ভালো ছবির জন্য সঠিক আইএসও কেন গুরুত্বপূর্ণ

ইমেজ সেন্সরের আইএসও সেটিং বাড়ানোর মানে এর গ্রেইনের (ঝিরিঝিরি ছবি) পরিমাণ বাড়ানো। ছবিতে যত কম গ্রেইন থাকে ছবি তত স্পষ্ট হয়। কম আলোতে আইএসও বাড়িয়ে ছবি তুলতে গ্রেইন বেড়ে যেতে পারে।   
ভালো ছবির জন্য সঠিক আইএসও কেন গুরুত্বপূর্ণ
ছবি: সংগৃহীত

আপনি যদি খুব ভালো মানের ছবি তুলতে চান। তাহলে আপনার ক্যামেরা সেটিংসের কিছু খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে জেনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজকে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে তা হচ্ছে আইএসও। 

ক্যামেরার আইএসও সেটিংসের পরিবর্তন আপনার ছবির উজ্জ্বলতার ওপর প্রভাব ফেলে। আজকের আলোচনায় দেখে নেওয়া যাক আইএসও কীভাবে কাজ করে এবং কীভাবে আপনি সঠিক আইএসও সেটিং করবেন।

আইএসও কী এবং কীভাবে এর উৎপত্তি 

ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডস অর্গানাইজেশনের সংক্ষিপ্ত রূপ আইএসও। আইএসও ক্যামেরা সেটিংসটি অনেকটা পূর্ববর্তী দুটি সিস্টেম ডিআইএন এবং এএসএ-এর উত্তরসূরি হয়ে এসেছে। ১৯৭৯ সালে ফিল্মের গতিকে আইএসও সিস্টেমের অধীনে প্রমিত করা হয়।

অ্যানালগ ও ডিজিটাল ফটোগ্রাফিতে আইএসও 

আইএসও-এর মানের ভিত্তিতে একটি ফিল্ম বা ইমেজ সেন্সরের আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা মাত্রা বোঝানো হয়। ডিজিটাল ক্যামেরার ক্ষেত্রে সাধারণত আইএসও সেটিংসের মান ১০০ থেকে ৬,৪০০ পর্যন্ত হয়ে থাকে। 

তবে পেশাদার ক্যামেরাগুলোতে সর্বনিম্ন আইএসও ৩ এবং সর্বোচ্চ আইএসও ৮১৯,২০০ পাওয়া যেতে পারে। আইএসও-এর মান যত বেশি হবে, কম আলোতে তত বেশি ছবি তোলা যাবে। 

অ্যানালগ ফটোগ্রাফিতে ফিল্মগুলো স্ফটিক বা রঞ্জক কণা ধারণকারী আলোক সংবেদনশীল সাসপেনশনের প্রলেপ থাকে। সেখানে স্ফটিক বা কণার আকারের ওপর নির্ভর করে ফিল্মটির আলোক সংবেদনশীলতা কমবেশি হয়ে থাকে।

ডিজিটাল ফটোগ্রাফিতে এসে এই ফিল্মগুলো ইমেজ সেন্সর দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। তবে প্রযুক্তিগতভাবে ইমেজ সেন্সরের আলোর প্রতি সংবেদনশীলতার মান নির্দিষ্ট। তবুও আপনি আইএসও সেটিংস সামঞ্জস্য করে এর সংবেদনশীলতা বাড়াতে বা কমাতে পারবেন।  

ইমেজ সেন্সর কীভাবে কাজ করে?

ইমেজ সেন্সরগুলো বৃষ্টির মতো আগত ফোটন কণা বা আলোকে গ্রহণ করে। অ্যাপারচারের পেছনে বসে থাকা ইমেজ সেন্সরে রয়েছে লাখ লাখ বিচ্ছিন্ন ও আলোক সংবেদনশীল ইউনিট। যা ফটোসাইট নামেও পরিচিত।

প্রতিটি ফটোসাইট একটি ফটোডায়োড এবং একটি চার্জ পরিবর্ধক দ্বারা গঠিত। যখন আলো ডায়োডকে আঘাত করে তখন সেগুলো একটি বৈদ্যুতিক চার্জ তৈরি করে। 

আপনি যখন একটি ছবি তোলেন। তখন এই পৃথক ইউনিটগুলোর প্রত্যেকটি ক্যামেরার বাইরে থেকে আসা আলোর সংস্পর্শে আসে। তখন প্রতিটি ফটোসাইট ইমেজ সেন্সরে তার অনন্য অবস্থানে থেকে আসা আলোকে গ্রহণ করে। তারপর সেই আলোকে বৈদ্যুতিক চার্জে রূপান্তর করে।

ক্যামেরার ইমেজ প্রসেসর এই বৈদ্যুতিক চার্জের যোগফলকে রূপান্তর করে একটি ফটোগ্রাফ বা ছবিতে। প্রসেসরটি বিভিন্ন কাজও করে থাকে যেমন, এক্সপোজার সামঞ্জস্য, সাদার ভারসাম্য রক্ষা এবং ছবির গুণমান বজায় রাখা।

আইএসও সেটিংস পরিবর্তনে যা হয়

ইমেজ সেন্সরের আইএসও সেটিং বাড়ানোর মানে এর গ্রেইনের (ঝিরিঝিরি ছবি) পরিমাণ বাড়ানো। ছবিতে যত কম গ্রেইন থাকে ছবি তত স্পষ্ট হয়। কম আলোতে আইএসও বাড়িয়ে ছবি তুলতে গ্রেইন বেড়ে যেতে পারে।   

নেটিভ আইএসও 

আইএসওকে ১০০ দ্বারা বিভাজ্য ব্লকে পরিমাপ করা হয়। আইএসও বাড়ানো বা কমানোর ক্ষেত্রে এই ধাপগুলো দ্বিগুণ আকারে বাড়ে বা কমে। যেমন, আইএসও ২০০-এর পরবর্তী ধাপ আইএসও ৪০০ হয়। এরপর আইএসও ৪০০-এর পরের ধাপ আইএসও ৮০০ হয়।

কম আইএসও সেটিংস ব্যবহার করবেন কখন

আইএসও ১০০-এর নিচের যেকোনো সেটিংসই কম আইএসও ক্যামেরা সেটিং হিসেবে বিবেচিত হবে। কিন্তু কম আইএসওতে শুটিংয়ের আসলে কী সুবিধা?

আপনার আইএসও যত বেশি হবে আপনার ছবি তত বেশি ডিজিটাল গ্রেইন দ্বারা জর্জরিত হবে। আপনার আইএসও সেটিং বাড়ানোর ফলে আসলে লেন্সের মধ্য দিয়ে আসা আলোর পরিমাণ বাড়ে না। বরং আইএসও বাড়িয়ে দেওয়ার অর্থ হলো ফটোসাইটগুলোকে পরিবেশ থেকে 'নতুন' তথ্য টেনে আনার নির্দেশ দেওয়া। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় পরিবেশে এত বেশি অতিরিক্ত তথ্য বা ডিটেইলস থাকে না। 

এর ফলে দেখা যায়, সেন্সরের 'অনুমান'-এর ওপর নির্ভর করা কাজে অনেক ছোট ছোট ভুল হয়। যা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ছবিটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। যদি আপনি একটি স্বচ্ছ এবং পরিষ্কার ছবি চান, সেক্ষেত্রে সর্বনিম্ন সম্ভাব্য আইএসও দিয়ে শুটিং করাই হবে সবচেয়ে উত্তম। 

ছবি তোলার ক্ষেত্রে যদি আপনার পরিবেশ উজ্জ্বল থাকে তাহলে এ সব পরিস্থিতে এক্সপোজারের মাত্রা অনেক বেশি থাকে। তাই তখন উচ্চ আইএসও-তে ছবি তুললে আপনার ছবি ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই বেশি আলোতে কম আইএসও ব্যবহার জরুরি। 

উচ্চ আইএসও সেটিংস ব্যবহার

আপনি যদি রাতে বা কম আলোতে শুটিং করেন সে ক্ষেত্রে উচ্চ আইএসও সেটিংস ব্যবহার করা উত্তম। এসব পরিস্থিতিতে ক্যামেরার আইএসও-এর সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি, আপনার ছবি ভালো আসতে সাহায্য করবে। এ ক্ষেত্রে নিখুঁত স্পষ্টতার বিনিময়ে পর্যাপ্ত এক্সপোজার পাওয়ার জন্য আপনি এটি করতে পারেন। যা কখনো কখনো ডিজিটাল নয়েজের কারণ হলেও দিনশেষে ফলাফলটি হয় চমৎকার।

আপনি যদি আপনার শাটারের গতি এবং অ্যাপারচার ব্যাসের পরিপ্রেক্ষিতে আটকে যান, তাহলে আইএসও হতে পারে আপনার একমাত্র বিকল্প। যারা লো-এক্সপোজার ফটোগ্রাফি উপভোগ করেন, তাদের এমন একটি ক্যামেরায় বিনিয়োগ করা উচিত যেটি কম আলোয় ছবি তুলতে পারদর্শী।

সনি আলফা সিরিজটি প্রকাশের সময় সেটি এই ক্ষেত্রে একটি বিখ্যাত গেম চেঞ্জার ছিল। উল্লেখযোগ্যভাবে সনি আলফা এ৭-এর সর্বোচ্চ আইএসও রেটিং ছিল ২৫,৬০০।

কোন পরিস্থিতিতে কত আইএসও থাকা উচিত

ফটোগ্রাফির অন্যান্য ক্ষেত্রের মতোই এ ক্ষেত্রেও আসলে কোনো সঠিক বা ভুল উত্তর নেই। শুধু ছবির ফলাফলের ওপরই তা নির্ভর করে। সেটি এবার ভালো কিংবা খারাপ দুটিই আসতে পারে। তবে আপনি যে আলোর নিচে শুটিং করছেন, তার ওপর নির্ভর করে আইএসও-এর সেরা সেটিংটি ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।

তাই আপনি যেন ভালোর দিকে থাকেন সেজন্যে আপনার ক্যামেরার নেটিভ আইএসও-এর সংবেদনশীলতা আপনার পরিস্থিতি অনুযায়ী নির্ধারণ করে নিন। 

আর যদি আপনি সেটি ঠিকমতো নির্ধারণ করতে ব্যর্থ হন। তাহলে বলা যায়, কম আইএসও-এর লো-ফাই লুকও যেমন জনপ্রিয় আবার উচ্চ আইএসও-এর তৈরি গ্রেইনও অনেকের কাছে পছন্দনীয়। 

 

তথ্যসূত্র: এমইউও
গ্রন্থনা: আহমেদ বিন কাদের অনি

 

Comments