আইএমএফের দেওয়া বেশিরভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে মার্চে

মার্চে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থার (আইএমএফ) নির্ধারণ করে দেওয়া ৬ লক্ষ্যমাত্রার ৫টিই অর্জন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
ছবি: সংগৃহীত

মার্চে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থার (আইএমএফ) নির্ধারণ করে দেওয়া ৬ লক্ষ্যমাত্রার ৫টিই অর্জন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

আইএমএফের মুখপাত্র দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আইএমএফ ঋণের আওতায় সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং নীতি বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা করতে আইএমএফের একটি স্টাফ টিম ২৫ এপ্রিল থেকে ২ মে  পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করবে।

বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান মার্চের শেষে ২২ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ (এনআইআর) বজায় রাখার লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে কি না, সে বিষয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা আছে। 

তারা আরও জানান, আইএমএফ মার্চের এনআইআর হিসাব করবে, সুতরাং লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে কি না, তা এখনি বলা সম্ভব নয়।

নাম না প্রকাশের শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বলেন, 'শুধু এ বিষয়টি নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। বাকি শর্তগুলো সহজেই অর্জিত হবে।'

তবে ঋণের পরবর্তী ৪৭৬ দশমিক ২৭ মিলিয়ন ডলারের কিস্তি পেতে মার্চের ৬ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন আবশ্যক নয়। মূলত জুনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বাংলাদেশের অর্জনের ওপর সেটি নির্ভরশীল।

২০২৩ সালের দ্বিতীয়ার্ধে এ কর্মসূচির প্রথম নিরীক্ষণ প্রক্রিয়া পরিচালিত হবে। সে সময় আইএমএফের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত স্টাফ টিম কর্মসূচির সংখ্যাভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা ও প্রস্তাবিত সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের বিষয়গুলো যাচাই করবে বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন আইএমএফের মিশন প্রধান রাহুল আনন্দ। 

তিনি আরও বলেন, '(ঋণ) কর্মসূচির শর্ত পূরণে বিদ্যুৎ ও প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বাড়িয়ে লক্ষ্যমাত্রা বহির্ভূত ভর্তুকি হ্রাস এবং ধীরে ধীরে একটি সমন্বিত বাজার-নির্ধারিত মুদ্রা বিনিময় হারের দিকে অগ্রসর হওয়ার মতো উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও, মুদ্রা বিনিময় হারের নমনীয়তা বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা কাঠামো শক্তিশালী করলে তা বাহ্যিক শক্তির বিরুদ্ধে (অর্থনীতির) সহনশীলতা বৃদ্ধি করবে।'

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা মার্চে নেট রিজার্ভের ন্যুনতম সীমার কাছাকাছি থাকব'।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ পর্যন্ত মোট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ (জিআইআর) দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলারে।

কিন্তু সারা বিশ্বে প্রচলিত ও বহুলব্যবহৃত আইএমএফের ব্যালেন্স অব পেমেন্টস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম৬) অনুযায়ী, জিআইআর গণনায় রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক গঠিত বিভিন্ন তহবিলের পাশাপাশি বিমানের জন্য প্রদত্ত ঋণ গ্যারান্টি, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে মুদ্রা বিনিময়, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষকে দেওয়া ঋণ, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকে আমানত এবং নির্দিষ্ট গ্রেডের নিচে থাকা সিকিউরিটিতে বিনিয়োগ অন্তর্ভুক্ত নয়। 

বর্তমানে এসব খাতে রিজার্ভের পরিমাণ প্রায় ৬ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার।

মেজবাউল হোক জানান, অর্থাৎ মার্চ শেষে বাংলাদেশের জিআইআরের পরিমাণ প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার হবে (আইএমএফ মানদণ্ড মতে)।

মার্চ মাসের আরেকটি লক্ষ্য হচ্ছে প্রাথমিক ব্যালেন্স ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৪০ কোটি টাকার মধ্যে রাখা।

গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সামগ্রিক ব্যালেন্স ছিল ১০ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা।

বাংলাদেশের জন্য আইএমএফের দেওয়া কার্যতালিকা অনুযায়ী, মার্চের মধ্যে সরকারকে কমপক্ষে ২ লাখ ৭ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা কর আদায় করতে হবে।

ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রাজস্ব আদায় করেছে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধে এনবিআর বহির্ভূত কর আদায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা।

মার্চ পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি, তবে এনবিআর এবং এনবিআর বহির্ভূত প্রাপ্তির ধারা থেকে এটি অনুমান করা নিরাপদ যে মার্চের লক্ষ্যমাত্রা স্বাচ্ছন্দ্যে পূরণ হবে।

অপর শর্ত মতে, মার্চের শেষে দেশের রিজার্ভ মানির (বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নয়) পরিমাণ ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার ৩৪৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

সরকারের উন্নয়ন মূলধন বিনিয়োগ খাতে ন্যুনতম ব্যয়ের সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে আইএমএফ, যা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় নিরীক্ষা করা হবে।

মার্চের মধ্যে এই খাতে অন্তত ৩৮ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে সরকারকে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এডিপিতে ব্যয় হয়েছে ৮২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা।

কিছু অগ্রাধিকার সামাজিক খাতে ন্যুনতম ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ওয়াশিংটন ভিত্তিক বহুপাক্ষিক অর্থায়ন সংস্থাটি।

এ ক্ষেত্রে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনী খাতের ব্যয় নিরীক্ষা করা হবে।

এই খাতগুলোতে চলমান অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ন্যুনতম খরচের লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে ৬০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়নি।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments