ডাকসু নির্বাচন

শিক্ষার্থীদের কাঙ্ক্ষিত ক্যাম্পাসের প্রতিফলনই আমাদের প্যানেল: ফরহাদ

এস এম ফরহাদ। ছবি: সংগৃহীত

বৈচিত্র্য বিবেচনায় ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত 'ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট' প্যানেলে শিক্ষার্থীদের কাঙ্ক্ষিত ক্যাম্পাসের প্রতিফলন রয়েছে দাবি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ইতিবাচক ফলাফল প্রত্যাশা করছেন এই প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী এস এম ফরহাদ।

দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ফরহাদ বলেন, 'আমার রাজনৈতিক যাত্রাটা শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও অনুভূতির খুব কাছাকাছি। নানা প্রতিরোধের মুখে থেকেও আমি সবসময় শিক্ষার্থীদের পাশে থেকেছি। শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছি, সংগঠনের চর্চাকে শিক্ষার্থী-বান্ধব করার চেষ্টা করেছি এবং ক্যাম্পাসে একাডেমিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কাজ করেছি। এসব কারণেই আমি আশাবাদী, শিক্ষার্থীরা আমাদের ইতিবাচকভাবে দেখছেন।'

তাদের প্যানেল থেকে বিভিন্ন পদে যোগ্যতা ও দক্ষতা দেখে প্রার্থী করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'যে পদে যিনি যোগ্য, সেরাটা দিতে পারবেন, তাকেই প্রার্থী করা হয়েছে। যেমন, ক্রীড়া সম্পাদক পদপ্রার্থী ব্ল্যাকবেল্টধারী একজন প্রশিক্ষক, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক পদপ্রার্থী দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় সক্রিয় এবং নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠ।'

'আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমাদের প্যানেলে নানা মতের মানুষ একসঙ্গে কাজ করছেন। এখানে ছাত্রশিবিরের সমালোচক আছেন, হিজাবি, নন-হিজাবি, বাঙালি, অ-বাঙালি, অমুসলিম, জুলাই আন্দোলনে চোখ হারানো শিক্ষার্থী—সবার প্রতিনিধিত্ব এখানে রয়েছে,' বলেন এই জিএস প্রার্থী।

ফরহাদের মতে, 'ডেমোগ্রাফি বিবেচনায় বিভিন্ন বৈচিত্রের প্রতিফলন আমাদের প্যানেলে আছে। আমরা বাংলাদেশকে যেমন কল্পনা করি, ক্যাম্পাসকে যেমন কল্পনা করি, সেই কাঙ্ক্ষিত ক্যাম্পাসের প্রতিফলন আমার প্যানেলে শিক্ষার্থীরা পাচ্ছেন বলে আমি বিশ্বাস করি।'

তবে ব্যক্তি ফরহাদের জনপ্রিয়তা ছাত্রশিবিরের হয়ে বিভিন্ন কার্যক্রমে সংশ্লিষ্টতার কারণেই তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'যেসব কারণে শিক্ষার্থীরা আমাকে পছন্দ করবে, তার সবটুকুই সংগঠন ও এর সংশ্লিষ্টতার কারণে। ব্যক্তি হিসেবে আমি যেসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করেছি, সেগুলো কোনো না কোনোভাবে আমার সংগঠন বা সংগঠন সংশ্লিষ্ট সক্ষমতার জায়গাগুলোর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।'

নির্বাচিত হলে কী করবেন জানতে চাইলে প্যানেলের দেওয়া ইশতেহারের উল্লেখ করে ফরহাদ বলেন, 'আমরা ছয়টি বিষয়ে "ইয়েস" বলেছি—নিরাপদ ক্যাম্পাস, আবাসন সংকট সমাধান, নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, চিকিৎসা ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার এবং ক্যারিয়ার গঠনে সহায়তা।'

'আমাদের "না" বলার জায়গাও আছে। কর্তৃত্ববাদী রাজনীতি, নির্যাতন, গেস্টরুম-গণরুম, সহিংসতা, চাঁদাবাজি—আমাদের অবস্থান থাকবে এসবের বিরুদ্ধে। ক্যাম্পাসে ইসলামফোবিয়া কিংবা পোশাক-সংক্রান্ত কোনো চাপ চলবে না। যেমন, কেউ হিজাব পরলে যেন কোনো চাপের মধ্যে না পড়েন, আবার অন্যান্য পোশাকের ক্ষেত্রেও যেন কোনো শঙ্কাবোধের কিছু না থাকে,' যোগ করেন তিনি।

ডাকসু নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ অনেকটাই ঘোলাটে এবং প্রশাসন একটি দলকে সুবিধা দিতে চাইছে বলেও অভিযোগ করেন ফরহাদ। শিক্ষকদের নিরপেক্ষ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এই শিবিরিনেতা।

তার বিরুদ্ধে প্রার্থিতা সংক্রান্ত রিট প্রসঙ্গে ফরহাদ বলেন, 'আমরা আগেই বলেছি, নির্ধারিত তারিখে ডাকসু নির্বাচন হবে। আমার প্রার্থিতা নিয়ে রিট হয়েছে, সে বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন। আমার প্রার্থিতা টিকবে কি না, সেটা রায়ের বিষয়। ডাকসু বানচালের কোনো ইস্যু তৈরি হলে, আমরা প্রতিহত করব।'

'আমাদের প্রতিপক্ষরা প্রায়ই আমাদের ঘিরে ১৯৭১-এর প্রসঙ্গ তোলে। আমরা মনে করি, এটি তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডামাত্র। শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কোনো কার্যকর কর্মসূচি না থাকায় এবং ছাত্রশিবির শিক্ষার্থীদের মাঝে জনপ্রিয়তা অর্জন করায় তারা ভয় পায়। তাই বারবার একই প্রশ্ন ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে তোলে। অথচ এসব প্রশ্নের জবাব আমরা বহুবার দিয়েছি, অফিসিয়ালি এবং বিভিন্ন ফোরামে স্পষ্টভাবে জানিয়েছি,' যোগ করেন এস এম ফরহাদ।

তবে কাউকেই প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন না ফরহাদ। 'সবাই আমরা সহযোগী। প্রতিযোগিতা মানে হচ্ছে, যিনি জিতবেন, তিনি কাজ করবেন। আমরা সবাই মিলে তাকে সাহায্য করব,' বলেন তিনি।

Comments