পিএসসির দীর্ঘসূত্রতায় মূল্যবান সময়ের অপচয় হচ্ছে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের

এখনো রোডম্যাপ চূড়ান্ত করতে পারেনি পিএসসি। বিসিএস পরীক্ষার প্রক্রিয়া শেষ করতে এখনো কমপক্ষে ৩ বছর সময় লাগে।
৪৩তম বিসিএস
ফাইল ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক রাকিব হাসান ২০১৯ সালে ৪১তম বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য আবেদন করেন।

প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর গত মাসে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি।

পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও ৪১তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিয়োগের জন্য সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) কবে সুপারিশ করবে সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নন রাকিব।

পিএসসি এখন ৪১তম বিসিএসের ১৩ হাজার প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা নিচ্ছে।

ইতোমধ্যে রাকিব ৪৩তম ও ৪৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাস করেছেন। লিখিত পরীক্ষার ফলাফল এখনো প্রকাশিত হয়নি। তিনি ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেবেন, কারণ তিনি জানেন না ৪১, ৪৩ না ৪৪—কোন পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি সরকারি চাকরি পাবেন।

রাকিবের ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। পিএসসিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতার কারণে কয়েক লাখ চাকরিপ্রার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

বছরের পর বছর ধরে বেকার থাকা বিসিএস প্রার্থীদের ওপর এ ধরনের দীর্ঘসূত্রতা উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে। এছাড়া, এটি প্রার্থীদের ৩০ বছর বয়সে পৌঁছানোর আগে আরও বেশিবার বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ কমাচ্ছে।

২০২১ সালের ১ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের সাড়ে ৩ মাস পর পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন জানান, ১ বছরের মধ্যে পুরো বিসিএস পরীক্ষা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে তারা ১টি রোডম্যাপ তৈরি করছেন।

তবে এখনো রোডম্যাপ চূড়ান্ত করতে পারেনি পিএসসি। বিসিএস পরীক্ষার প্রক্রিয়া শেষ করতে এখনো কমপক্ষে ৩ বছর সময় লাগে।

বর্তমানে ৪১তম, ৪৩তম, ৪৪তম ও ৪৫তম বিসিএস পরীক্ষা নিয়ে কাজ করছে সংস্থাটি।

২০২১ সালে চিকিৎসকদের জন্য বিশেষ ৪২তম বিসিএস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া মোট ৩ হাজার ৯৫৭ জন প্রার্থীকে নিয়োগ দেয় সরকার।

চাকরিপ্রার্থী সোহানুর রহমান সুমন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি গ্রেড-১ চাকরির জন্য ৪১তম বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছিলাম। স্নাতক শেষ হওয়ার পর ৪ বছর পেরিয়ে গেছে কিন্তু আমি এখনো বেকার। পরীক্ষা প্রক্রিয়া শেষ করতে পিএসসির আরও অন্তত ১ বছর সময় লাগবে। অর্থাৎ, আমি যদি নির্বাচিত না হই, তাহলে এত কঠোর পরিশ্রম করে পরীক্ষা দেওয়ার পরও আমাকে বেকার থাকতে হবে।'

২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ৪১তম বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ২০২১ সালের ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় এবং লিখিত পরীক্ষা ওই বছরের ২৯ নভেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়।

গত বছরের ১০ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয় এবং ৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে মৌখিক পরীক্ষা।

পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব ডেইলি স্টারকে বলেন, 'করোনাভাইরাস মহামারি এবং আগের বিসিএস পরীক্ষার অসম্পূর্ণ কাজের কারণে আমরা আমাদের রোডম্যাপ বাস্তবায়ন করতে পারিনি। আমরা এখন নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় সময় কমানোর জন্য কাজ করছি।'

(সংক্ষেপিত)

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments