মেসির হ্যাটট্রিক, কুরাসাওয়ের জালে আর্জেন্টিনার ৭ গোল
লিওনেল মেসির শততম আন্তর্জাতিক গোলের দিনে আর্জেন্টিনা খেলল দানবীয় ফুটবল। তাদের বিপক্ষে কোনো প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারল না কুরাসাও। দুই দলের মধ্যকার শক্তির বিস্তর পার্থক্য স্পষ্টভাবে ফুটে উঠল মাঠের লড়াইয়ে। প্রথমার্ধেই হ্যাটট্রিক করে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিশাল জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন মেসি।
বুধবার বাংলাদেশ সময় সকালে নিজেদের মাঠে সান্তিয়াগো দেল এস্তেরোতে প্রীতি ম্যাচে ৭-০ গোলে জিতেছে লিওনেল স্কালোনির দল। বিরতির আগেই পাঁচবার গোল উৎসব করে স্বাগতিকরা। দ্বিতীয়ার্ধে আসে আরও দুই গোল। সফরকারীদের গোলরক্ষক এলয় রুম মোট নয়টি সেভ না করলে আর্জেন্টিনার জয়ের ব্যবধান হতে পারত আরও বড়!
মেসি ম্যাচের ২০ থেকে ৩৭- এই ১৭ মিনিটের ব্যবধানে হ্যাটট্রিক আদায় করে নেন। প্রথম লক্ষ্যভেদের মাধ্যমে পিএসজি তারকা স্পর্শ করেন জাতীয় দলের জার্সিতে শততম গোল। আর্জেন্টিনার হয়ে ১৭৪ ম্যাচে এখন তার গোল ১০২। আন্তর্জাতিক মঞ্চে ৩৫ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডের আগে গোলের সেঞ্চুরি করেছেন দুজন। তারা হলেন ইরানের আলী দাইয়ি ও পর্তুগালের ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো।
মেসি তিন গোল করার পাশাপাশি আরেকটি গোলে অবদান রাখেন। তিনি ছাড়াও প্রথমার্ধে জাল খুঁজে নেন নিকোলাস গঞ্জালেজ ও এঞ্জো ফার্নান্দেজ। দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নেমে ব্যবধান বাড়ান আনহেল দি মারিয়া। ম্যাচের শেষদিকে নিশানা ভেদ করেন গঞ্জালো মন্তিয়েল।
গোটা ম্যাচে ৬০ শতাংশ সময় বল দখলে রাখা আর্জেন্টিনা গোলমুখে ২৭টি শট নেয়। এর মধ্যে লক্ষ্যেই ছিল ১৭টি। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ৮৬ নম্বরে থাকা কুরাসাও গোলমুখে ছয়টি শট নিয়ে একটিও লক্ষ্যে রাখতে পারেনি। তাই পোস্টের নিচে প্রায় অলস সময় কাটান স্বাগতিকদের গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ।
তৃতীয় মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত আর্জেন্টিনা। ডি-বক্সে মেসির পাসে ফাঁকায় বল পেয়ে যান লাউতারো মার্তিনেজ। কেবল টোকা দিলেই গোল! কিন্তু তালগোল পাকিয়ে ঠিকমতো শট নিতে ব্যর্থ হন তিনি। কিছুক্ষণ পর মেসির দুটি প্রচেষ্টা ভেস্তে দেন রুম। আর ১৪তম মিনিটে লাউতারোর শট অল্পের জন্য থাকেনি লক্ষ্যে।
ছয় মিনিট পরই আসে মেসির কাঙ্ক্ষিত শততম গোলের মুহূর্ত। জিওভানি লো সেলসো ডি-বক্সে খুঁজে নেন তাকে। প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের বাধা এড়িয়ে মেসি শট মারেন ডান পায়ে। বল জালে জড়ালে তিনি মেতে ওঠেন উল্লাসে।
পিছিয়ে পড়ার ধাক্কা সামলে নেওয়ার সুযোগ মেলেনি কুরাসাওয়ের। তিন মিনিট পর ফের গোল হজম করে তারা। হার্মান পেজ্জেয়ার হেড তাদের অধিনায়ক কুকো মার্টিনা গোললাইন থেকে ফেরানোর পর আরেকটি হেডে গোল করেন গঞ্জালেজ।
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের দুইয়ে থাকা আর্জেন্টিনার আক্রমণের ঝাপটা চলতে থাকে। চার মিনিটের মধ্যে আরও তিনবার বল জালে পাঠায় তারা। ৩৩তম মিনিটে গঞ্জালেজের পাসে বাঁ পায়ের শটে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন মেসি। ৩৭তম মিনিটে লো সেলসোর লম্বা করে বাড়ানো বল নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন তিনি। এরপর নিচু শটে হ্যাটট্রিকের স্বাদ নেন মেসি। মাঝে ৩৫তম মিনিটে দূর থেকে নিশানা ভেদ করেন এঞ্জো। তাকে বলের যোগান দেন মেসি।
৪৮তম মিনিটে মেসির ফ্রি-কিক ছিল না বিপজ্জনক। কিছুক্ষণ পর লাউতারোকে দুই দফা হতাশ করেন রুম। ৭১তম মিনিটে ফের নিজের সামর্থ্যের ছাপ রাখেন কুরাসাওয়ের গোলরক্ষক। মেসির রক্ষণচেরা পাসের সুবাদে তাকে একা পেয়েও পরাস্ত করতে পারেননি গঞ্জালেজ। পরের মিনিটে দি মারিয়ার ক্রসে পাওলো দিবালার হেড চলে যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে।
৭৮তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোলদাতাদের তালিকায় নাম ওঠান দি মারিয়া। এর আগে তিনি নিজেই আদায় করেন স্পট-কিক। তার শট ডি-বক্সে লাগে মার্টিনার হাতে। ৮৭তম মিনিটে দিবালার পাসে প্রতিপক্ষের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন মন্তিয়েল। শেষ বাঁশি বাজলে আর্জেন্টিনা মাঠ ছাড়ে উৎসবমুখর পরিস্থিতিতে।
Comments