ইন্টারনেট স্পিড টেস্ট: যে ৭ ভুল করবেন না

তবে আপনার ইন্টারনেট সংযোগ কতটা দ্রুত তা সঠিকভাবে জানার আগে কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে জেনে নেওয়া দরকার
ইন্টারনেট স্পিড টেস্ট: যে ৭ ভুল করবেন না
ছবি: সংগৃহীত

অনেক সময় কোনো জরুরি কাজ করতে গিয়ে হঠাৎ করেই ইন্টারনেটের কম গতির ঝামেলায় পড়তে হয়। এতে অনেক সময় মেজাজ বিগড়ে যেতে পারে। আপনি চাইলে দেখে নিতে পারেন ঠিক কী পরিমাণ ইন্টারনেটের গতি পাচ্ছেন।

ইন্টারনেটের গতি নির্ণয় বেশ সহজ কাজ। অনলাইনে প্রচুর পরিষেবা রয়েছে যেগুলোয় আপনি আপনার ইন্টারনেটের গতি পরীক্ষা করতে পারবেন। 

তবে আপনার ইন্টারনেট সংযোগ কতটা দ্রুত তা সঠিকভাবে জানার আগে কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে জেনে নেওয়া দরকার। যেমন-

ইন্টারনেট বা ওয়াইফাই গতির পরীক্ষা করবেন যেভাবে

প্রক্রিয়াটি বেশ সহজ। ইন্টারনেটে অসংখ্য সাইট রয়েছে যেগুলোতে আপনি এই কাজটি করতে পারবেন। আপনার ব্রাউজারে 'ইন্টারনেট স্পিড টেস্ট' কিংবা 'ওয়াইফাই স্পিড টেস্ট' লিখে সার্চ করলে ফাস্টডটকম, উকলা, স্পিডচেক-এর মত অসংখ্য সাইট পেয়ে যাবেন। যেকোনো একটা সাইট থেকে গো বা রান টেস্ট বোতামে চাপুন। তারপর প্রক্রিয়াটি শেষ হওয়ার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন।  

ইন্টারনেটের গতির পরীক্ষাটিতে আপনাকে ৩টি বিষয় দেখানো হবে।

পিং রেট বা লেটেন্সি

পিং রেট নেটওয়ার্কে লেটেন্সি বা বিলম্ব পরিমাপ করে। একটি ডেটা প্যাকেট প্রেরক থেকে প্রাপকের কাছে যেতে এবং আবার ফিরে আসতে যে সময় নেয় সেটি হচ্ছে লেটেন্সি। উচ্চ লেটেন্সির কারণে অনলাইন গেমিংয়ের ক্ষেত্রে আমরা ল্যাগ দেখতে পাই। তাই পিং বা লেটেন্সি যত কম হয়, তত ভালো।

ডাউনলোড স্পিড

ডাউনলোড স্পিড সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ডেটা কত দ্রুত ডাউনলোড হয় এটি তা নির্দেশ করে। 

আপলোড স্পিড

এর মাধ্যমে বোঝা যায় আপনি অনলাইনে কত দ্রুত ডেটা প্রেরণ বা আপলোড করতে পারছেন। যেমন, কোনো ক্লাউড পরিষেবাগুলোতে বিভিন্ন ফাইলের ব্যাকআপ তৈরির ক্ষেত্রে এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। 

এই ৩টি বিষয়ের মাধ্যমে আপনি আপনার ইন্টারনেটের গতির একটি সার্বিক চিত্র পাবেন। তবে এই পরীক্ষা চালানোর আগে কয়েকটি বিষয় মনে রাখা জরুরি। 

স্পিড টেস্ট টুল বাছাই

ইন্টারনেটের গতি পরীক্ষার সময় কোন পরিষেবাটি সবচেয়ে ভালো হবে তা নির্বাচন নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। আপনি যদি টিভি স্ট্রিমিংয়ের জন্য আপনার ইন্টারনেটের গতি পরীক্ষা করতে চান, তাহলে নেটফ্লিক্স-এর ফাস্ট ডট কম ব্যবহার করতে পারেন। এটি নেটফ্লিক্স সার্ভারের সঙ্গে সংযোগ করে সঠিক ফলাফল দিতে পারে। 

অনলাইন স্পিড টেস্টগুলোর পরিবর্তে একটি নিবেদিত স্পিড টেস্ট অ্যাপ ব্যবহার করুন। অন্যদিকে, ফ্ল্যাশ স্পিড টেস্টগুলোর পরিবর্তে এইচটিএমএল৫ পরিষেবা বাছাই করা উত্তম।

একাধিকবার ইন্টারনেটের গতি পরীক্ষা করুন

আপনার ইন্টারনেটের গতির একটি সঠিক চিত্র পেতে হলে আপনাকে একাধিকবার সেটি পরীক্ষা করতে হতে পারে। সাধারণত ইন্টারনেটের গতি বেশ পরিবর্তনশীল হয়। আপনি একই অবস্থায় দুবার পরীক্ষা করে ভিন্ন ফলাফল পেতে পারেন। তাই আপনার ইন্টারনেটের গতির প্রকৃত চিত্র পেতে আরও কয়েকবার করে পরীক্ষা করে দেখুন।

গতি পরীক্ষার সময়

দিনের কোন সময়ে আপনি ইন্টারনেটের গতি পরীক্ষা করছেন সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একই সময়ে কতজন একই ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন তার ওপর ইন্টারনেটের গতি নির্ভর করে। 'পিক আওয়ার' বা যে সময় অধিক সংখ্যক মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তখন গতি স্বাভাবিকভাবেই ধীর দেখাবে। তাই পিক আওয়ারের পাশাপাশি অফ-পিক আওয়ারেও পরীক্ষা চালান। তারপর দুটির মধ্যে তুলনা করে আরও ভালোভাবে আপনি গতির বিষয়টি বিচার করতে পারবেন।

কোন জায়গায় পরীক্ষা করছেন তা খেয়াল করুন

ভুল জায়গায় পরীক্ষা আপনার ইন্টারনেটের গতির পরীক্ষার ফলাফলকে প্রভাবিত করবে। অবশ্য আপনার কী জানতে চান তার ওপর সঠিক জায়গাটি নির্ভর করতে পারে।

  • আপনি যদি শুধু আপনার ইন্টারনেটের সর্বোচ্চ গতি পরিমাপ করতে চান, তাহলে আপনার রাউটারের কাছাকাছি থেকে এটিকে সরাসরি দেখা যায় এমন একটি জায়গা থেকে পরীক্ষাটি করুন। খেয়াল রাখবেন ডিভাইস এবং রাউটারের মাঝে যেনো কোনো ধরনের বাধা না থাকে। 
  • আপনি যদি আপনার বাড়িতে রাউটার রাখার জন্য সেরা অবস্থান খুঁজে বের করতে চান, তাহলে প্রতিটি ঘরে একবার করে পরীক্ষা চালান। তারপর ফলাফলগুলো তুলনা করুন। তারপর দেখুন কোন কক্ষে রাখলে সর্বত্র সবচেয়ে ভালো সিগন্যাল পাওয়া যায়।
  • আপনি যদি ওয়াই-ফাই ডেড স্পট বা দুর্বল কভারেজের জায়গাগুলো শনাক্ত করার চেষ্টা করে থাকেন, তাহলে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় পরীক্ষা করে দেখুন।

অন্যান্য ডিভাইসের ইন্টারনেট সংযোগ

যে ডিভাইসে গতি পরীক্ষা করছেন সেটি সর্বোচ্চ ব্যান্ডউইথ পাচ্ছে কি না সেটি আগে নিশ্চিত করুন। আমাদের বেশিরভাগেরই অসংখ্য ডিভাইস রয়েছে যেগুলো ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত। এসব ডিভাইস ক্রমাগত ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করে। যার ফলে ইন্টারনেটের সার্বিক গতি ধীর হয়ে পড়ে। তাই সবচেয়ে ভালো ফলাফলের জন্য, সবগুলো ডিভাইস থেকে ইন্টারনেট বন্ধ বা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করুন। আর যদি তা করতে না পারেন, তাহলে অন্য কোনো ডিভাইসে কোনো ধরনের ডাউনলোড চললে তা বন্ধ করে রাখুন।

আপনার ডিভাইস রিবুট বা রিস্টার্ট করতে ভুলবেন না

আপনি আপনার মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ থেকে শুরু করে ব্রাউজার আছে এরকম যেকোনো ডিভাইসে আপনার ইন্টারনেটের গতি পরীক্ষা করতে পারেন। কিন্তু আপনি যে ডিভাইসেই এটি করেন না কেন, আপনাকে আগে সেটি রিস্টার্ট করে নিতে হবে।

এর কারণ, যেসব ডিভাইস দীর্ঘদিন ধরে রিস্টার্ট করা হয়নি সেগুলোর ব্যাকগ্রাউন্ডে বিভিন্ন অ্যাপ বা প্রক্রিয়া চলমান থাকে। যেগুলো ইন্টারনেটের গতিকে ধীর করে দেয়। বিশেষ করে এটি পিং রেটকে প্রভাবিত করে। তাই আগে আপনার ডিভাইসটি রিস্টার্ট করুন এবং গতি পরীক্ষার পূর্বে অন্য কোনো অ্যাপ চালু করবেন না।  

ভিপিএন ব্যবহারের সময় গতি পরীক্ষা করবেন না

ইন্টারনেটের গতি পরীক্ষার সময় নিশ্চিত করুন যে আপনি ভিপিএন, প্রক্সি, ডেটা-সেভিং অ্যাপের মতো কিছু ব্যবহার করছেন না। এগুলো আপনার সংযোগকে ধীর করে দিতে পারে। তবে আপনি যদি একটি ভালো ভিপিএন খুঁজে থাকেন এবং সেটি কত দ্রুত তা পরীক্ষা করতে চান তাহলে সেটি অন্য বিষয়।

ইন্টারনেট গতির ফলাফল দিয়ে যেসব বিষয় বোঝা যায়

ইন্টারনেটের গতি পরীক্ষা আপনাকে নানাবিধ সিদ্ধান্ত নিতে এবং বিষয় বুঝতে সাহায্য করবে। যেমন-

  • আপনি যে গতির জন্য টাকা দিচ্ছেন তা পাচ্ছেন কি না সেটি বুঝতে পারবেন।
  • ইন্টারনেট প্রোভাইডার বাছাইয়ে সাহায্য করবে। 
  • একটি নতুন রাউটার সেটআপে এবং আপনার বাড়িতে কভারেজ পরীক্ষা করতে সাহায্য করবে।
  • আপনার প্রয়োজন অনুসারে যথেষ্ট গতি আছে কি না তা বুঝতে পারবেন।
  • পিক এবং অফ-পিক আওয়ার বুঝতে সাহায্য করবে।

 

তথ্যসূত্র: এমইউও 
গ্রন্থনা: আহমেদ বিন কাদের অনি

Comments