শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় ১০ পোর্টেবল অ্যাপস

ধরুন আপনি আপনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারে গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ করতে বসেছেন। কিন্তু বেশিরভাগ পাবলিক কম্পিউটারের মতো এটিও সেই একই দোষে দুষ্ট- নতুন কোনো প্রোগ্রাম ইনস্টলের অনুমতি নেই। অথচ কাজটি শেষ করতে আপনার একটি নির্দিষ্ট প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যারের প্রয়োজন। তাহলে উপায় কী?    
ছবি: সংগৃহীত

ধরুন আপনি আপনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারে গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ করতে বসেছেন। কিন্তু বেশিরভাগ পাবলিক কম্পিউটারের মতো এটিও সেই একই দোষে দুষ্ট- নতুন কোনো প্রোগ্রাম ইনস্টলের অনুমতি নেই। অথচ কাজটি শেষ করতে আপনার একটি নির্দিষ্ট প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যারের প্রয়োজন। তাহলে উপায় কী?    

এ ক্ষেত্রে আমাদের উপকারে আসতে পারে বহনযোগ্য সফটওয়্যার। একটি পেনড্রাইভ কিংবা ক্লাউড স্টোরেজের সুবাদে ব্যবহারকারী সহজেই এমন সফটওয়্যার সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে পারেন যেগুলো ব্যবহারের জন্য ইনস্টলেশনের কোনো প্রয়োজন নেই। চলার পথে ল্যাপটপে বসে এ সফটওয়্যারগুলো দিয়ে অনায়াসে প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সেরে ফেলা সম্ভব।

বহনযোগ্য সফটওয়্যারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, এটি সহজেই দুটি কম্পিউটারের মাঝে সংযোগ স্থাপন করতে পারে। আর এর ফলে অন্য সফটওয়্যারগুলোও কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হয় না, কম্পিউটারের সেটিংসেও আনতে হয় না কোনো পরিবর্তন। শুধু বহনযোগ্য সফটওয়্যারটির কাজ করবার মতো পর্যাপ্ত জায়গা স্টোরেজে থাকলেই হলো।

তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক ব্যবহার উপযোগী সেরা ১০টি বহনযোগ্য সফটওয়্যার-    

গুগল ক্রোম পোর্টেবল

যদি আপনি একটি নির্দিষ্ট ইন্টারনেট ব্রাউজারের একনিষ্ঠ গ্রাহক হয়ে থাকেন, তবে হুট করে অন্য কোনো ব্রাউজার ব্যবহার করাটা আপনার জন্য খানিকটা অস্বস্তিরই বটে। তাই বর্তমানে প্রায় সব ব্রাউজারেরই পোর্টেবল বা বহনযোগ্য সংস্করণ পাওয়া যায়। তবে গুগল ক্রোম এ ক্ষেত্রে বেশ খানিকটা এগিয়ে। কেন না, এটি গুগল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আপনাকে আপনার গুগল সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত করে। ফলে আপনি যে ব্রাউজারে কাজ করে অভ্যস্ত, সেটির বুকমার্ক থেকে শুরু করে সেটিংসের যাবতীয় বিষয় 'পোর্টেবল ভার্শনে' পাচ্ছেন।

লিব্রাঅফিস পোর্টেবল

একটি জনপ্রিয় ওপেন সোর্স অফিস সফটওয়্যার। আমাদের একাডেমিক, দাপ্তরিক নানা কাজে এই সফটওয়্যারটির ব্যবহার রয়েছে। রাইটার (লেখার জন্য), ক্যাল্ক (স্প্রেডশিটস), ইমপ্রেস (প্রেজেন্টেশন), ড্র (ভেক্টর চিত্রের জন্য), বেজ (ডেটাবেজ) ইত্যাদি এই সফটওয়্যারটির গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। যা দিয়ে অফিসের মোটামুটি সব কাজই করা সম্ভব। এর বহনযোগ্য সংস্করণেও এই সুবিধাগুলো রয়েছে। অর্থাৎ, যেকোনো স্থানে বসেই আপনি অফিসের কাজ করতে পারছেন। তবে যেহেতু এই সফটওয়্যারটি বহু সেবার সমন্বয়, এটি জায়গাও খানিকটা বেশি দখল করে।

ব্লেন্ডার পোর্টেবল

ওপেন সোর্স থ্রিডি গ্রাফিক্স সফটওয়্যার হিসেবে ব্লেন্ডারের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। অ্যানিমেটেড ফিল্ম, থ্রিডি মডেল, মোশন গ্রাফিক্স, ভিজুয়াল ইফেক্টস ইত্যাদি তৈরিতে এর জুড়ি মেলা ভার। গুরুত্বপূর্ণ গ্রাফিক্সের কাজ পড়ে রয়েছে অথচ হাতের কাছে নিজের কম্পিউটার নেই, সেক্ষেত্রে কার্যকরী সমাধান হতে পারে ব্লেন্ডারের বহনযোগ্য সংস্করণ।

শটকাট

ভিডিও সম্পাদনার জগতে শটকাট বেশ জনপ্রিয় একটি নাম। এর বহনযোগ্য সংস্করণও গ্রাহক পরিষেবার দিক থেকে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। দারুণ সব বৈশিষ্ট্য একে বরং 'পোর্টেবল' হিসেবেই বেশি কার্যকরী করেছে। ভিডিও ফাইলে হুটহাট কোন পরিবর্তনের কাজে এর তুলনা নেই, এটি ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন নেই ইন্সটলেশনেরও। মিডিয়া প্রজেক্টে শেষ মুহূর্তের সমন্বয়ের জন্য এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করা যেতে পারে।

ফোটোডেমন

এটি মূলত ছবি সম্পাদনার একটি সফটওয়্যার যা সহজে বহনযোগ্য। একটি বহনযোগ্য সফটওয়্যার হিসেবে এর বৈশিষ্ট্যসমূহ বেশ সমৃদ্ধ। ছবিতে তাৎক্ষণিক কোনো পরিবর্তন করা, ছবিতে লেখা যোগ করা এমনকি স্ক্রিনশট নেওয়ার সুবিধাও এতে রয়েছে। বেশ দ্রুতগতির এই সফটওয়্যারটি স্টোরেজের খুব বেশি জায়গাও দখল করে না।

টেক্সটিফাই

টেক্সটিফাইয়ের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছে, এমন যেকোনো লেখাকে তারা টেক্সটে রূপান্তর করতে পারে। গবেষণাধর্মী কাজে এই সফটওয়্যারটি অত্যন্ত কার্যকর। যখন ব্যবহারকারী কোনো ভিডিও কিংবা ছবি থেকে নির্দিষ্ট কোনো টেক্সট সংগ্রহ করতে চাইছে, অর্থাৎ লিখিত আকারে সেটি পেতে চাইছে, তখন এই সফটওয়্যারটি বেশ দরকারি।

গিম্প পোর্টেবল

ভীষণ জনপ্রিয় গ্রাফিক্স এডিটর, যেটির বহনযোগ্য সংস্করণও সমানভাবে কার্যকরী। ছবি সম্পাদনার ক্ষেত্রে অনেক পেশাদারই বিনামূল্যের এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে থাকেন। এটির বহনযোগ্য সংস্করণে সম্পাদনার প্রয়োজনীয় সকল ফিচার এবং বিল্ট-ইন এক্সটেনশনস রয়েছে। অর্থাৎ, ব্যবহারকারীর পক্ষে এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে যেকোন জায়গায় বসে গ্রাফিক্স সম্পাদনা করা সম্ভব।   

ভিএলসি মিডিয়া প্লেয়ার পোর্টেবল

বৈশ্বিক প্রেক্ষিতে এই মিডিয়া প্লেয়ারটি দারুণ জনপ্রিয়। প্রায় সব ধরনের অডিও এবং ভিডিও কোনো বাধা ছাড়াই এই প্লেয়ারে চালানো সম্ভব। এর বহনযোগ্য সংস্করণও দারুণ কার্যকরী। বিশেষত পাবলিক কম্পিউটারে কোনো অডিও-ভিডিও ফাইল চালনার ক্ষেত্রে বহনযোগ্য ভিএলসি মিডিয়া প্লেয়ার হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ এক হাতিয়ার। এই সফটওয়্যারটিও বিনামূল্যে সংগ্রহ করা সম্ভব।  

সিক্লিনার পোর্টেবল

বলা হয়ে থাকে সিস্টেম মেইনটেন্যান্স অর্থাৎ রক্ষণাবেক্ষণের কাজে এই সফটওয়্যার বিশ্বে সেরাদের কাতারে থাকে। টেম্পোরারি ফাইল এবং কুকিসের মতো জিনিস কম্পিউটার থেকে পরিষ্কার করে এটি কম্পিউটারের জায়গাই শুধু বৃদ্ধি করে না, এর গোপনীয়তাও সুরক্ষিত রাখে।

ধীরগতির কম্পিউটারে এই সফটওয়্যার ব্যবহারে সুফল পাওয়া যায়। বন্ধুবান্ধব বা সহকর্মীদের কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণে এই সফটওয়্যারের বহনযোগ্য সংস্করণ দিয়ে সাহায্য করা যায়।  

লিঙ্গোজ

এটিকে ডিজিটাল শব্দকোষ বললে খুব একটা অত্যুক্তি হবে না। ৮০টির বেশি ভাষা এই সফটওয়্যারে রয়েছে। এর পাশাপাশি এটি অনুবাদেও সিদ্ধহস্ত, রয়েছে অন-স্ক্রিন ওয়ার্ড ক্যাপচারের সুবিধা। অফলাইনেও এই সফটওয়্যার দারুণ উপযোগী। শেষ মিনিটের লেখা সম্পাদনায় সফটওয়্যারটির বহনযোগ্য সংস্করণ ব্যবহৃত হতে পারে।  

তথ্যসূত্র: টেক রাডার, টেক স্পট, মেক ইউজ অব

গ্রন্থনা: কৌরিত্র তীর্থ 
 

Comments