ক্রমবর্ধমান ঋণ পরিশোধ রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে
সাম্প্রতিক সময়ে বৈদেশিক ঋণ ও সুদ পরিশোধ বৃদ্ধি পাওয়ায় তা এখন রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
আমদানি খরচ বেশি এবং প্রত্যাশার চেয়ে কম রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের কারণে ২০২২ সালের জুলাই থেকে রিজার্ভ ক্রমাগত কমছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব অনুসারে সে সময় রিজার্ভ ছিল ৩১ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার। তা কমতে কমতে গত ১৩ সেপ্টেম্বর দাঁড়ায় ২১ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুসারে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ৪১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই মাসে তা ছিল ১৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
এর মধ্যে শুধু সুদ পরিশোধের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৬৪ মিলিয়ন ডলার থেকে ১০৬ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ৩২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল দুই দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারে। এর মধ্যে সুদ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ৯২৮ মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ এখনো আইএমএফের ঋণ স্থিতিশীলতা সীমার নিচে থাকলেও এর পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে জানা যায়, চলতি বছরের মার্চে বকেয়া বৈদেশিক ঋণ ৯৫ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে পাবলিক সেক্টরে বিদেশি ঋণ ৭৩ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে শুধু সরকারের ঋণ আছে ৬১ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার।
আইএমএফের ঋণ স্থিতিশীলতার নিয়ম অনুসারে, বৈদেশিক ঋণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪০ শতাংশের কম হওয়া উচিত। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা এখনো ২০ শতাংশের নিচে।
গত জানুয়ারিতে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের ঋণ স্থিতিশীলতা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাংলাদেশ বৈদেশিক ঋণ ঝুঁকির নিচে আছে।
ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে ইআরডির নথিতে বলা হয়েছে—বৈদেশিক সহায়তায় বাস্তবায়ন করা বড় বড় প্রকল্পগুলোর জন্য অর্থ ছাড় বৃদ্ধি পেয়েছে। মেট্রোরেল, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো বৃহৎ প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন শেষ পর্যায়ে থাকায় সম্প্রতি এগুলো জন্য অর্থ ছাড় বেড়েছে।
এ ছাড়া, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব থেকে অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করার জন্য উন্নয়ন অংশীদাররা গত তিন বছরে সরকারকে উল্লেখযোগ্য বাজেট সহায়তা দিয়েছে।
ঋণের অর্থ পরিশোধ মূলত ঋণের ম্যাচুউরিটির পর শুরু হয়। এর মেয়াদ ২০ বছর থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে, ঋণ নেওয়ার পর থেকেই সুদ দিতে হয়।
তাই বাংলাদেশের জন্য সুদ পরিশোধের খরচ বাড়ছে বলে ইআরডির তথ্যে বলা হয়েছে।
সুদের খরচ বেড়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ হলো লন্ডন ইন্টারব্যাংক অফার রেট (লিবর) ও এসওএফআর-ভুক্ত ঋণের সুদের হার বেড়েছে। এ কারণে বিদেশি খাত থেকে পাওয়া ঋণের খরচ বেড়েছে।
এ দিকে, পাইপলাইনে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বাড়লেও এর ব্যবহার বাড়ছে না। যার ফলে রিজার্ভ বাড়ানো যাচ্ছে না।
জুলাইয়ে বৈদেশিক ঋণ বিতরণ ১৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪০ কোটি ৫০ লাখ ডলারে।
জুলাইয়ে ঋণদাতাদের দেওয়া সম্মিলিত ৪০৫ দশমিক ৭৯ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে জাপান ২৫১ দশমিক ৮৯ মিলিয়ন ডলার, বিশ্বব্যাংক ৫৭ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন ডলার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ৭০ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে।
এমনকি, গত অর্থবছরেও দেখা গেছে বৈদেশিক সাহায্যের কমেছে।
২০২৩ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ ছাড় হয়েছে নয় দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার ও ২০২২ অর্থবছরে ছিল ১০ বিলিয়ন ডলার।
বৈদেশিক সাহায্যের ব্যবহার বাড়াতে একাধিক উদ্যোগ নেওয়ার পরও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বৈদেশিক সাহায্যের ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না।
ইআরডির এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৈদেশিক ঋণের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করা হচ্ছে।'
'কিন্তু, পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি,' বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জুলাইয়ে অব্যবহৃত বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার।
Comments