ডাকসু নির্বাচন

পেশিশক্তির দখলদারিত্ব থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্ত করতে ডাকসুতে দাঁড়িয়েছি: বিন ইয়ামিন

বিন ইয়ামিন মোল্লা। ছবি: সংগৃহীত

পেশিশক্তির দখলদারিত্ব থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্ত করতে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্র অধিকার পরিষদ সমর্থিত 'ডাকসু ফর চেঞ্জ' প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী বিন ইয়ামিন মোল্লা।

দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ছাত্র অধিকার পরিষদের এই সভাপতি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরপরই এখানকার রাজনৈতিক পরিবেশ দেখে ভেবেছিলাম—পেশিশক্তির দখলদারিত্ব থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্ত করতে হবে। এই মুখ্য উদ্দেশ্যেই নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি যে, দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অ্যাকাডেমিক এক্সিলেন্সির দিকে নিয়ে যাব। শিক্ষার্থীদের প্রতিটি আন্দোলনে আমি ছিলাম। দেশের স্বার্থে আন্দোলন করে জেলও খেটেছি। আমার বন্ধুরা যখন লাইব্রেরিতে পড়তেন, আমি মামলার হাজিরা দিতে যেতাম। সুতরাং শিক্ষার্থীরা জানেন যে, তাদের যেকোনো প্রয়োজনে আমাকে পাশে পাবেন এবং অধিকার আদায়ের লড়াই আমি চালিয়েই যাব।

নির্বাচনে জয়ী হলে কী করবেন, জানতে চাইলে বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, আমাদের স্লোগান 'নো মোর ডার্টি পলিটিক্স, নো মোর ভায়োলেন্স, মেক দ্য ডাকসু ফর একাডেমিক এক্সিলেন্স'। শিক্ষার্থীদের ম্যানডেট পেলে আমি তাদের সংকট দূর এবং অধিকার আদায়ে বরাবরের মতো সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করব। আমার লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের জন্য 'ওয়ান স্টুডেন্ট, ওয়ান বেড, ওয়ান টেবিল' নিশ্চিত করা। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বাসস্থান সংকট দূর করে তাদের জন্য যথাযথ পরিবেশে থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে।

'একইসঙ্গে খাবার ও পরিবহন সংকট দূর করতে কাজ করব। আমাদের রেজিস্ট্রার ভবনে বলা হয় 'গোলক ধাঁধা', যেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীরা বিড়ম্বনায় পড়েন। এই অফিসের সব কাজ অটোমেশনের আওতায় এনে এটাকে ওয়ান-স্টপ সার্ভিসে রূপান্তর করব। শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক উন্নতির জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা চালু করব এবং তাদের জন্য অন-ক্যাম্পাস পার্টটাইম জব চালুর ব্যবস্থা করব। অনেকেই টিউশনি করার কারণে নিজের পড়া বা গবেষণায় যথাযথভাবে মনোনিবেশ করতে পারেন না। এগুলোর ফলে তারা উপকৃত হবেন।'

এই ছাত্রনেতা আরও বলেন, গেস্টরুম ও গণরুম সংস্কৃতি চিরতরে নির্মূল করব। হলে সিট পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অপসংস্কৃতির পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় এবং প্রথম বর্ষ থেকেই যাতে শিক্ষার্থীরা সিট পায়, তা নিশ্চিত করব। শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠনে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে প্রস্তুত করতে সংশ্লিষ্ট সেক্টরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনসহ নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে প্রয়োজন মাফিক মেডিকেল সেন্টার স্থাপন করার চেষ্টা করব।

'টিএসসিতে অনেকগুলো সংগঠন আছে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। সেগুলোকে আরও শক্তিশালী করে তুলব। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বাম, ডান, মধ্যপন্থী—সব ধরনের ছাত্র সংগঠন আছে এবং বিভিন্ন মতের সৃজনশীল ভাবনার ছাত্র-ছাত্রীরা রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন পরিবেশ নিশ্চিত করব যাতে সবাই উন্মুক্তভাবে মত প্রকাশ করতে পারেন। কাউকে আমরা আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি করতে দেবো না। সব সময় সবার আগে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ নিশ্চিত করা হবে।'

নারী শিক্ষার্থীদের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধেক শিক্ষার্থী নারী হলেও আমরা এখনো তাদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করতে পারিনি। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করব। একইসঙ্গে তাদের হল সংকট দূর করতে হবে। তারাও যাতে সব সময়, সব ক্ষেত্রে সমান অধিকার পান, তা নিশ্চিত করব।

'এই ডাকসু নির্বাচন হওয়াটা আমাদেরই আন্দোলন ফল। প্রতি বছর যাতে ডাকসু নির্বাচন হয়, সবার আগে তা নিশ্চিত করব।'

নির্বাচনের পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা অনেক বেশি ক্ষমতাবান, তারা সবকিছুতেই প্রভাব বিস্তার করতে চায়। ডাকসু নির্বাচনেও এমন একটা অবস্থা আমরা দেখছি। সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে প্রশাসন যাতে একটি সুন্দর, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করে, সেই আহ্বানই রাখব।

সবশেষে বিন ইয়ামিন বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে সবাইকে পাশে নিয়ে কাজ করব। নির্বাচনে জিতলে যেমন শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করব, না জিতলেও একইভাবে শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়েই কাজ করে যাব। ফলাফল যাই হোক, শিক্ষার্থীরা সর্বদা যেকোনো প্রয়োজন কিংবা ন্যায্যদাবির আন্দোলনে আমাকে তাদের পাশেই পাবেন।

Comments