বিএনপির অবরোধ

কার্গো পরিবহনে ধীর গতি, বাড়ছে খরচ

বেশ কয়েকজন ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট অভিযোগ করে বলেছেন যে রাস্তায় নাশকতা বা আগুনের ঝুঁকির কথা বলে পরিবহন এজেন্সিগুলো গাড়িপ্রতি পাঁচ হাজার থেকে আট হাজার টাকা বেশি আদায় করছে।
কার্গো পরিবহন
বিএনপির দেশব্যাপী অবরোধের কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে পণ্য পরিবহন। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার ফাইল ফটো

দেশব্যাপী বিএনপির ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ঘোষণার আগেই চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি পরিবহন খরচ বাড়তে শুরু করেছে।

গতকাল রোববার চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি পৃথকভাবে চট্টগ্রাম জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিলে বন্দর ও বেসরকারি অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ডিপো (আইসিডি) কেন্দ্রিক পণ্য পরিবহন ব্যাহত হয়।

গতকাল ছিল বিএনপির দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের প্রথম দিনও।

এ দিন, রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের কারণে ক্ষতির ঝুঁকি এড়াতে বেশিরভাগ আমদানিকারক হরতাল-অবরোধের সময় বন্দর থেকে তাদের পণ্য সরবরাহ থেকে বিরত থেকেছেন।

গতকাল সকাল পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশের নানা প্রান্ত থেকে রপ্তানি পণ্য পরিবহন, বিশেষ করে আইসিডিগামী পণ্য পরিবহনে কিছুটা ধীর গতি দেখা গেছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) তথ্য অনুসারে, সে সময় চট্টগ্রামের ১৯টি আইসিডিতে ঢাকা ও অন্যান্য স্থান থেকে আসা রপ্তানি পণ্যবাহী এক হাজার ৭৩৪টি ট্রাক বা কাভার্ডভ্যান প্রবেশ করেছে।

গত সপ্তাহে তিন দিনের অবরোধের প্রথম দুই দিনে এই সংখ্যা ছিল দুই হাজার ৭১৮ ও দুই হাজার ১৪০টি।

বেশ কয়েকজন ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট অভিযোগ করে বলেছেন যে রাস্তায় নাশকতা বা আগুনের ঝুঁকির কথা বলে পরিবহন এজেন্সিগুলো গাড়িপ্রতি পাঁচ হাজার থেকে আট হাজার টাকা বেশি আদায় করছে।

এ ক্ষেত্রে ঢাকার তৈরিপোশাক কারখানা ফার ইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডাইং ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের অভিজ্ঞতা বেশ খারাপ।

গাজীপুরে প্রতিষ্ঠানটির কারখানার জন্য ভারত থেকে আনা প্রায় ১০০ টন কাপড় ও অন্যান্য গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ কয়েক দিন আগেই বন্দরে পৌঁছেছে।

অবরোধের আগে তথা গত শনিবারের মধ্যে আমদানি করা সব পণ্য ডেলিভারি নিতে চাইলেও প্রতিষ্ঠানটির চট্টগ্রামে নিয়োজিত সিএন্ডএফ এজেন্ট ওই দিন সকাল পর্যন্ত পর্যাপ্ত সংখ্যক কাভার্ডভ্যান ভাড়া করতে পারেনি।

সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠান এবিএস করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী কামরুজ্জামান সাগর দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তাদের অন্তত ১০টি কাভার্ডভ্যানের প্রয়োজন ছিল। বেশ কয়েকটি পরিবহন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কেউ গাড়ি দেয়নি।

পরে বিকেলে তারা পাঁচটি কাভার্ডভ্যান ভাড়া করে আমদানি পণ্যের অর্ধেক গাজীপুরে পাঠানোর জন্য লোড করেন।

কারখানার সহকারী মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) মো. আসাদ উজ জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পরিবহন মালিক প্রতি গাড়ির জন্য প্রায় ৩০ হাজার টাকা ভাড়া নেন। অথচ স্বাভাবিক সময়ে এই ভাড়া ছিল ১৫ হাজার টাকা।'

তিনি আরও বলেন, 'অবরোধের মধ্যে বন্দর থেকে অবশিষ্ট পণ্য ডেলিভারি না নিতে সিএন্ডএফ এজেন্টকে বলা হয়েছে।'

'যেহেতু গার্মেন্টসের অর্ডারের ক্ষেত্রে কঠোরভাবে সময় মেনে চলতে হয়, তাই যথাসময়ে উৎপাদন ও পণ্য সরবরাহ শেষ করতে হলে সময় মতো কাঁচামাল প্রয়োজন। অথচ এটি এখন অনিশ্চিত হয়ে আছে।'

সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান থ্রি-স্মার্ট অ্যান্ড কোম্পানির ম্যানেজিং পার্টনার সুমন মিয়া ডেইলি স্টারকে জানান, গত শনিবার আশুলিয়ার ইনফিনিটি আউটফিট পোশাক কারখানার আমদানি করা ১০ টন কাপড় বন্দর থেকে ডেলিভারি নিয়ে কারখানায় পাঠানো হয়।

তিনি বলেন, 'বন্দরে এই প্রতিষ্ঠানটির এখনো আরও আট টন আমদানি পণ্য আছে। অবরোধের কারণে পণ্য ডেলিভারি নিতে আমদানিকারক আমাদের অপেক্ষা করতে বলেছেন।'

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) সচিব ওমর ফারুক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বন্দরের জেটিতে নোঙ্গর করা জাহাজে পণ্য উঠা-নামা স্বাভাবিক আছে।'

রোববার সকাল থেকে পণ্য ডেলিভারি নিতে বন্দরে যানবাহন প্রবেশ করছে বলে দাবি করেন তিনি।

অবশ্য তিনি জানান, সাধারণত রোববারগুলোয় পণ্য ডেলিভারি কম থাকে। সোমবার থেকে তা বাড়তে শুরু করে।

Comments