শিক্ষার্থীদের হয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে ডাকসু নির্বাচনে জয়ী হতে চাই: বাকের মজুমদার

শিক্ষার্থীদের হয়ে রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা থেকেই আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে অংশ নিচ্ছেন মো. আবু বাকের মজুমদার।
দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে 'বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ' প্যানেলের এই প্রার্থী বলেন, 'বিগত আমলে ছাত্রলীগবিরোধী রাজনীতির কারণে নির্যাতন, হামলা ও হল থেকে বহিষ্কৃত হলেও বারবার শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছি এবং জুলাই আন্দোলনে আমার জায়গা থেকে যতটুকু করার করেছি। শিক্ষার্থীদের প্রতি আমি আমার কমিটমেন্ট কখনো ভঙ্গ করিনি।'
জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক বাকের আরও বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর কখনো ভাবিনি ডাকসু নির্বাচনে দাঁড়াবো। আমার স্বপ্ন ছিল শেখ হাসিনার পতন দেখা। সৌভাগ্যবশত আমি সেই আন্দোলন ও অভ্যুত্থানের প্রত্যক্ষ অংশীদার হতে পেরেছি। পরে ৫ আগস্টের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এসে আবারও শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে যুক্ত হই। দীর্ঘদিনের সংগ্রাম, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থেকেই মনে হলো—ডাকসুতে প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করলে সমস্যাগুলো আরও দ্রুত সমাধান সম্ভব।'
ডাকসুর জন্য ইনক্লুসিভ ও যোগ্য নেতৃত্ব নিয়ে আসতেই গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সমর্থিত এই প্যানেল গঠন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন বাকের। 'আমাদের প্যানেলের জয়ের বিষয়ে আমরা অনেক বেশি আশাবাদী, কারণ এটা এমনভাবে সাজিয়েছি যে, প্রার্থীরা সবসময় শিক্ষার্থীদের পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রামে ছিল এবং তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রেও যথেষ্ট দক্ষ ও যোগ্য,' বলেন তিনি।
জয়ী হলে বাকেরের মূল লক্ষ্য হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি গবেষণাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা। তিনি বলেন, 'এই রূপান্তরের মডেল কেমন হবে, কীভাবে হবে সেটা নিয়ে আমরা কাজ করেছি। শিক্ষার্থীদের জন্য "ওয়ান স্টুডেন্ট, ওয়ান বেড পলিসি" নেবো। এর মাধ্যমে হলের সিট সংকট তিন মাসের মধ্যে দৃশ্যমানভাবে সমাধান করা সম্ভব। প্রতিটি হলে ও ভবনে মানসম্মত খাবারের ব্যবস্থা করব, লাইব্রেরি-রেজিস্ট্রার ভবন-পরিবহনসহ সব সেবার জন্য "ওয়ান আইডি, অল সলিউশন" পদ্ধতির কথা ভেবেছি।'
'এছাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক সংস্কারের জন্য শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করা, ল্যাবরেটরির আধুনিকায়ন, পূর্ণকালীন পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু ও শিক্ষক সহকারী বা গবেষণা সহকারী নিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের গবেষণায় যুক্ত করার পরিকল্পনা করেছি,' বলেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক পরিবেশ উন্নয়নে কিছু পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন বাকের মজুমদার। তিনি বলেন, 'আমরা মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক জীবনকে বহুমাত্রিক করতে হবে। জুলাইয়ের আগে আওয়ামী লীগ এক ধরনের একমুখী সংস্কৃতি চাপিয়ে দিয়েছিল। এর বিপরীতে আমরা হলভিত্তিক মিনিপ্লেক্স এবং কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিচ্ছি। সেখানে সিনেমা, সংগীত ও সাহিত্য চর্চা হবে। এতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের সংস্কৃতিকে আরও পরিশীলিতভাবে চর্চা করতে পারবে।'
ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা পুরোপুরি নিশ্চিত না হওয়ায় লজ্জিতবোধ করেন উল্লেখ করে জুলাই আন্দোলনের অন্যতম পরিচিত মুখ বাকের বলেন, 'এটা সহজে সমাধান করা যায়—প্রতিটি হলের সামনে আনসার বা বিশেষায়িত নিরাপত্তা টিম মোতায়েন করা। পাশাপাশি অনলাইন ও অফলাইনে নারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যে মোরাল পুলিশিং ও বুলিং হয়, তার বিরুদ্ধে আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। ভুক্তভোগীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আইনি সহায়তা ও মানসিক সমর্থন দিচ্ছি।'
সবশেষে বাকের বলেন, 'শিক্ষার্থীরা অবশ্যই যোগ্য, সৎ ও কমিটেড প্রার্থীদের ডাকসুতে নির্বাচিত করবেন। আমি যদি সেই মানদণ্ডে পড়ি, তাহলে আমাকে ভোট দেবেন। আমার স্বপ্ন শুধু নির্বাচনে জেতা নয়, বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সেখান থেকে গোটা দেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজের দিকে নিয়ে যাওয়া। এটি একদিনের কাজ নয়, হয়তো ১০–১৫ বছরের সময় লাগবে। তবে আমি বিশ্বাস করি, এ যাত্রা শুরু করতে পারার মতো যোগ্যতা ও প্রস্তুতি আমার আছে।'
Comments