বাংলাদেশের রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা কমাল আইএমএফ

রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা
ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের জন্য ন্যূনতম রিজার্ভের নতুন লক্ষ্য ধরে দিয়েছে।

গত জানুয়ারিতে ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থাটি যখন বাংলাদেশের জন্য চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করে, তখন চলতি ডিসেম্বরের জন্য ন্যূনতম ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ নির্ধারণ করা হয়েছিল।

আইএমএফের নথি অনুসারে, গতকাল শুক্রবার এই লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার করা হয়েছে।

এ ছাড়াও, আগামী মার্চে বাংলাদেশকে ন্যূনতম ১৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার ও জুনে ২০ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে।

আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সামগ্রিক পেমেন্ট ব্যালেন্স (বিওপি) কমেছে।

সংস্থটির নির্বাহী বোর্ড বাংলাদেশের ঋণ কর্মসূচির প্রথম পর্যালোচনা, চতুর্থ অনুচ্ছেদের পরামর্শ ও দ্বিতীয় কিস্তিতে ৬৮৯ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার দুই দিন পর প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।

ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার জন্য সরকারকে যে ছয় লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল এর মধ্যে দুটি পূরণ করতে না পারায় এই সংশোধনটি এসেছে। এগুলো রিজার্ভ ও রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে সম্পর্কিত।

যেমন, গত জুনের জন্য ন্যূনতম রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার। পরে তা সংশোধন করে ২৩ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার করা হয়। সেই সময় রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার।

গত অক্টোবরে রিজার্ভ ছিল ১৫ দশমিক নয় বিলিয়ন ডলার।

আগামী জুনে কর আদায় ২০ দশমিক ৪১ শতাংশ বাড়িয়ে তিন লাখ ৯৪ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা করার কথা বলা হয়েছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরে কর আদায়ের বিষয়ে আইএমএফের তিন লাখ ৪৫ হাজার ৬৩০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছিল তিন লাখ ২৭ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা।

চলতি ডিসেম্বরে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ৪৩ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। আগামী মার্চে কর আদায় ধরা হয়েছে দুই লাখ ৭৬ হাজার ১৭০ কোটি টাকা।

দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ রিজার্ভের বিষয়ে ছাড় দিতে আইএমএফকে অনুরোধ করেছিল।

আইএমএফের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত অক্টোবরে সরকারের সঙ্গে আলোচনার সময় আইএমএফ মিশন প্রস্তাবিত সংশোধনমূলক উদ্যোগের ওপর ভিত্তি করে এই ছাড়কে সমর্থন করে। এর মধ্যে আর্থিক ক্ষেত্রে আরও কঠোরতা মেনে চলা, সুষ্ঠু আর্থিক নীতি ও বিনিময় হার প্রবর্তনের বিষয়গুলোও ছিল।

বিশ্বজুড়ে আর্থিক সংকট ও বাংলাদেশে প্রত্যাশার চেয়েও এর বিরূপ প্রভাবের কারণে আইএমএফের সেই দুই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হয়নি।

তবে আইএমএফ বোর্ড থেকে বাংলাদেশের ছাড় চাওয়ার প্রয়োজন হয়নি।

বাজেট ঘাটতি কমানো, বিদেশে বকেয়া পরিশোধ, রিজার্ভ, সামাজিক খরচ ও সরকারের বিনিয়োগ সম্পর্কিত লক্ষ্যমাত্রাগুলো পূরণ করা হয়েছে।

ওয়াশিংটনে আইএমএফের সদরদপ্তরে ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে আইএমএফের বাংলাদেশ মিশন প্রধান রাহুল আনন্দ বলেন, অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ দূর করতে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি কঠোর করেছে, বিদেশি মুদ্রার বিনিময় হারে নমনীয়তার অনুমতি দিয়েছে এবং একাধিক বিনিময় হারকে একীভূত করেছে। সরকার ঋণ কর্মসূচির লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে আর্থিকক্ষেত্রে প্রাথমিক ভারসাম্য বজায় রেখেছিল।

রাহুল আনন্দ আরও বলেন, 'সরকারের এই প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ। সংকটময় সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিবেশ সত্ত্বেও সামগ্রিক কর্মসূচির বাস্তবায়ন ব্যাপকভাবে প্রশংসার দাবিদার। আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে ঋণ কর্মসূচির বেশিরভাগ লক্ষ্য ও সংস্কার প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়েছে।'

তিনি বাংলাদেশের বর্তমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক সংকট ও বিল পরিশোধের ভারসাম্য মোকাবিলায় স্বল্প মেয়াদে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বাহ্যিক স্থিতিশীলতার দিকে মনোযোগ দেওয়ার আহ্বানও জানান।

গত ২১ নভেম্বর আইএমএফকে লেখা চিঠিতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, 'বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যের মধ্যে আর্থিক হিসাবে অপ্রত্যাশিত ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় বিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যায়নি।'

এ ছাড়াও, বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া ও টাকার ক্রমাগত অবমূল্যায়ন দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি কম আয়ের মানুষদের বাড়তি চাপে ফেলেছে।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ও রিজার্ভ বাড়াতে নীতিগত উদ্যোগের ওপর ভিত্তি করে ঋণ কর্মসূচিটি চলমান রাখা হবে।

৪২ মাসের এই ঋণ কর্মসূচির পরবর্তী পর্যালোচনা আগামী মে মাসে অনুষ্ঠিত হবে। তখন বাংলাদেশ আইএমএফের কাছ থেকে ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Comments

The Daily Star  | English

'Frustrated, Yunus hints at quitting'

Frustrated over recent developments, Chief Adviser Prof Muhammad Yunus is considering stepping down, said sources familiar with what went down at the Chief Adviser’s Office and Jamuna yesterday.

2h ago