রাবির প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের বিক্ষোভ

‘নতুন কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত একজনও আছেন। এদের নেতৃত্বে কীভাবে দলের কর্মকাণ্ডে অংশ নেব?’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নতুন কমিটি বাতিলের দাবিতে সংগঠনটির একাংশের নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ তৃতীয় দিনে গড়িয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ৩টায় ছাত্রলীগের প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন এবং প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।

এক ঘণ্টা পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার পরে প্রধান ফটকের তালা খুলে দেওয়া হয়।

সাত বছর বিরতির পর গত শনিবার কেন্দ্রীয় কমিটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করে। সেখানে মোস্তাফিজুর রহমান বাবুকে সভাপতি ও আসাদুল্লাহ আল গালিবকে সাধারণ সম্পাদক পদ দেওয়া হয়।

নতুন ঘোষিত কমিটির মোট ৩৯ সদস্যের মধ্যে অন্তত ১০ জন রোববার থেকে বিক্ষোভে যোগ দেন।

তারা মোটরসাইকেল নিয়ে ক্যাম্পাসে শোডাউন করেন এবং নতুন কমিটি বাতিলের দাবিতে স্লোগান দেন। সেই সঙ্গে তারা নতুন কমিটির নেতাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ ঠেকাতে ফটকগুলো অবরোধ করে রাখেন।

আজ প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘটনাকে সংগঠনের নতুন কমিটির সদস্যদের প্রবেশে বাধা দেওয়ার অঙ্গীকারের নিদর্শন হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

তারা বলেন, দলের ত্যাগী নেতাদের পরিবর্তে নতুন কমিটিতে বিতর্কিত নেতারা জায়গা করে নিয়েছেন।

নতুন নেতাদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তারা বলেন, নতুন নেতাদের কেউ কেউ গত কয়েক বছর ধরে নিষ্ক্রিয় ছিলেন, কেউ বিবাহিত বা ঝরে পড়া শিক্ষার্থী এবং ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের অন্য নেতাদের সমর্থন তাদের নেই।

আন্দোলনরত ছাত্রলীগ নেতা তৌহিদুল ইসলাম দুর্জয় বলেন, 'নতুন কমিটির কথা জানতে পেরে আমরা বিস্মিত হয়েছি।'

দুর্জয়কে নতুন কমিটির সহসভাপতি করা হয়েছে। তিনি সভাপতি ও সম্পাদক পদের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটিতে আবেদনকারী ৯৪ জন ছাত্রলীগ নেতার মধ্যে একজন।

তিনি আরও বলেন, 'নবনিযুক্ত সভাপতি ২০১৯ সাল থেকে ক্যাম্পাসে নিষ্ক্রিয় ছিলেন এবং সাধারণ সম্পাদক বিবাহিত ও ক্যাম্পাসে ঝরে পড়া ছাত্র।'

নতুন কমিটির সহসভাপতি শাহিনুল ইসলাম সরকার ডন বলেন, 'আবেদন করার সময় তারা (নতুন নেতারা) অবশ্যই তাদের তথ্য গোপন করেছেন। তাছাড়া কেন্দ্রীয় নেতারা কেন তাদের নেতা মনোনীত করেছেন?'

তিনি বলেন, 'নতুন কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত একজনও আছেন। এদের নেতৃত্বে কীভাবে দলের কর্মকাণ্ডে অংশ নেব?'

নতুন কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, দু-এক দিনের মধ্যে তারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করবেন।

'আমরা এখন ঢাকায় আছি। আমরা শিগগির ক্যাম্পাসে যাব। এখন যারা প্রতিবাদ করছেন, তারা শিগগির বাস্তবতা বুঝতে পারবেন,' বলেন তিনি।

তিনি জানান, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে পরামর্শ করে কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের নির্বাচন করেছেন।

'তারা কার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে? তারা কি লিটন ভাইকে অনুসরণ করে না?' প্রশ্ন রাখেন বাবু।

তিনি আরও জানান, ক্যাম্পাসে প্রবেশের জন্য তারা নেতাদের অনুমতির অপেক্ষায় আছেন।

নতুন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন বলেন, 'আমরা অবশ্যই আওয়ামী লীগের নেতাদের ও কেন্দ্রীয় নেতাদের মান্য করি। তবে এটাও আশা করি, তারা কমিটি গঠনের সময় নেতাদের ভূমিকা ও ত্যাগের বিষয়টি বিবেচনায় রাখবেন।

'আমি বায়োকেমিস্ট্রিতে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেছি এবং এখন জার্মান ভাষা পড়ছি। আমি কীভাবে এমন একজন নেতাকে মেনে নেব—যার পড়াশোনাও নেই, নেতৃত্বের যোগ্যতাও নেই,' বলেন তিনি।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ এনান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের ভুল-ভ্রান্তি হতে পারে, সে জন্য প্রতিকারের ব্যবস্থা আমাদের আছে। তবে কেউ যেন নতুন কমিটি নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য সজাগ থাকতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আমরা অনুরোধ করেছি। আমরা প্রতিবাদের নামে ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি সহ্য করব না।'

ডন বলেন, 'ক্যাম্পাসে নতুন নেতাদের ঢুকতে না দেওয়ার পক্ষে আমাদের অবস্থান। নতুন নেতারা বহিরাগতদের সাহায্যে কাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করছেন।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, 'আমরা আন্দোলনরত নেতাদের আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত না করার অনুরোধ করেছি, তারা তা শুনেছেন এবং প্রধান ফটক খুলে দিয়েছেন। তারা ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ ঠেকাতে প্রশাসনের কাছে অনুরোধও করেছেন।'

Comments