অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে নতুন বাজেটে ১০ বিষয়ে অগ্রাধিকার

অর্থনৈতিক প্রতিকূলতা অব্যাহত থাকায় আগামী অর্থবছরে কঠোর ব্যয়নীতির দিকে নজর দিয়ে সাত লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকার বাজেট করার পরিকল্পনা করেছে সরকার।

সরকার আগামী বাজেটে ১০ বিষয়ে অগ্রাধিকার দেবে, যার শীর্ষে আছে মূল্যস্ফীতির ঠেকানো।

একইসঙ্গে শহরাঞ্চলের মতো সুযোগ-সুবিধা যাতে প্রতিটি গ্রামে দেওয়া যায়, সেই চেষ্টাও করা হবে।

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে গতকাল ফিসক্যাল কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে নতুন বাজেটের খসড়া প্রকাশ নিয়ে আলোচনা হয়।

গত ৭ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের পর নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই ছিল কাউন্সিলের প্রথম বৈঠক।

খসড়া বাজেট চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে মাত্র চার দশমিক ছয় শতাংশ বড়। প্রান্তিক বৃদ্ধি সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন পদক্ষেপের কারণে হবে।

সাধারণত প্রতি বছর বাজেট ১২ থেকে ১৩ শতাংশ হারে বাড়ে। চলতি অর্থবছরের বাজেট সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা এর আগের বছরের চেয়ে ১২ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, 'একটি প্রাথমিক রূপরেখা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সংসদে উত্থাপনের আগে চূড়ান্তকরণের সময় এই সংখ্যায় কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে।'

উন্নয়ন বাজেট চলতি বছরের মতো প্রায় একই রকম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

সরকারের কড়াকড়ির অংশ হিসেবে আগামী অর্থবছরের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ মাত্র শূন্য দশমিক ৭৬ শতাংশ বা দুই হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আগামী অর্থবছরের প্রথমার্ধে অর্থনীতির ওপর চাপ কমবে না। ফলে সরকারকে কঠোর রাজস্ব ও মুদ্রানীতি অব্যাহত রাখতে হবে।

বাজেটের অন্যতম অগ্রাধিকার হবে বৈশ্বিক ও দেশীয় সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সামান্য সংকোচনমূলক নীতি আরোপ করা।

আরেকটি মূল অগ্রাধিকার হলো বাজেট ঘাটতিকে নিয়ন্ত্রণযোগ্য পর্যায়ে রাখা, যাতে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য নিশ্চিত হয় ও মূল্যস্ফীতি কমে।

সরকারের 'আমার গ্রাম-আমার শহর' রূপকল্প বাস্তবায়নে বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকবে।

ফাস্ট-ট্র্যাক প্রকল্পগুলো সময়মতো শেষ করা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করা, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি সম্প্রসারণ, ডিজিটাল শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণ বাজেটের অন্যতম অগ্রাধিকার।

সূত্র জানায়, ফিসক্যাল কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ছয় দশমিক পাঁচ শতাংশে রাখার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।

চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি মূল লক্ষ্যমাত্রার ছয় শতাংশ ছাড়াতে পারে এবং বিশ্বব্যাংক বলেছে, এই জুনে মূল্যস্ফীতি নয় দশমিক ছয় শতাংশে থাকবে। সরকার লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে সাড়ে সাত শতাংশ করেছে।

কাউন্সিলের ধারণা, কঠোর মুদ্রা ও রাজস্ব নীতি বাস্তবায়ন এবং সরবরাহ শৃঙ্খল উন্নত করার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে।

বিদেশে সুদের হার না কমানো হলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না বলেও ধারণা করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, সুদহার না কমলে বেসরকারি খাতকে বৈদেশিক উৎস থেকে নতুন করে ঋণ নিতে উৎসাহিত করা হবে না।

কাউন্সিল বাজেট ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির চার দশমিক সাত শতাংশ নির্ধারণ করেছে। এবারের বাজেট ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা পাঁচ দশমিক দুই শতাংশ।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের জন্য চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ঋণ কর্মসূচির শর্ত নির্ধারণ করার সময় উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বৈদেশিক মুদ্রার চাপ কমাতে বাজেট ঘাটতির সীমা জিডিপির পাঁচ শতাংশের নিচে নির্ধারণ করেছিল।

চলতি অর্থবছরে সরকারের সামগ্রিক রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় পাঁচ লাখ কোটি টাকা, যা আগামী বছর হবে পাঁচ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের চেয়ে রাজস্ব প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা হবে চার দশমিক পাঁচ শতাংশ বেশি।

আগামী বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছয় দশমিক ৭৫ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ থেকে কমিয়ে ছয় দশমিক পাঁচ শতাংশ করা হতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

Can Bangladesh retain its foothold in US market?

As Bangladesh races against a July 9 deadline to secure a lower tariff regime with the United States, the stakes could not be higher.

12h ago