চাপ এড়াতেই গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলা?
প্রশ্নটা হয়তো অদ্ভুত শোনাচ্ছে। প্রসঙ্গটাও কারো কাছে মনে হতে পারে অবান্তর। তবে কয়েকটি দৃশ্যপট পাশাপাশি রাখলে পেশাদারিত্বের হাল আঁচ করতে পারার কথা। গণমাধ্যমের প্রতি প্রতিপক্ষ দলগুলোর মনোভাব, গুরুত্বের তুলনামূলক অবস্থাও একটা পরিষ্কার ছবি দিতে পারে।
টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগে শনি ও রোববার দুদিন অনুশীলন আগে থেকেই ছিল চূড়ান্ত। চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত নিবিড় অনুশীলন করে আয়ারল্যান্ড। অনুশীলন শেষ করে দলের প্রতিনিধি হয়ে গণমাধ্যমে হাজির হন রস অ্যাডাইয়ার। সিরিজ নিয়ে নিজেদের ভাবনার কথা জানান তিনি। এমন আনুষ্ঠানিকতাই স্বাভাবিক দৃশ্য।
এদিন দুপুর ২টা থেকে ছিল বাংলাদেশ দলের অনুশীলন। এসব দিনে সাধারণত অনুশীলনের আগে কিংবা পরে গণমাধ্যমে হাজির হন দলের কোন প্রতিনিধি। তবে এই প্রথা গত কয়েকদিন ধরেই আর বহাল রাখছে না বাংলাদেশ দল। কয়েকবার অনুরোধের পর এদিনও কাউকে হাজির করা হয়নি। কোন মিডিয়া কার্যক্রম যে রাখা হবে না সেটাও আগে থেকে জানানো হয়নি।
তার আগে ইংল্যান্ড বা ভারত সিরিজে পেছনে ফিরে গেলেও মিলবে একই দৃশ্য। প্রতিপক্ষ দলগুলো যেদিনই অনুশীলন করেছে, কাউকে না কাউকে হাজির করেছে গণমাধ্যমে। বাংলাদেশে হেঁটেছে দূরত্বে, ব্যতিক্রমী পথে। কেবল ম্যাচের আগের দিন ও ম্যাচের দিনের আনুষ্ঠানিক প্রেসমিটে নিজেদের সীমাবদ্ধ রেখেছে তারা।
সংবাদ সম্মেলনে কে আসবে সেটা নিয়ে কোন আইন না থাকলেও খেলার আগের দিন অধিনায়কদেরই রাখা হয়। আইসিসি তাদের ইভেন্টে প্রিভিউর দিনে অধিনায়কদের হাজির করে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে। বাংলাদেশ দল এই জায়গাতেও বেশ ব্যতিক্রম। গত ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের সময় অধিনায়ক হয়েও একদিনও গণমাধ্যমে হাজির হননি সাকিব আল হাসান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগেও তাকে পাওয়া যায়নি, সিরিজ শেষে অবশ্য এসেছিলেন।
বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান তানভীর আহমেদ টিটো দ্য ডেইলি স্টার এই বিষয়ে তাদের নীতি পরিষ্কার করেছেন, নিজেদের সীমাবদ্ধতাও জানিয়েছেন তিনি, 'আমাদের নীতি হচ্ছে প্রি-ম্যাচ একটা এবং ম্যাচ ডেতে পোস্ট ম্যাচ একটা। আর বাকি সময় কথা বলা, না-বলা খেলোয়াড়রা অনেক সময় সিদ্ধান্ত নেয়। খেলোয়াড়রা সিদ্ধান্ত নেয় এখন কথা বলতে চায় বা চায় না। সেই অনুযায়ী অনেকটা ওদের ইচ্ছার উপর হয়। '
তানভীর জানান, ম্যাচের আগের দিন ও ম্যাচের দিন সংবাদ সম্মেলন করা বাধ্যতামূলক। সেই ব্যবস্থা করেন তারা। এর বাইরে তার আগের দিনের কার্যক্রম ঠিক করে টিম ম্যানেজমেন্ট। তানভীরের মতে এটা অনেকটা অধিনায়কের মনোভাবের উপরও নির্ভর করে, 'এটা একেকটা অধিনায়কের উপরও নির্ভর করে। অধিনায়ক যখন সিদ্ধান্ত নেয় একটা পলিসিতে যাব তাহলে ওই অনুযায়ী চলে আরকি।'
তিনি জানান, অনেক সময় প্রশ্ন ও খবরের চাপ এড়াতেও বাংলাদেশ দল নিতে পারে এমন কৌশল, 'এটা দলের যে সভা হয় সেখানে সিদ্ধান্ত নেয় যে আমরা আলাদা করে কথা বলব না। যেটা কোন নিউজ হলে পরে কোন চাপ পড়ে সেকারণেও হয়ত সিদ্ধান্ত নেয় আরকি। এটা হচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্টের থেকে আসে। আমাদের তরফ থেকে অফিসিয়ালি যেটা মেন্টেন করা হয় ম্যাচের আগের দিন আর ম্যাচ শেষ হলে একটা। এর বাইরে অনেক সময় দল সিদ্ধান্ত নেয় যে এখন আমরা আলাদা করে আর কথা বলব না।'
'এটা খেলোয়াড়দের উপর নির্ভর করে। কেউ যদি কথা বলতে চায় তাহলে তো বলবে এটা স্বাভাবিক। কেউ না চাইলে আমরা তো জোর করতে পারি না যে বলতেই হবে।'
তবে পেশাদার ক্রিকেটার হলে গণমাধ্যমে হাজির হওয়া, সব রকম প্রশ্ন সামাল দেওয়াও ক্যারিয়ারেরই একটা অংশ। অনেকটা রুটিন কাজও বটে। খেলার মাঠের চাপের মতন বাইরের চাপও সমান দক্ষতায় সামলানো যেকোনো ক্রীড়াবিদের ভাবমূর্তিকে করে সমুন্নত।
শনিবার গণমাধ্যমকে অনুশীলন দেখতেও কিছুটা দূরত্বে রাখতে চেয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। জানা গেছে, কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে কোন ফুটেজ প্রচার হতে দিতে চান না। এমন না যে অনুশীলনে বিশেষ কিছু করেছে বাংলাদেশ। সেই গড়পড়তা অনুশীলন হয়েছে এদিনও। অনুশীলনের ফুটেজ থেকে তৈরি হওয়া বিবিধ কন্টেন্ট যে দলের ভেতর অস্বস্তি তৈরি করছে, তাদের আচরণে কিছুটা তা বেরিয়েও এলো।
Comments