলা যত লম্বা হবে, উইকেট পাওয়ার সম্ভাবনা ততই বাড়বে।'
এই টেস্টে ভারত রিশভ পান্ত এবং জসপ্রিত বুমরাহের মতো গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের ছাড়াই নেমেছিল। সিরিজে পিছিয়ে ছিলো ১-২ ব্যবধানে। কিন্তু গিল বলেন, দলের গভীরতা এবং খেলোয়াড়দের প্রতি বিশ্বাস থাকার কারণে মনোযোগ শুধু খেলাটার ওপর ছিল, কোনো খেলোয়াড়ের অনুপস্থিতিতে নয়।
'সিরাজের মতো খেলোয়াড় যখন থাকে, তখন অন্য খেলোয়াড়দের অভাব সেভাবে অনুভূত হয় না... বুমরাহ ভাইয়ের (বুমরাহ) কথা আর কী বলব, তিনি এখন বিশ্বের সেরা ফাস্ট বোলারদের একজন। কিন্তু বার্মিংহামে আমি বলেছিলাম যে আমাদের দেশে প্রচুর প্রতিভা আছে... তাই আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সেরাটা দেওয়া। আমার মনোযোগ ছিল যেন সব খেলোয়াড় মানসিকভাবে ভালো থাকে এবং মাঠে নেমে তাদের সেরা খেলাটা খেলতে পারে।'
টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে তার প্রথম অভিজ্ঞতা এবং এমন একটি উত্তেজনাময় সিরিজে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রসঙ্গে গিল বলেন, তিনি এই দায়িত্বের সঙ্গে আসা আবেগীয় ওঠাপড়াকে মানিয়ে নিতে শিখছেন।
'এইরকম কিছু মুহূর্ত আসে, যখন মনে হয় এই যাত্রা সার্থক। সকালে আমাদের এমন একটি মুহূর্ত ছিল... জীবনের উত্থান-পতনগুলোর মধ্যে দিয়ে আপনাকে পথ চলতে হবে এবং সবসময় ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে। অন্তত আমি এটাই বিশ্বাস করি। আমরা জিতলাম না হারলাম, আমি ভালো করলাম না খারাপ করলাম - সব পরিস্থিতিতেই আমি ভারসাম্য বজায় রাখতে চাই। এটা কঠিন, কিন্তু এটা একটা প্রক্রিয়া। এটাই আসল যাত্রা, নিজেকে সাম্যাবস্থায় রাখা। আমি এখনও শিখছি, তবে এখন পর্যন্ত সব ভালোই চলছে।'
Comments