গাংনি উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি হলেন ৪ হত্যা মামলার আসামি

গাংনি উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি হলেন ৪ হত্যা মামলার আসামি
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় কৃষক লীগের সম্মেলনে নতুন কমিটিতে সভাপতি হয়েছেন আতিয়ার রহমান। ছবি: সংগৃহীত

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় কৃষক লীগের সম্মেলনে নতুন কমিটিতে সভাপতি হয়েছেন চার হত্যা মামলার আসামি আতিয়ার রহমান। সম্প্রতি একটি মামলায় কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন তিনি।

গত শুক্রবার বিকেলে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় কৃষক লীগের সম্মেলনে নতুন কমিটি গঠিত হয়। নতুন কমিটিতে সভাপতি হিসেবে আতিয়ার রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মশিউর রহমান পলাশ নির্বাচিত হয়েছেন।

আতিয়ার রহমানের বাড়ি গাংনি উপজেলার ধলা গ্রামে।

গাংনি থানা সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১০ নভেম্বর উপজেলার কাথুলী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ধলা গ্রামের বাসিন্দা দুই ভাই জাহারুল ইসলাম ও সাহারুল ইসলাম নিহত হন। এর আগে ২০০০ সালে স্থানীয় একটি বিল নিয়ে বিরোধের জেরে হত্যা করা হয় একইগ্রামের বাসিন্দা সাইদুল হোসেনকে।

এই তিনটি হত্যা মামলার প্রধান আসামি আতিয়ার রহমান। এছাড়া ২০১৭ সালে আতিয়ার রহমানের প্রতিপক্ষ এনামুল হোসেনকেও তার সমর্থকরা হত্যা করে বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় প্রধান আসামি হিসেবে মামলা হয়।

গাংনি থানা সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন অভিযোগে এ পর্যন্ত অন্তত ৪ বার কারাগারবন্দি হয়েছেন আতিয়ার। এর মধ্যে দুই ভাই জাহারুল ইসলাম ও সাহারুল ইসলাম হত্যা মামলায় সম্প্রতি জামিনে মুক্ত হয়েই কৃষক লীগের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন তিনি।

জেলা আওয়ামী লীগ ও কৃষক লীগের একাধিক নেতা এই নবগঠিত কমিটির বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানালেও সরাসরি নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষক লীগের একাধিক নেতা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আতিয়ারকে সামনে রেখেই কৃষক লীগের সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কমিটির মেয়াদ ৩ বছর আগে শেষ হয়। সম্মেলনের তাগাদা থাকলেও তা করা হয়নি। কারণ সেসময় আতিয়ার কারাগারে ছিলেন। অবশেষে তার জামিনের সম্ভাবনা দেখা গেলে সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়।

গাংনি উপজেলা কৃষক লীগের পদ প্রত্যাশী ছিলেন এমন একজন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দলের ভাবমূর্তির এখন কোনো মূল্য নেই। রাজনীতি এখন এসব লোকদেরই। আওয়ামী লীগের মতো একটি রাজনৈতিক সংগঠনের অঙ্গ সংগঠনে স্থান পাওয়ায় তার হয়তো অনেক লাভ হয়েছে কিন্তু দলটির জন্য এটি চরম ক্ষতিকর। কিন্তু কে শোনে কার কথা?'

শুক্রবার কৃষক লীগের সম্মেলন উদ্বোধন করেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও মেহেরপুর জেলা কৃষক লীগের সভাপতি মাহাবুব উল আলম, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

এছাড়াও সম্মেলনে বক্তব্য দেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শরীফ আশরাফ আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গাংনী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ খালেক।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে কমিটি ঘোষণা করা হয়।

যোগাযোগ করা হলে মেহেরপুর জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম সাজ্জাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'হত্যা মামলার আসামি হলেই কেউ খুনি হয়ে যায় না। আদালতে প্রমাণ হলেই তবে তাকে খুনি বলা যাবে। যে ঘটনায় আতিয়ারের বিরুদ্ধে মামলা হয় সেটা ছিল সাজানো। এটি একটি গোষ্ঠীগত চক্রান্ত।'

অভিযোগের বিষয়ে জানতে আতিয়ার রহমানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার মোবাইলফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

যোগাযোগ করলে তার চাচাতো ভাই আরিফুর রহমান জানান, আতিয়ার শীঘ্রই তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন।

Comments

The Daily Star  | English
Kudos for consensus in some vital areas

Kudos for consensus in some vital areas

If our political culture is to change, the functioning of our political parties must change dramatically.

4h ago