আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক থেকে সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ

রয়টার্স ফাইল ফটো

বাজেট সহায়তার অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা পাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ। এ অর্থ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে সহায়তা করবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ২ পক্ষের সঙ্গে বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ সাংবাদিকদের বলেন, 'এ ঋণ পেলে আমাদের ডলার সংকট কেটে যাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।'

বিশ্বব্যাপী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবের চলাকালীন আর্থিক ঝুঁকি ও জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য ঢাকা ঋণদাতাদের কাছে এ সহায়তার অনুরোধ করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, 'বাজেট সহায়তা হিসেবে আইএমএফের কাছ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ও বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়া নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।'

'কোটা অনুযায়ী আইএমএফের কাছ থেকে আমরা ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিতে পারি। তবে, আমরা সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার নেওয়ার পরিকল্পনা করেছি এবং আইএমএফ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছি', যোগ করেন তিনি।

আব্দুর রউফ আরও বলেন, আইএমএফের রেজিলিয়েন্স ও সাসটেইনেবিলিটি ট্রাস্ট (আরএসটি) তহবিল থেকে এ ঋণ চাওয়া হয়েছে। চলমান সংকটের কারণে বিভিন্ন দেশ যাতে আর্থিক অভিঘাত প্রতিহত করতে পারে এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারে, সেজন্যই সম্প্রতি আইএমএফ এ তহবিল সৃষ্টি করেছে।

আইএমএফের গাইডলাইন অনুযায়ী, এর কোনো একটি খাত থেকে ঋণ নিতে চাইলে অন্যান্য খাতগুলো থেকেও তহবিল নিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ আইএমএফের এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ) ও এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইএফএফ) খাত থেকে ঋণ চেয়েছে।'

গভর্নর আরও বলেন, বাজেট সহায়তা হিসেবে ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়ার জন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তাদের ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট (ডিপিসি) তহবিল থেকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার ও গ্রিন রেজিলিয়েন্ট ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট (জিআরআইডি) তহবিল থেকে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ চাওয়া হয়েছে।

'বাজেট সহায়তা তহবিলের সুবিধা হলো এটি পাওয়া তুলনামূলক সহজ। সে কারণেই আমরা এ তহবিলকে অগ্রাধিকার দিয়েছি', যোগ করেন তিনি।

দেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্টস (বিওপি) বিষয়ে গভর্নর বলেন, 'গত ৩ মাসে চলতি অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্সের ওপর চাপ কমেছে। কারণ এ সময়ে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় মোট আমদানি বিলের সমান।'

ইনভেস্টোপেডিয়ার তথ্যমতে, চলতি অ্যাকাউন্টের ভারসাম্য একটি দেশের আর্থিক প্রবাহ ও বহিঃপ্রবাহের রেকর্ডের অংশ। এটি বিওপির অংশ এবং এক দেশ ও অন্য দেশের মধ্যে করা সব লেনদেনের বিবৃতি।

আব্দুর রউফ বলেন, 'বকেয়া এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) পরিশোধ করা হলে চলতি অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্সের ওপর চাপ আরও কমবে।'

'আমি মনে করি, যদি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে আর কোনো নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, তাহলে নভেম্বর-ডিসেম্বরের পরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ থাকবে না', বলেন তিনি।

গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বিপুল চাপের মুখে পড়েছে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য, বিশেষ করে খাদ্য, জ্বালানি ও সারের দামবৃদ্ধির কারণে আমদানি বিল বেড়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১২ অক্টোবর পর্যন্ত রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৬ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার, যা চলতি বছরের ৩০ জুন ছিল ৪১ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের ১২ অক্টোবর এর পরিমাণ ছিল ৪৬ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার।

শুক্রবার ওয়াশিংটন ডিসিতে এক সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের উপ-পরিচালক অ্যানে ম্যারি গোল্ড ওলফ বলেন, 'ঋণের বিষয়ে কথা বলতে আগামী সপ্তাহে আমরা বাংলাদেশে প্রতিনিধিদল পাঠাব।'

তিনি বলেন, 'টাকার মান প্রায় ২০ শতাংশ কমে গেছে। একইসঙ্গে রিজার্ভও কমে গেছে। যদিও এখন পর্যন্ত রিজার্ভ স্থিতিশীল অবস্থায় আছে, তবে, প্রতিনিয়তই তা কমছে।'

'আমরা আনন্দিত যে বাংলাদেশ তাদের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে এবং অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে আইএমএফের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে', যোগ করেন অ্যানে ম্যারি গোল্ড ওলফ।

আইএমএফের প্রতিনিধিদল আগামী ২৬ অক্টোবর ঢাকায় পৌঁছাবে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Abdul Hamid returns home after treatment in Thailand

Two police officials were withdrawn and two others suspended for negligence in duty regarding the former president's departure from the country

53m ago