ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ আরও কমাবে রাশিয়া

গ্যাস পাইপলাইন। প্রতিকী ছবি: এপি
গ্যাস পাইপলাইন। প্রতিকী ছবি: এপি

রাশিয়া জানিয়েছে, আগামী বুধবার থেকে দেশটি ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ আরও কমিয়ে দেবে। আসন্ন শীত মৌসুমে ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানানো ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য এটি নতুন এক আঘাত।

আজ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় সশস্ত্র সংঘাতের প্রায় ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও শিগগির এ যুদ্ধ থামার কোনও লক্ষণ নেই। এই যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর লাখো মানুষ জ্বালানী ও খাদ্য সংকটে পড়েছে।

গ্যাসের প্রবাহ কমবে

রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি সংস্থা গাজপ্রম সোমবার জানায়, নর্ড স্ট্রিম ১ পাইপলাইনের মাধ্যমে জার্মানিতে পাঠানো গ্যাসের পরিমাণ বুধবার থেকে ৩ কোটি ৩০ লাখ ঘনমিটারে নেমে আসবে।

গাজপ্রমের সঙ্গে ৪০ বিলিয়ন ডলারের সমঝোতা চুক্তি সই করেছে ইরানের জাতীয় তেল কোম্পানি (এনআইওসি)।
গাজপ্রমের সঙ্গে ৪০ বিলিয়ন ডলারের সমঝোতা চুক্তি সই করেছে ইরানের জাতীয় তেল কোম্পানি (এনআইওসি)। ছবি: রয়টার্স

এটি বর্তমান প্রবাহের প্রায় অর্ধেক। বর্তমান প্রবাহও সক্ষমতার মাত্র ৪০ শতাংশ। যুদ্ধের আগে ইউরোপের সমগ্র গ্যাস ও তেলের চাহিদার যথাক্রমে ৪০ ও ৩০ শতাংশ রাশিয়া থেকে আসতো।

ক্রেমলিন জানিয়েছে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যার কারণে গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার বিরুদ্ধে জ্বালানি ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেল করার অভিযোগ এনেছে।

ইউরোপের রাজনীতিবিদরা বারবার বলে এসেছেন, শীত মৌসুমে রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে। এ ধরনের উদ্যোগে জার্মানিতে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে এবং বাড়তে থাকা মূল্যস্ফীতির চাপে থাকা ভোক্তারা আরও দুর্দশায় পড়তে পারেন।

মস্কো জানিয়েছে, তারা ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে আগ্রহী নয়।

ইউক্রেনের রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস পাইপলাইন পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, রাশিয়ার গাজপ্রম কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ইউক্রেনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত একটি পাইপলাইনে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গ্যাসের চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। এই পাইপের মাধ্যমে ইউরোপের কয়েকটি দেশে গ্যাস রপ্তানি করে রাশিয়া।

রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত্ব গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান গাজপ্রম। ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনের প্রতিষ্ঠান আরও জানায়, এ ধরনের চাপের তারতম্যের কারণে বিভিন্ন জরুরি পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে আছে পাইপলাইনে ফাটল ধরা। চাপ বাড়াতে বা কমাতে হলে পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো একে অপরকে এ বিষয়টি জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এ বিষয়ে গাজপ্রমের কাছ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

ইইউ জ্বালানি মন্ত্রীদের বৈঠক ও গ্যাস সাশ্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা

আজ মঙ্গলবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো তাদের গ্যাসের চাহিদা কমানোর জন্য কিছু জরুরি সিদ্ধান্তের অনুমোদন দেওয়ার কথা রয়েছে। দেশগুলো প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে রাশিয়া থেকে আসা গ্যাসের ওপর থেকে নির্ভরতা কমানোর।

গত সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউরোপীয় কমিশন প্রস্তাব দেয়, প্রতিটি সদস্য দেশে জরুরি আইনের মাধ্যমে আগস্ট থেকে ২০২৩ এর মার্চের মধ্যে গ্যাসের ব্যবহার ১৫ শতাংশ কমিয়ে আনার। এই লক্ষ্যমাত্রা ঐচ্ছিক হলে কমিশন চাইলে সরবরাহের ক্ষেত্রে জরুরি পরিস্থিতির কারণে একে বাধ্যতামূলক হিসেবে ঘোষণা দিতে পারে।

তবে বেশ কয়েকটি সদস্য রাষ্ট্রের সরকার এই প্রস্তাব মেনে নেয়নি। ফলে একটি সংশোধিত খসড়া প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে, যেটি আজ ইইউর জ্বালানী মন্ত্রীদের এক বৈঠকে অনুমোদনের সম্ভাবনা রয়েছে। সংশোধিত প্রস্তাবে আয়ারল্যান্ড ও মাল্টা সহ কয়েকটি দেশকে এই লক্ষ্যমাত্রার বাইরে রাখা হয়েছে।

সংশোধিত খসড়ায় লক্ষ্যমাত্রা অপেক্ষাকৃত সহজ হওয়াতে সংশ্লিষ্টরা সতর্ক করেন, এতে দেশগুলো শীতের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ গ্যাস না থাকার ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে। জার্মানির মত দেশগুলো জ্বালানির ব্যবহার কমানোর জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নিলেও, সামগ্রিকভাবে ইইউ এর দেশগুলো গ্যাসের ব্যবহার মাত্র ৫ শতাংশ কমাতে পেরেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি যথেষ্ট নয়।

এই খসড়া প্রস্তাব আরও একবার ইইউর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে একাত্মতার বিষয়টির পরীক্ষা নিয়েছে। কিছু দেশের মতে, সবার জন্য একই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা যৌক্তিক নয়।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনও দেশের সঙ্গে গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে যুক্ত না থাকায় মাল্টা ও আইসল্যান্ডের জন্য কোনও লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়নি। স্পেন, রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল নয়। তারা জানিয়েছে, যেহেতু তাদের স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত গ্যাস অন্যান্য দেশে পাঠানোর মতো অবকাঠামো নেই, তাদের ক্ষেত্রে গ্যাসের ব্যবহার কমানোর লক্ষ্যমাত্রা কোনো দিক দিয়েই গ্রহণযোগ্য নয়। অপরদিকে গ্রীস এই লক্ষ্যমাত্রা মেনে না নিয়ে জানিয়েছে, রাশিয়া থেকে গ্যাস না আসলেও দেশটি পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে।

Comments

The Daily Star  | English

Banks see sluggish deposit growth as high inflation weighs on savers

Banks have registered sluggish growth in deposits throughout the current fiscal year as elevated inflation and an economic slowdown have squeezed the scope for many to save, even though the interest rate has risen.

13h ago